নগরীর আকবর শাহ থানার পূর্ব ফিরোজ শাহ নাছিয়া ঘোনা ১ নম্বর ঝিলে কেটে তৈরি করা হচ্ছে গাউসিয়া লেকসিটি নিউ আবাসিক এলাকা।
যেসব পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন করা হয়েছে সেখানে এলাকার লোকজন ছাড়া বাইরের কারও প্রবেশ ‘অঘোষিতভাবে’ নিষেধ। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও এসব এলাকায় যেতে বেশ কয়েকবার হামলার শিকারও হয়েছেন।
পুলিশ বলছে, এসব পাহাড়ি এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সেখানে গড়ে উঠেছে মাদকের আখড়া ও সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন স্থাপনা।
এ ঘটনার পর গত ৩১ ডিসেম্বর আকবর শাহ থানায় মামলা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে করা মামলায় উল্লেখ করা হয়, উত্তর পাহাড়তলী মৌজার বিএস ৩৪২০ দাগের জায়গাটি পাহাড় শ্রেণিভুক্ত। নুরে আলম ওরফে নুরু নামে এক ব্যক্তি পাহাড়গুলো কাটছে।
আকবর শাহ থানার ওসি জহির হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, নুরু ছাড়াও পাহাড় কাটার জন্য তারা আরও তিন জনের নাম পেয়েছেন। তাদের ডাকা হলেও তারা থানায় আসেননি।
“পরিবেশ অধিদপ্তর যে মামলা করেছে সেখানে একজনের নাম উল্লেখ রয়েছে। তবে তদন্তে পাহাড় কাটার সাথে অন্য যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদের সবাইকে আসামি করা হবে।”
স্থানীয় মাহবুবা ইয়াসমিন ডলি, সিরাজদ্দৌল্লাহ, মো, নুর নবী নামে তিন ব্যক্তি এসব ভবন নির্মাণ করছেন বলে স্থানীয়রা জানান।
ডলি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০০৯ সালে গোলাম মাওলা নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা দিয়ে তার প্রবাসী স্বামী পাহাড় কিনে নেন। সেখানে তিনি ভবন নির্মাণ করছেন।
কতটা জমি কিনেছেন এবং পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি আছে কিনা- এসব প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।
নুরু ওই কাজ করে দেওয়ার সাথে সাথে রেলওয়ের পাহাড় দখল করে অবাধে কাটছেন এবং বন উজাড় করে তৈরি করছেন বসতি।
নুরুর পাশাপাশি তার ভাই জানে আলমও পাহাড় কেটে বসতি তৈরি করেছেন। এছাড়া তার আরও কয়েকজন সহযোগীও এর সাথে জড়িত।
রেলওয়ের মালিকাধীন পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হয়েছে আধা পাকা বসতি। সেখানে গিয়ে কথা হয় কয়েক জনের সাথে।
আছমা বেগম নামে এক বাসিন্দা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মাসে দেড় হাজার টাকা ভাড়ায় মাস দুয়েক আগে তার স্বামী বাসাটি ভাড়া নিয়েছেন। নুরু নামে এক ব্যক্তি তাদের কাছে ভাড়া দিয়েছেন।
আরও কিছুদূর গিয়ে কথা হয় জেসমিন নামে এক নারীর সাথে। তিনি জানান, ২০১৫ সালে তার স্বামী মো. হানিফ ৩০ হাজার টাকায় মিলির মা নামে পরিচিত এক নারীর কাছ থেকে জায়গাটি কিনে নেন। জায়গা বিক্রি করে মিলির মা অন্যত্র চলে গেছেন।
জায়গাটি যে সরকারি খাস জমি, তা জানেন জেসমিন। তিনি বলেন, যে কয়েক বছর থাকা যায়, ততদিন তারা সেখানে থাকবেন। উচ্ছেদ করা হলে অন্যত্র চলে যাবেন।
চট্টগ্রাম নগরীর প্রবেশ পথ আকবর শাহ থানা এলাকার পূর্ব ফিরোজ শাহ কলোনির পাহাড়ি এলাকাগুলো স্থানীয়দের কাছে ঘোনা নামে পরিচিত। আর সেখানে পানির যেসব জলাধার আছে সেগুলো পরিচিত ঝিল নামে।
পাহাড় কেটে গড়ে তোলা নিউ আবাসিক এলাকার গেইট পেরিয়ে অল্প কিছু দূর এগোলে দেখা যায় আল মাদরাসাতুল ইসলামীয়া দারুল কুরআন এতিমখানার গেইট। যদিও সেখানে কোনো এতিমের দেখা মেলেনি। মসজিদ থাকলেও দেখা মেলেনি ইমামের।
সেখানে রয়েছে করাত কল, বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি কবুতর, গরু, ছাগল, ভেড়ার খামার, যেগুলো সব করা হয়েছে পাহাড় কেটে।
মাটি কেটে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ের সংযোগ সড়ক করা হয়েছে। মাটিতে ফেলে রাখা হয়েছে সেগুন কাঠ। আবার স্থানীয়দের চলাচলের জন্য পাকা সিঁড়িও আছে। যে সিঁড়িটির দাতা সংস্থার অর্থায়নে তৈরি করেছে সিটি করপোরেশন।
সোমবার তৃতীয় দিনের মত পাহাড়ি এ এলাকায় নুরুর সন্ধানে অভিযানে যায় আকবর শাহ থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের সাথে পাহাড়গুলো পরিদর্শনে যান পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও।
অভিযানের নেতৃত্বে থাকা নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পশ্চিম) এএএম হুমায়ুন কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পাহাড়গুলোর বেশিরভাগ বাংলাদেশ রেলওয়ের মালিকানাধীন। সেসব পাহাড় কেটে এবং বন উজাড় করে বসতি স্থাপন করছে নুরু ও তার ভাই জানে আলম। নুরু নিজে বসতি গড়ে তোলার পাশাপাশি তার কিছু ঘনিষ্ঠজনও সেখানে বসতি করে ভাড়া দেওয়ার পাশাপাশি বিক্রিও করছেন তাদের ঘনিষ্ঠ লোকজনদের কাছে। আবার পাহাড় কাটার পাশাপাশি সে বন উজাড় করে সেগুনের মতো কাঠ পাচার করছে।“
রেলওয়ের মালিকাধীন পাহাড়গুলো ফয়’স লেক সংলগ্ন। ফয়’স লেকের সাথে সেগুলোও কনকর্ড গ্রুপের কাছে লিজ দেওয়া হয়েছে।
কনকর্ডের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পাহাড়গুলো স্থানীয় কিছু সন্ত্রাসী দখল করে রেখেছে। সেগুলো এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে গেছে। এ নিয়ে আমরা কিছু করতে পারছি না।”
“আপনার কাছ থেকে শুনলাম পাহাড় কেটে বসতি নির্মাণ করা হচ্ছে। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখব, সেগুলোর কী অবস্থা।”
নুরুর খোঁজে নিঃস্ফল অভিযান
আকবর শাহ থানার ওসি জহির হোসেন বলেন, নুরুর আস্তানা উচ্ছেদের জন্য তারা প্রায়ই অভিযানে যান।