স্বাস্থ্যবিধিতে অনীহা, চট্টগ্রামে বাড়ছে কোভিড-১৯ রোগী

চট্টগ্রামে অক্টোবরে দিনে করোনাভাইরাস শনাক্তের সংখ্যা ছিল একশ’র কাছাকাছি, গত এক সপ্তাহ ধরে সেই সংখ্যাটি দেড়শ’রও বেশি।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2020, 05:26 PM
Updated : 18 Nov 2020, 05:26 PM

মাস্ক না পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানায় অনীহা এবং শীত মৌসুমের আবহাওয়া ভাইরাস সংক্রমণের অনুকূল হওয়ায় সংক্রমণ বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।  

বুধবার জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুসারে, আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৩৯৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৭৮ জনের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। শতাংশের হিসেবে তা প্রায় ১২ দশমিক ৭৩ ভাগ।

এর আগে ১৭ নভেম্বর ১৫৭ জন, ১৬ নভেম্বর ১৮১ জন, ১৫ নভেম্বর ৬৩ জন, ১৪ নভেম্বর ১৪৬ জন এবং ১৩ নভেম্বর ১০৮ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শনাক্তের সংখ্যা ঊর্ধমুখী। ১৬ নভেম্বর মোট নমুনার প্রায় ১৭ শতাংশ পজেটিভ হয়। গত মাসে দিনে শনাক্তের সংখ্যা একশ’র কাছাকাছি ছিল। যা চলতি মাসে অনেক বেড়েছে।”

আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও মৃত্যুর হার এবং হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা তেমন বাড়েনি বলে জানান সিভিল সার্জন।

১৩ অক্টোবর চট্টগ্রাম জেলায় দু’জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তি মারা গেলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩০১ জনে।

সরকারি হিসেবে, এরপর গত এক মাস তিন দিনে জেলায় ১০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী মারা গেছেন।  

আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার কারণ হিসেবে স্বাস্থ্যবিধি না মানাকে দায়ী করে সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, “এরজন্য আমরাই দায়ী। স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে সংক্রমণ বাড়ছে। শীতকাল হওয়ায় আর্দ্রতা কমছে। এই আবহাওয়া ভাইরাসের জন্য উপযুক্ত।”

স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চললে সংক্রমণ কম থাকত বলে মনে করেন তিনি।

চলতি সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিনিই নগরীর বড় বাজার, বাণিজ্যিক এলাকা এবং লোক সমাগম হয় এমন মোড়গুলোতে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে টানা অভিযান চালাচ্ছে জেলা প্রশাসনের দল।

অভিযানে মাস্ক না পরা পথচারী ও বিভিন্ন পেশার মানুষদের নানা অঙ্কের জরিমানা করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অভিযানের শুরুতে মাস্ক আছে এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম পেয়েছি। কয়েকদিন টানা অভিযান ও জরিমানার পর এখন মাস্ক পরিধানের হার বেড়েছে।

“আজ রিয়াজুদ্দিন বাজার এবং নিউমার্কেট এলাকায় গিয়ে দেখেছি চার দিন আগের তুলনায় মাস্ক পরার হার বেশি। কিছু নিম্ন আয়ের মানুষের এবং শিক্ষিত লোকজনের মধ্যেও মাস্ক পরিধানে অবহেলা আছে। কেউ কেউ আমাদের দেখলে পকেট থেকে বের করে মাস্ক মুখে লাগচ্ছে। এভাবে জনাকীর্ণ এলাকায় ঘোরাঘুরি করে তারা অন্যদেরও স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।”

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মাহফুজুর রহমান মনে করেন, কোভিড-১৯ এর মতো সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণে ‘কমিউনিটি ইনভলভমেন্ট’ খুব জরুরি।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংক্রমণের সংখ্যা গত কয়েকমাসে একটু কমে আসাতে সবাই ভাবছে আর বুঝি করোনা হবে না।

“পুলিশ বা প্রশাসন দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা যাবে না, সেটা এতদিনের অভিজ্ঞতায় বোঝা যাচ্ছে। প্রত্যেক পাড়া-মহল্লায় কমিটি করে দায়িত্ব দিতে হবে, যারা স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে কাজ করবে। প্রশাসন প্রয়োজনে তাদের সাথে সমন্বয় করবে।”

মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব মানা এবং সাবান দিয়ে হাত ধোয়া তিনটিই খুব জরুরি, বলেন তিনি।

চট্টগ্রাম জেলায় এই পর্যন্ত কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে ২৩ হাজার ৬১ জনের। এদের মধ্যে নগরীর ১৭ হাজার ১৫৬ জন এবং বিভিন্ন উপজেলার ৫ হাজার ৯০৫ জন।

বুধবার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ১১১ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৭৬ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।

মে-জুন মাসে চট্টগ্রাম জেলায় করোনা শনাক্তের হার ছিল নমুনা পরীক্ষার প্রায় ২৮-৩০ শতাংশ। জুলাই মাসের শুরুতে তা কমে ১৯-২২ শতাংশে দাঁড়ায়।

জুলাইয়ের শেষ দিকে এই হার ছিল ১১-১২ শতাংশ। অগাস্ট মাসের শুরুতে শনাক্তের হার কিছুটা বেশি থাকলেও অগাস্ট মাসের শেষ দিকে তা ছিল ১০ শতাংশের মতো।

সেপ্টেম্বর মাসে গড়ে সাড়ে পাঁচ থেকে সাত শতাংশের মধ্যে ছিল এই হার। অক্টোবর মাসের শুরুতে তা আবার বেড়ে সাড়ে আট থেকে সাড়ে নয় শতাংশে দাঁড়ায়। চলতি সপ্তাহে তা বেড়ে ১২ থেকে ১৩ শতাংশ হয়েছে।