স্বপ্ন পূরণ কঠিন: সুজন

বাসযোগ্য বন্দর নগরী গড়ে তোলার স্বপ্ন থাকলেও সীমিত সময় ও আর্থিক সক্ষমতার অভাবে তা পূরণ যে কঠিন, তা বললেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Nov 2020, 03:16 PM
Updated : 29 Nov 2020, 03:17 PM

মহামারীর কারণে ভোট না হওয়ায় মাত্র ১৮০ দিন মেয়াদের জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নেওয়া সুজন রোববার করপোরেশনের পরামর্শক কমিটির ভার্চুয়াল সভায় একথা বলেন। 

তিনি বলেন, “দুর্ভোগমুক্ত এবং সর্বসাধারণের সুযোগ সুবিধা সমন্বিত একটি বাসযোগ্য নগরী গড়ে তোলাই আমার স্বপ্ন। কিন্তু স্বপ্ন পূরণে যে আর্থিক সক্ষমতা দরকার তা নেই। আমি সীমিত সময়ের জন্য প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছি বিশাল অঙ্কের দেনার বোঝা নিয়ে।”

তবে বিদ্যমান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তার কিছু জরুরি ভিত্তিতে নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানান তিনি।

সুজন বলেন, “পরামর্শক কমিটির কাছে যে পরামর্শগুলো পেয়েছি, সেগুলো যৌক্তিক, কিন্তু বাস্তবায়ন করা কঠিন।

“তবে আগামীতে সিসিসির নির্বাচিত পরিষদ চট্টগ্রামকে যেন বাসযোগ্য নগরীতে পরিণত করতে পারে, সেজন্য কী ধরনের কর্মপরিকল্পনা থাকা দরকার তার একটি ধারণা আমি রেখে যেতে চাই।”

সিসিসির সেবামূলক কার্যক্রম চলমান রাখতে সরকারের কাছে বরাদ্দ চেয়ে ইতোমধ্যে কিছু থোক বরাদ্দ পেয়েছেন সুজন, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানান তিনি।

আয় বাড়াতে চট্টগ্রাম বন্দরের কাছে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ তাদের মোট আয়ের এক শতাংশ সার্ভিস চার্জ চেয়েছেন সুজন।

তিনি বলেন, ““সরকারি সেবাসংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোতে নতুন ধার্যকৃত করের তালিকা দিয়েছি। আশা করি, তারা সিসিসির চাওয়া-পাওয়ার বিষয়টি আমলে আনবেন।”

নগরীতে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে সমন্বয়হীনতার প্রসঙ্গ তুলে সুজন বলেন, “একারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হচ্ছে এবং নাগরিক দুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। ওয়াসাকে বলেছি, সড়ক খোঁড়াখুড়ির আগে সিটি করপোরেশনেক জানাতে হবে কোথায় কাজ হচ্ছে। কিন্তু তারা আমাদের অনুরোধ আমলে আনেন না। এতে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে।”

নগরীতে খেলার মাঠের অভাবের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাদের সন্তানরা খেলাধুলা করতে পারে এমন কয়েকটা মাঠ দরকার। আউটার স্টেডিয়াম খেলাধুলার উপযোগী করা হয়েছে।

“তবে অপরিকল্পিত সুইমিংপুলের কারণে এই মাঠের একটি বড় অংশ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আগ্রাবাদ জাম্বুরী মাঠে একটি শিশু পার্ক করা হয়েছে। এই পার্কের অধীনে বিস্তর জায়গা অব্যবহৃত রয়ে গেছে। যে বিনোদন কেন্দ্রটি আছে এটি আকর্ষণীয় নয়।

“ঠান্ডাছড়িতে সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী একটি রিসোর্ট পার্ক গড়ে ছিলেন। এখানে সিটি কর্পোরেশনে বিস্তর জায়গা রয়েছে। একটি শিল্পগ্রুপ এই জায়গাটাকে জিম্মি করে রেখে সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নমূলক কাজে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে। কেউ কেউ মনে করে তারা রাষ্ট্রের চাইতেও বড়।”

পরামর্শক কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্যসচিব মো. আবদুল করিম বলেন, “সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ উধ্বর্তন পদে বর্তমানে চট্টগ্রামের সন্তানরা দায়িত্ব পালন করছেন। সবাইকে একসাথে নিয়ে ঢাকায় একটি সভা করা দরকার। এখান থেকে চট্টগ্রামের স্বার্থে অনেক সিদ্ধান্ত আসতে পারে।”

সিসিসির সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “সমন্বয়ের জন্য দরকার একজন মুখ্য কাণ্ডারী। এখানে নগর সরকারের কথা উঠেছে। ১৯৮২ সালে সিটি কর্পোরেশন অর্গানোগ্রাম বাস্তবায়ন না হলে নগর সরকার বাস্তবায়ন হবে না।”

সভায় দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, দৈনিক পূর্বকোণের সম্পাদক রমিজ উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক পর্ষদ সদস্য জোবায়ের আহমদ, এশিয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ সালাম, সাবেক আইজিপি মো. নুরুল আলম, শিক্ষাবিদ হাসিনা জাকারিয়া, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাচক আকরাম খান, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলী, নগর পরিকল্পনাবিদ আশিক ইমরান, আইইবি চট্টগ্রামের সভাপতি প্রবীর কুমার সেন, সিসিসির প্রধান প্রকৌশলী লেফটেন্যান্ট কর্নেল সোহেল আহমেদ, সিসিসি সচিব আবু সাহেদ চৌধুরী ও প্রশাসকের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম উপস্থিত ছিলেন।