পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, নানা ‘অপকর্মের হোতা’ নুরু পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। কিন্তু দুর্গম এই এলাকায় নিজের লোকজন দিয়ে এক ধরনের ‘সুরক্ষা বলয়’ তৈরি করায় তাকে ধরা যাচ্ছে না।
নগরীর আকবর শাহ থানার ওসি জহির হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পাহাড়ি এলাকা নাছিয়া ঘোনার ১ নম্বর ঝিল এলাকাটি অনেকটা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। রীতিমতো বাহিনী তৈরি করে সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে সন্ত্রাসী নুরু। ২৬ ডিসেম্বর ওই এলাকায় যৌথ অভিযানে যায় থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ।
“সেখানে পুলিশের ওপর হামলা করা হয়। বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে সেখান থেকে ফিরে আসে পুলিশ। তবুও নুরুকে ধরতে পারেনি।”
ওই এলাকার ঘোনাগুলো বিভিন্ন ব্যক্তির নামে আর ঝিলগুলো পরিচিতি এক, দুই, তিন নম্বর ঝিল হিসেবে। এক সময় ছিন্নমূল মানুষজন পাহাড়ি এসব খাস জায়গায় গিয়ে বসতি স্থাপন করলেও এখন সেখানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনের বসবাস।
আনুমানিক ৪০ বছর বয়সী নুরুর বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলা, কাঠ পচার, সরকারি জমি দখল ও হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত দুই ডজন মামলা রয়েছে বলে জানান ওসি।
তিনি বলেন, “পাহাড়ি ওই এলাকায় লুকিয়ে থাকলে স্থানীয়দের সহায়তা ছাড়া কাউকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়েই বাহিনীর লোকজন আগে থেকেই নুরুকে খবর দিয়ে দেয়। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা শুরু করে।”
নুরুর স্ত্রী, তার ভাই জানে আলমের স্ত্রী ও বোন রুবি তাদের অনুসারী পরিবারের নারীদের নিয়ে পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন বলে জানান স্থানীয় কয়েকজন।
নুরুর স্ত্রী ও বোন সেখানে ‘ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন’ বলে অভিযোগ করেন তারা।
২৬ ডিসেম্বরের অভিযানে নুরুর এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান ওসি জহির।
ওই দিন পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলায় বৃহস্পতিবার ভোরে আবার সেখানে অভিযানে যায় পুলিশ। তবে এবারও নুরুকে ধরা যায়নি।
“সেখান থেকে নারীসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় কিরিচ, ছোরাসহ দেশীয় তৈরি ১১টি ধারলো অস্ত্র ও ইয়াবা,” বলেন ওসি।
তিনি বলেন, নাছিয়া ঘোনায় পাহাড় কেটে বসতি গড়ে তুলেছেন নুরু, যেটি ‘নুরু কলোনি’ নামে পরিচিত। ইসা ভবন নামে একটি গেইট তৈরি করে সেখানে করা হয়েছে মাদ্রাসা ও এতিমখানা।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে নগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে, “নুরুর একটি বাহিনীর লোকজন পাহাড় কাটার কাজ করে। বিভিন্ন প্রভাবশালীর হয়ে তারা পাহাড় কেটে প্লট নির্মাণ করছে।
“অনেকটা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সেখানে প্রশাসনের লোকজনের তেমন আসা-যাওয়া নেই। তাছাড়া স্থানীয়দের সহায়তা ছাড়া ওই সব এলাকায় প্রবেশ করলেই হামলার শিকার হতে হয়।”
“কিন্তু নুরু ও তার পরিবারের সদস্যদের ভয়ে তারা কেউ কথা বলতে পারেন না। তাদের পরিবারের সদস্যদের হাতে জিম্মি ওই এলাকা।”