সিসিসি ভোট শান্তিপূর্ণ হবে, কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিন: রিটার্নিং কর্মকর্তা

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে আশ্বস্ত করে কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Jan 2021, 09:14 AM
Updated : 26 Jan 2021, 09:14 AM

মঙ্গলবার দুপুরে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়ামে ভোটের সরঞ্জাম বিতরণের সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ আশ্বাস দেন।

সিসিসি মেয়র পদে সাতজন এবং ৩৯টি সাধারণ ও ১৪টি সংরক্ষিত আসনের বিপরীতে ২২৫ জন প্রার্থীর মধ্যে বুধবার ভোটের লড়াই হবে বন্দর নগরীতে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে প্রায় ১০ মাস পিছিয়ে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনে ইতিমধ্যে সংঘাতে প্রাণ গেছে দুজনের। কাউন্সিলর প্রার্থীদের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর, প্রচারণায় হামলাসহ বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে।

৭৩৫ টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪১৯টিকে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা, যা মোট কেন্দ্রের ৫৬ শতাংশ।

এর আগে সবশেষ ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটির ভোটে সরকার সমর্থক মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের অনুসারীদের কেন্দ্র দখল ও ব্যালট ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠে।

ভোটগ্রহণ শুরুর তিন ঘণ্টার মধ্যে ব্যালট ছিনতাই ও মারধরের অভিযোগ করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন বিএনপিসমর্থিত মেয়র প্রার্থী মনজুর আলম।

নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, “নগরবাসীকে এবং সিটির সম্মানিত ভোটারদের আমরা আশ্বস্ত করতে চাই, আগামীকালকে একেবারেই তারা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবেন। এবং ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে তারা বাসায় ফিরে আসবে পারবে। সে ধরণের সকল ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করেছি। আগামীকালকে একটি উৎসবমুখর পরিবেশে এই সিটি নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হবে।”

নির্বাচন উপলক্ষে পুরো সিটিতে পুলিশের ৭ হাজার ৭৭২ জন, আনসারের প্রায় ৩ হাজার ৮০০ সদস্য, ২৫ প্লাটুন বিজিবি, র‌্যাবের ৪১টি দল ছাড়াও স্ট্রাইকিং ফোর্স, রিজার্ভ ফোর্স ও মোবাইল টিম দায়িত্ব পালন করবে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনটি এই প্রথমবারের মত সকল কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

এবারই প্রথম দলীয়ভাবে মেয়র প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী এবং বিএনপির ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন।

ভোটার উপস্থিতি নিয়ে হাসানুজ্জামান বলেন, অনেকগুলো নির্বাচন হয়েছে এভাবে। ঢাকায় অনেকগুলো উপ-নির্বাচন, দেশে উপজেলা ও অনেকগুলো পৌরসভা নির্বাচন হয়েছে।

“সেখানে যে সিস্টেমে হয়েছে, চট্টগ্রাম সিটির ভোটও সেটাকে অনুসরণ করে হচ্ছে। সাধারণ ছুটি সেখানেও ছিল না, সন্তোষজনক ভোটার উপস্থিতি ছিল। আশা করি এখানেও সন্তোষজনক ভোটার উপস্থিতি থাকবে।”

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেগুলো খোলা থাকবে তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভোট দেয়ার সুযোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র আছে ৪১৬টি। সেগুলোতে ১৮ জন করে পুলিশ ও আনসার সদস্য থাকবে। অন্য কেন্দ্রগুলোতে ১৬ জন করে থাকবে। আগের চেয়ে বেশি আইনশৃঙ্খলা সদস্য রেখেছি যাতে ভোটগ্রহণে কোনো সমস্যা না হয়।

“চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে যে পরিবেশটি ধরে রেখেছি, আপানারা দেখেছেন প্রচার প্রচারণা ছিল উৎসব মুখর। সুন্দর পরিবেশ আমরা সৃষ্টি করতে পেরেছি। শেষ দিন পর্যন্ত প্রার্থীদের প্রচারণা ছিল উৎসব মুখর। আশা করি, আগামীকালের নির্বাচনটি উৎসব মুখর হবে।”

ইতিমধ্যে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের কাছ থেকে আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়ে পাওয়া ৫৮টি অভিযোগের মধ্যে ৪৮টি নিষ্পত্তি করা হয়েছে বলে জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা।

এসব অভিযোগের বিষয়ে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আইনের আওতায় নিয়েছি। বিভিন্ন ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও পুলিশ নিবে।

ইভিএমে কোনো কারিগরি ত্রুটি দেখা গেলে কি করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অতিরিক্ত আছে, সমস্যা হলে রিপ্লেস করতে পারব। প্রতি কেন্দ্রে একটি করে ইভিএম অতিরিক্ত আছে।”

ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, কেন্দ্রভিত্তিক মালামাল চারটি ভেন্যু থেকে বিতরণ করা হচ্ছে। এগুলো তিন-চার ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

“আজকের মধ্যেই একেবারে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রস্তুতি গ্রহণ করব যাতে কালকে সকাল ৮টার ভোটগ্রহণে কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হতে না হয়।”

সিসিসি নির্বাচনে এবার ভোটার ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন; পুরুষ ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩, নারী ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩।

৭৩৫টি কেন্দ্রে মোট ভোটগ্রহণ কক্ষের সংখ্যা চার হজার ৮৮৬টি। ২৫ প্লাটুন বিজিবির পাশাপাশি ভোটে দায়িত্ব পালন করবে প্রতিটি ওয়ার্ডে র‌্যাব ও পুলিশের একটি করে টিম।

ভোট গ্রহণে ৭৩৫ প্রিসাইডিং, ১৪৭০ সহকারী প্রিসাইডিং আর ২৯৪০ জন পোলিং অফিসার থাকবে।

নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে একটিতে সাধারণ কাউন্সিলর পদে একজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন। অন্য একটিতে একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর মৃত্যুতে সেটির ভোট স্থগিত হয়েছে। তাই ৩৯ টি সাধারণ ওয়ার্ডে ভোটগ্রহণ হবে।

এছাড়া মোবাইল টিম থাকবে ৪১০টি। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে ১৪০টি দল। ২০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং ৭৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভোটের দায়িত্ব পালন করবেন। সোমবার মধ্যরাতে নির্বাচনের প্রচারণা শেষ হয়েছে। বুধবার সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে।