গত বছরের ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটিতে ভোট হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় আট দিন আগে তা স্থগিত করা হয়।
এরপর প্রায় দশ মাস পেরিয়ে গেছে। বুধবার বন্দরনগরীতে সেই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে, যাতে ভোটার আছেন মোট ১৯ লাখ ৩০ হাজার ৭০৬ জন।
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকবেন আরও প্রায় পাঁচ হাজার কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৪ হাজারের বেশি সদস্য। সব মিলিয়ে ভোটের মধ্যে থাকবেন সাড়ে ১৯ লাখের বেশি মানুষ।
মোট ৭৩৫টি কেন্দ্রে ইভিএমে এই ভোটের আয়োজন হয়েছে। সে হিসেবে প্রতি কেন্দ্রে ভোটার ও বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা কর্মীদের মিলিয়ে গড়ে প্রায় ২৬০০ মানুষের উপস্থিতি ঘটবে আট ঘণ্টায়।
এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানা না হলে তা কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্টরা।
তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, সব স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ভোটের আয়োজন হচ্ছে, সুরক্ষার সব ব্যবস্থাই কেন্দ্রে রাখা হবে।
ভোটের প্রচারের মধ্যে গত ১৬ দিনে মিছিল, সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন উপায়ে নগরীতে জনসমাগম হয়েছে। যেসব ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই ছিল না।
গা ঘেষাঘেষি করে হয়েছে মিছিল। আর মাস্ক ছাড়া ভোটের প্রচার ছিল নিত্য দিনের ঘটনা।
নগরীর বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী আচরণ বিধি ও স্বাস্থ্যবিধি মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নেতাকর্মী এবং ভোটররাও প্রচার নিয়ে ব্যস্ত। কখনো আমরা অভিযানে গেলে মাস্ক পরত, আবার চলে গেলেই আর মাস্কের দেখা নেই। এ ছিল বাস্তবতা।”
২০ জানুয়ারি নগরীর উত্তর পাহাড়তলি এবং উত্তর কাট্টলী এলাকায় দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে গণসংযোগ করেন মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন।
সেই প্রচার মিছিলে কয়েকশ লোককে গাদাগাদি করে হাত ধরাধরি করে হাঁটতে দেখা যায়। মিছিলের সামনের সারিতে থাকা আটজনের মধ্যে তিনজনের মুখে মাস্ক ছিল না। দুজনের মাস্ক ছিল থুতনিতে।
সোমবার প্রচারের শেষ দিনে বহদ্দারহাট এলাকায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীর প্রচার মিছিলের প্রথম সারিতে ছিলেন ১২ জন। তাদের মধ্যে কেবল প্রার্থীসহ দুজনের মুখে মাস্ক ঠিকভাবে ছিল। বাকিদের মধ্যে একজনের মাস্ক ছিল না, অন্যদের মাস্ক থুতনিতে নামানো ছিল।
চট্টগ্রামের জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ডা. মাহফুজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এখনই নির্বাচনের আয়োজন করা উচিত হয়নি বলেই তার বিশ্বাস।
“তারপরও ভোটের তারিখ যেহেতু দেওয়াই হয়েছে, তাহলে কেন্দ্র সংখ্যা অনেক বাড়ানো উচিত ছিল। তাতে প্রতি ভোটকেন্দ্রে জনসমাগম কমত। এদিকে আমাদের জনসাধারণের মনোভাবেও তো তেমন পরিবর্তন আসেনি। কেউ আক্রান্ত হতে চাইলে তাকে বাধা দেওয়া কীভাবে সম্ভব? অনেকের মনোভাব যেন এরকম- ‘আগে নির্বাচন করি, তারপর আক্রান্ত হলে দেখা যাবে’!”
মাহফুজুর রহমান বলেন, “পুরো প্রক্রিয়াটি ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। সরকার বা প্রশাসন ইচ্ছা করলেও কার্যকরভাবে সব নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। এটার দায়িত্ব স্থানীয় মহল্লাগুলোকে দেওয়া উচিত ছিল।”
“টিকা এসেছে। সেই টিকা সবার মাঝে পৌঁছাতে আরও সময় লাগবে। এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে। আগামীকালই ভোট। মাস্ক পরাটা অবশ্যই নিশ্চিত করা উচিত। তা না হলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে না।”
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা কামরুল আলম বলেন, “ঝুঁকি কমাতে সব ব্যবস্থাই আমরা নিচ্ছি। ভোট গ্রহণের সময় কর্মকর্তারা সবাই মাস্ক পরবেন। সব কেন্দ্রে স্যানিটাইজারসহ সব সুরক্ষা উপকরণ থাকবে। কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ইভিএমে ভোট নিতে হবে তা ট্রেনিংয়ে বলে দেওয়া হয়েছে সবাইকে।”
চট্টগ্রামের জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় মঙ্গলবার যে তথ্য দিয়েছে, তাতে আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৬১৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৬৮ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪ দশমিক ২০ শতাংশ।
এখন পর্যন্ত জেলায় ৩২ হাজর ৭৩৮ জনের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৫ হাজার ৫৪৬ জনই নগরীর বাসিন্দা।
চট্টগ্রাম জেলায় করোনাভাইরাসে ৩৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, এর মধ্যে ২৬৮ জন নগরীর বাসিন্দা ছিলেন।