নির্বাচনী বিরোধ নয়, ছাত্রলীগকর্মী রোহিত হত্যার পেছনে ইট-বালির ব্যবসা: পুলিশ

চট্টগ্রামে ছাত্রলীগকর্মী আশিকুর রহমান রোহিত হত্যার দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ বলছে, নির্বাচনী বিরোধ নয়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও ইট-বালির ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2021, 11:24 AM
Updated : 18 Jan 2021, 11:24 AM

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাত-উত্তাপের মধ্যে গত ১৫ জানুয়ারি ছাত্রলীগকর্মী রোহিতের মৃত্যুর খবর আসে। নগরীর ওমরগণি এমইএস কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রোহিতকে (২০) গত ৮ জানুয়ারি বিকালে দেওয়ানবাজার ভরাপুকুরপাড় সংলগ্ন কেডিএস গলি এলাকায় ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল।

তার মৃত্যুর খবরে চট্টগ্রামের উত্তপ্ত নির্বাচনী পরিবেশে ছেলেটি নির্বাচনকেন্দ্রিক বিরোধে প্রাণ হারিয়েছে বলে সন্দেহ করেছিলেন অনেকে।

তবে এই হত্যা মামলার দুই আসামি মো. মহিউদ্দিন (৩৫) ও সাইফুল ইসলাম বাবুকে (২১) গ্রেপ্তারের পর নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মেহেদী হাসান বলেছেন, “নির্বাচনী বিরোধের কারণে রোহিত খুন হয়নি।”

সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে রোহিত হত্যা মামলার তদন্তের অগগ্রতি জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।

সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “এলাকাভিত্তিক ক্লাবের আধিপত্য বিস্তার ও ইট-বালির ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। গ্রেপ্তার সাইফুল ইসলাম বাবু ও পলাতক সাহাবুদ্দিন সাবু তাকে ছুরিকাঘাত করে, যার পরিকল্পনাকারী ছিলেন মহিউদ্দিন।”

রোববার ঢাকার মুগদার মাদারটেক নিউ মদিনা আবাসিক এলাকা থেকে মহিউদ্দিন এবং মিরপুর থেকে বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে উপ-কমিশনার মেহেদী জানান।

রোহিতকে হামলার পরদিন তার বড় ভাই জাহিদুর রহমান বাদী হয়ে মহিউদ্দিন, বাবু ও সাহাবুদ্দিন সাবুকে (২৬) আসামি করে বাকলিয়া থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন।

উপ-কমিশনার মেহেদী বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় রোহিত তার বক্তব্য দিয়েছেন। সেখানেও তিনি এই তিনজনের নাম বলেছেন।

“হামলা করেই মহিউদ্দিন, বাবু ও সাবু পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তার এড়াতে মহিউদ্দিন তার দাড়ি কেটে ফেলেন আর বাবুও চলাফেরা পরিবর্তন করে ফেলে। তারা ঢাকায় অবস্থান করে সেখান থেকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল।”

বাকলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মঈন উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রোহিতকে হত্যার আগে ৩১ ডিসেম্বর পরিকল্পনা করে মহিউদ্দিন। সেজন্য সে থার্টিফার্স্ট নাইটের পার্টি দিয়েছিল। ওই পার্টিতে সাবু, বাবুসহ আরও কয়েকজন ছিলেন।”

গ্রেপ্তার মহিউদ্দিনের পরিকল্পনাতেই রোহিতকে ছুরিকাঘাত করা হয় বলে পুলিশের ভাষ্য।

বাকলিয়া থানার ওসি নেজাম উদ্দিন বলেন, “নিজেদের এলাকায় করলে তাদের এলাকাছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় রোহিতকে পরিকল্পনা অনুযায়ী কৌশলে দেওয়ানবাজার ভরাপুকুরপাড় সংলগ্ন কেডিএস গলিতে নিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

“হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোহিত জানিয়েছিল, ৮ জানুয়ারি বাবু ও সাবু কৌশলে তার মোটরসাইকেলে উঠে। কৌশলে তারাই তাকে কেডিএস গলিতে নিয়ে যায়। সেখানে সে মহিউদ্দিনকে অবস্থান নিতে দেখে। বাবু ও সাবু তাকে মোটরসাইকেল থামাতে বলে নেমে যায় এবং ছুরিকাঘাত করে।”

ওসি নেজাম জানান, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরও কয়েকজন পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। তাদের কয়েকজনের নামও পাওয়া গেছে। তাদেরও ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।

এদিকে সোমবার মহিউদ্দিন ও বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মহিউদ্দিন মুরাদ শুনানি শেষে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বলে ওসি নেজাম জানিয়েছেন।