এই নির্বাচন ঘিরে বুধবার বন্দরনগরীতে দুই দফায় নৌকা ও ধানের শীষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা দায়ের হওয়ার পর একথা বলেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয়ের সামনের মাঠে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন ঘিরে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ জানান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ হচ্ছে সবাইকে সমান চোখে দেখা, একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দেওয়া।
“কিন্তু তারা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করছে। তারা জনগণের সুরক্ষার জন্য, কিন্তু তারা তা করছে না।”
এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ বিএনপি নেতা আমীর খসরুর।
তিনি বলেন, “নির্বাচন বানচাল করতে আওয়ামী লীগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করছে। গত দুই-তিন দিন ধরে নগরীর পতেঙ্গা থেকে শুরু করে কালুরঘাট পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে পুলিশ। ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে, পরিবারকে হেনস্তা করা হচ্ছে। অনেক কাউন্সিলর প্রার্থীসহ দায়িত্বশীল নেতাকর্মীকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলছে।”
সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে আমীর খসরু বলেন, “তাঁবেদার নির্বাচন কমিশনের কাছে কখনও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করা যায় না। নাগরিকরা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের যে ইচ্ছা, সেটা যাতে বন্ধ হয়ে না যায় সেজন্য দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বড় দল হিসেবে বিএনপি নির্বাচনে এসেছে।
শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে থাকবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা এখনও নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালানোর চেষ্টা করছি। নির্বাচনের আর যে কয়েক দিন আছে, পরবর্তী দিনগুলো কীভাবে কাটবে সেটা আমাদের কাছে পুরোপুরি অনিশ্চিত।
“যেখানে পার্টি অফিসের ভেতরে লাঠিসোঁটা নিয়ে ঢুকে হামলা করে, আগুন দেয়, বোমাবাজি করে, সিনিয়র নেতাদের গাড়ি ভাঙে সেখানে আগামী দিনে আরও কী কী হতে পারে, সেটা আমরা এখনও জানি না। আমাদের প্রার্থী শাহাদাত হোসেনের গাড়ি ভেঙেছে, সিনিয়র নেতা আবু সুফিয়ানের গাড়ি ভেঙেছে।”
আমীর খসরু বলেন, “চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর বাংলাদেশে আর কোনো নির্বাচন হবে কি না সন্দেহ আছে। মানুষ আর নির্বাচন গ্রহণ করবে কি না সেটা নিয়েও সন্দেহ আছে।”
সাংবাদিকদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “অনির্বাচিত লোক চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন দখল করলে লাভ কী হবে আপনারাই ভেবে দেখুন। আপনাদের সোচ্চার হতে হবে। না হলে দিন শেষে আপনারাও আক্রান্ত হবেন। আপনারাও রক্ষা পাবেন না।
“অনেক সাংবাদিক দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। অনেকে মামলার আসামি হয়েছেন, জেলে গেছেন। অনেকে দেশ থেকে চলে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যারা এখনও সাংবাদিকতা করছেন আপনারা লিখতে পারছেন না। আপনারা মূলত ম্যানেজারের কাজ করছেন, কেরাণীর কাজ করছেন। যারা ক্ষমতা দখল করে তারা চায় না মিডিয়া স্বাধীনভাবে কাজ করুক, টিকে থাকুক। তারা শুধু চায় তাদের পক্ষে যারা লিখবে তারা টিকে থাকুক।”
বাংলাদেশে নির্বাচনের আর ‘কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই’ মন্তব্য করে খসরু বলেন, “নির্বাচন বিতর্কিত হওয়ার কি আর কিছু বাকি আছে বাংলাদেশে? বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষের মনেই তো নির্বাচন বিতর্কিত। যে চুরি করছে সেও জানে এই নির্বাচন বিতর্কিত, যার ভোট চুরি হচ্ছে সেও জানে এই নির্বাচন বিতর্কিত।”
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশীদ উপস্থিত ছিলেন।