পিসি রোড: অগ্রগতি না হলে ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল চান সুজন

আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে পোর্ট কানেক্টিং (পিসি) সড়কের অবশিষ্টাংশের কাজে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হলে ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করতে অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানকে জাইকাকে আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2020, 06:17 PM
Updated : 19 Nov 2020, 06:17 PM

বৃহস্পতিবার টাইগার পাসের অস্থায়ী নগর ভবনে জাইকার প্রতিনিধি দল দেখা করতে এলে তিনি এ আহ্বান জানান।

সুজন বলেন, “কিছু ঠিকাদার পেশাদার না হওয়ার কারণে করপোরেশনের চলমান উন্নয়ন কাজ সময়সীমার মধ্যে শেষ না হওয়ায় জনমনে অসন্তোষ সৃষ্টি ও সমালোচনা হচ্ছে। দরপত্রের মাধ্যমে কার্যাদেশ পাওয়ার পর অনেক ঠিকাদার তাদের প্রফিট মার্জিন রেখে কাজটি আরেক ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করে দেন।

“এতে গুণগতমান ঠিক না থাকার পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করা যায় না। ফলে করপোরেশনের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। ৩০ ডিসেম্বর মধ্যে জাইকার অর্থায়নে চলমান পোর্ট কানেক্টিং রোডের অবশিষ্ট উন্নয়ন কাজের উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি না হলে অভিযুক্ত ঠিকাদারদের কার্যাদেশ বাতিল করুন।”

সুজন বলেন, “আগামী ১০ বছরের মধ্যে রিজিওনাল কানেকটিভিটি, ট্যানেল, মহেশখালীর গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হলে চট্টগ্রাম নগরী দেশের শ্রেষ্ঠ শহরে পরিণত হবে। আমাদের এই প্রিয় নগরে যা কিছু ভালো কাজ সম্পন্ন হয়েছে, তার জন্য জাইকা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। কারণ তারা নগরের অনেকগুলো উন্নয়নকাজের অংশীদার।”

প্রশাসক নগরীতে চলমান সকল উন্নয়ন কাজের সাইড প্ল্যান প্রকল্প এলাকায় কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদারদের মাধ্যমে টাঙিয়ে রাখতে বলেন। যাতে কাজ শেষের সময়সীমাও উল্লেখ থাকতে হবে। না হলে জনগণের মাঝে ভুল বার্তা যায় বলে মন্তব্য করেন সুজন।

পিসি রোডের নিমতলা থেকে আনন্দিপুর অংশের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রানা বিল্ডার্স ও সালেহ আহমেদ (জেভি) এবং আনন্দিপুর থেকে কলকা ফিলিং স্টেশন অংশের কাজ করছে ম্যাক করপোরেশন।

এরমধ্যে আনন্দিপুর থেকে কলকা ফিলিং স্টেশন পর্যন্ত অংশের কাজ বেশিরভাগই বাকি। এ অংশে কোথাও নালার কাজ চলছে কোথাও রাস্তার একপাশের কাজ। কিন্তু পুরো রাস্তাই খুড়ে রাখা।

আর নিমতলা-আনন্দিপুর অংশের বড়পোল থেকে আনন্দিপুর পর্যন্ত উভমুখী সড়কটির এক পাশ বন্ধ করে চলছে নির্মাণ কাজ।

পিসি রোড ধরে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বের হওয়া অধিকাংশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ও লরি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দিকে চলাচল করে। সড়কের এ অবস্থায় যান চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন হচ্ছে। যাতে নগরীর বন্দর সংলগ্ন পুরো এলাকার যান চলাচলের উপর চাপ পড়েছে। সৃষ্টি হচ্ছে যানজট।

২০১৬ সালের শুরু থেকেই পিসি রোডের নিমতলা থেকে বড়পোল পর্যন্ত অংশের কার্পেটিং উঠে গিয়ে বড় আকারের গর্তের সৃষ্টি হয়।

এরপর সড়কটির নয়াবাজার পর্যন্ত বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই বছরের মাঝামাঝি থেকে সড়কটিতে যান চলাচল কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।

তারপর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে জাইকার অর্থায়নেই সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে।

কয়েক দফায় সময় বাড়িয়ে প্রকল্পটির কাজ চলতি বছরের জুনে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু এরমধ্যেও কাজ শেষ হয়নি।

এদিকে বর্ষায়ও সড়ক নির্মাণের কাজ চলায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা, যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহনের চালকরা। সমালোচনার মুখে সাবেক মেয়র নাছির জুন ও জুলাই মাসে কয়েক দফা পরিদর্শন শেষে নভেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানোর ঘোষণা দেন।

পাঁচ দশমিক সাত কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১২০ ফুট প্রস্থের পিসি রোডটি নির্মাণে মোট ব্যয় হচ্ছে প্রায় একশ কোটি টাকা।

প্রশাসকের দায়িত্ব নেয়ার দিনই ৬ অগাস্ট ওই সড়কে গিয়ে পাঁচ দিনের মধ্যে গর্ত ভরাটের নির্দেশ দেন সুজন। এরপর গত তিন মাসে একাধিকার তিনি সড়কটির নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করে নভেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার তাগাদা দেন ঠিকাদারকে।

বৃহস্পতিবার দেখা করতে এসে প্রশাসক সুজনকে নগরীতে জাইকার অর্থায়নে সিসিসি’র উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করেন জাইকার কর্মকর্তারা।

এসময় জাইকার প্রকল্প পরিচালক গোলাম মোস্তফা, উপ প্রধান প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুল ইসলাম, প্রকল্পের ডেপুটি টিম লিডার শফিউল আলম, সিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক, প্রধান প্রকৌশলী লেফটেন্যান্ট কর্নেল সোহেল আহমেদ, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক উপস্থিত ছিলেন।