বুধবার বিকালে নগরীর বলিরহাটে এই সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে একজনকে আটক করা হয়েছে বলে বাকলিয়া থানার ওসি রুহুল আমিন জানিয়েছেন।
ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মেয়র প্রার্থীর পক্ষে জনসংযোগ করার সময় তাদের ওপর যুবদল নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছেন, যাতে তিনজন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনের মাথায় বেশ জখম হয়েছে।
অপরদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নৌকার প্রচারে থাকা ছাত্রলীগকর্মীরাই তাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছেন, যাতে ১০ জন আহত হয়েছেন।
হামলার খবর শুনে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (বাকলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার-ভূমি) আশরাফুল হাসানসহ পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন। সেখান থেকে হামলায় জড়িত অভিযোগে একজনকে আটক করা হয়।
বাকলিয়া থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক মানিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নৌকার মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীর পক্ষে বলিরহাটে আমরা ছাত্রলীগ কর্মীরা জনসংযোগ করছিলাম। এর পাশে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর পক্ষে যুবদলের মিটিং চলছিল। মিটিং শেষ করে যুবদল কর্মীরা আমাদের ওপর হামলা করে।
“এ সময় তারা ককটেল ফাটায়। আমাদের সোহান, ওয়াজেদ ও মুন্না আহত হয়েছে। তাদের মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত লেগেছে।”
“এ সময় ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। তারা আমাদের নেতাকর্মীদের পেছন থেকে হামলা করে। এ সময় গুলি করে এবং ককটেল ফাটায়। আমাদের ১০ জন কর্মী আহত হয়েছে।”
যুবদল নেতা মো. নুরুদ্দিন, মো. ইউনুছ, মো. নয়ন, মো. ইব্রাহিম, মো. রাশেদ, মো. ফরিদ, এসএম রুবেল, মো. আমীর ও মো. আজাদ আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।
“আমাদের আহত নেতাকর্মীরা ডা. শাহদাত হোসেনের মালিকানাধীন ট্রিটমেন্ট ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন,” বলেন তিনি।
ঘটনার পর ওই এলাকার যুবদল নেতা মোহাম্মদ ইউনুছের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মো. ইদ্রিস আলী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাকলিয়া থানার ওসি রুহুল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালানোর সময় ছাত্রলীগ কর্মীদের ওপর যুবদল কর্মীরা হামলা চালিয়েছে। এতে তিনজন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে সোহানের (২৪) মাথায় জখমটা বেশি।
ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীর পক্ষে বলিরহাটে জনসংযোগ করছিলেন ছাত্রলীগকর্মীরা। এর পাশে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের পক্ষে যুবদলের উদ্যোগে সভা চলছিল। হঠাৎ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর হাতবোমা নিক্ষেপ করা হয়। এরপর উভয়পক্ষে মারামারি হয়।
বিএনপির পক্ষে থেকে গুলিবর্ষণের কথা বলা হলেও বাকলিয়ার ওসি রুহুল আমিন বলেন, “সেখানে ককটেল ফাটানো হলেও গুলির কোনো ঘটনা ঘটেনি।”
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী এবার মেয়র পদে নৌকার প্রার্থী হিসেবে লড়াই করছেন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত মহানগর বিএনপির সভাপতি।
চট্টগ্রামে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কোনো প্রার্থী না থাকলেও কাউন্সিলর পদে বেশিরভাগ ওয়ার্ডেই দল সমর্থিত প্রার্থীর বিপরীতে এক বা একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকদের সংঘর্ষে এরইমধ্যে দুইজন নিহত হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় ক্ষমতাসীন দলের দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে নির্বাচনী পরিবেশ উত্তপ্ত রয়েছে। এবার সেখানে বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল।
এদিকে নগরীর আকবর শাহ এলাকায় বিএনপি প্রার্থীর জনসংযোগ থেকে একদল কর্মী একটি স্কুলে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের মধ্যে ঢুকে তাদের লাঞ্ছিত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দুপুরে পাহাড়তলী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে এ ঘটনা ঘটে বলে কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল করিম জানিয়েছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, স্কুলে আজ দেড় হাজার ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তার প্রশিক্ষণ চলছিল। এ সময় কলেজ মাঠে কিছু বহিরাগত প্রবেশ করলে তাদের তিনি বের হয়ে যেতে বলেন।
“ওই রাস্তা দিয়ে বিএনপি প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন জনসংযোগ করে যাওয়ার সময় আমাকে দেখে লিফলেট দিতে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এ সময় তাকে প্রশিক্ষণ চলাকালে প্রবেশ করতে নিষেধ করায় তিনি প্রবেশ করেননি। কিন্তু তার সাথে থাকা কিছু লোক জোর করে ঢুকে পড়ে।
“তাদের বাধা দেওয়া হলে ভোটগ্রহণকারী কয়েকজন কর্মকর্তাসহ আমাদের লাঞ্ছিত করা হয়।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আকবর শাহ থানার ওসি জহির হোসেন বলেন, “পাহাড়তলী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে কিছু লোক প্রবেশ করে প্রশিক্ষণরত ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত করেছে বলে শুনেছি। এখনও পর্যন্ত আমরা কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। বিষয়টি আমরা খোঁজ নিচ্ছি।”