ইয়াবা সেবনের টাকা যোগাড়ে গৃহকর্মী ছিনতাইয়ে: পুলিশ

চট্টগ্রামে মোবাইল ছিনতাইয়ে এক তরুণীসহ দুজনকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বলছে, ইয়াবা সেবনের অর্থ যোগাড়ে এলাকার ছেলেদের সঙ্গে মিলে ছিনতাইয়ে যোগ দিয়েছিলেন ওই গৃহকর্মী।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2020, 02:56 PM
Updated : 18 Nov 2020, 02:56 PM

গ্রেপ্তার রূপালী আক্তার নীপা (২০) নগরীর বগারবিল এলাকায় ছিন্নমূল শিশু হিসেবে বেড়ে উঠেছেন। ওই এলাকার আরেক ‘ছিনতাইকারী’ শাহ আলমের সঙ্গে বছরখানেক আগে তার বিয়ে হয়। পরে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়। নীপা দিদার মার্কেট এলাকায় ফারুক টাওয়ারে একজনের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন।

গত মঙ্গলবার রাতে নগরীর স্টেশন রোডে ছিনতাই করা মোবাইল বিক্রি করতে এলে নীপা ও রাকিবুল হাসান রাকিব (২৫) নামে তার এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কোতয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা জানান।

তিনি বলেন, ছিনতাই করা মোবাইল ফোনের ক্রেতা মোহাম্মদ আলাউদ্দিনকেও (৫০) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের সঙ্গে জড়িত রাশেদ নামে অপর একজন ‘ছিনতাইকারীকে’ গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এরা সবাই নগরীর বগারবিল ও দেওয়ানবাজার এলাকার বাসিন্দা। 

সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এরা একটি চক্র হিসেবে কাজ করত। সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে নগরীতে নির্জন স্থান দেখে লোকজনের কাছ থেকে মোবাইল ছিনতাই করে থাকে।

“এই চক্রের সদস্যরা মূলত ইয়াবায় আসক্ত এবং ইয়াবা সেবনের টাকা যোগাড়ের জন্য ছিনতাই করে করে থাকে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।” 

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, গত সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নগরীর রহমতগঞ্জ এলাকায় অরবিন্দু দত্ত (৩৪) নামে এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাত করে মোবাইল ছিনতাই করা হয়। এর আধা ঘণ্টা আগে জামালখান এলাকা থেকে অপর একজনের কাছ থেকে মোবাইল ছিনতাই হয়।

পরদিন সন্ধ্যায় নগরীর চকবাজার এলাকায় একজনের কাছ থেকে মোবাইল ছিনতাই হয়। ওই দিন রাত ৮টার দিকে নগরীর সার্সন রোডের মুখে রাজু আহাম্মদ নামে একজনকে ছুরিকাঘাত করে মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

এই সবগুলো ঘটনায় ‘নীপা ও রাকিবরা জড়িত’ জানিয়ে নোবেল চাকমা বলেন, “আমরা অরবিন্দু দত্তকে ছুরিকাঘাতের দৃশ্য সিসি ক্যামেরা থেকে সংগ্রহ করি। সেখানে দেখা যায়, রাকিব ছুরি মারছে, নীপা তাকে ধরে আছে। তাদের সন্ধানে নেমে জানতে পারি, স্টেশন রোডে সোমবার রাতে দুইবার এক ছেলে ও এক মেয়ে গিয়ে দুটি মোবাইল সেট বিক্রি করেছে।

“মঙ্গলবার রাতে মোবাইল ফোনের ক্রেতা আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তারের পর রাতে তারা আবারও মোবাইল বিক্রির জন্য গেলে নীপা ও রাকিবকে গ্রেপ্তার করা হয়।”

জিজ্ঞাসাবাদে নিপার দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “সে বাসা থেকে বিভিন্ন কাজের কথা বলে বের হয়ে ছিনতাই করে ইয়াবা সেবনের পর পুনরায় বাসায় ফিরে যেত। বাসায় ফিরে সেখানকার কারও সাথে কোনো খারাপ আচরণ করত না।

“সোমবার সন্ধ্যায় মার্কেটে যাওয়ার কথা বলে নীপা বাসা থেকে বের হয়। ফোনে যোগযোগ করে রাকিব ও রাশেদের সঙ্গে। তারা দেওয়ানবাজারে আসার পর তিনজন মিলে ৩০০ টাকায় একটি সিএনজি অটোরিকশা এক ঘণ্টার জন্য ভাড়া করে। প্রথমে জামালখানে একজনের কাছ থেকে মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে স্টেশন রোডে গিয়ে ২৬০০ টাকায় সেটি বিক্রি করে।

“এরপর আরেকটি অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে আন্দরকিল্লা দিয়ে এসে রহমতগঞ্জ কুসুমকুমারী স্কুলের সামনে থেকে অরবিন্দু দত্তকে অনুসরণ করা শুরু করে। অরবিন্দু ঢালু সড়কের ওপর দিয়ে হেঁটে উঠার সময় রাকিব ও নীপা নেমে তার সামনে দাঁড়িয়ে প্রথমে মোবাইল দেওয়ার জন্য বলে। কিন্তু অরবিন্দু রাকিবকে জাপটে ধরে ফেলায় এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পকেট থেকে মোবাইল নিয়ে আবারও অটোরিকশা করে স্টেশন রোডে চলে যায় তারা। ঘটনার সময় রাশেদ অটোরিকশা চালকের পাশে বসে তাকে নজরদারিতে রেখেছিল।”

নোবেল চাকমা বলেন, “ছিনিয়ে নেওয়া ওই মোবাইল তিন হাজার টাকায় বিক্রি করে নীপা ও রাকিব দুই হাজার টাকা করে নেয় এবং রাশেদকে দেওয়া হয় ১৬০০ টাকা। এরপর তিনজন মিলে ছয়টি ইয়াবা কিনে নগরীর দেওয়ানবাজার এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে সেবন করে নীপা তার গৃহকর্তার বাসায় ফিরে যায়।

“পরদিন সন্ধ্যার দিকে আবারও ‘একটু আসছি’ বলে বের হয়ে নীপা তার দুই সহযোগীর সাথে ছিনতাই করে।”

নীপা সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন, বগারবিল এলাকার সাগর নামে এক যুবক তাকে প্রথম ইয়াবা সেবন করান।

“পরে মামুন-ইরফানদের সঙ্গেও ইয়াবা খেয়েছি। গত এক বছরে ১৫ বার ইয়াবা খেয়েছি। ইয়াবার টাকা যোগাড়ের জন্যই ছিনতাই করতে গেছি।”

গ্রেপ্তার রাকিবও ‘মাদকাসক্ত’ জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা নোবেল চাকমা বলেন, “দিনে তার ছয়টি ইয়াবা লাগে বলে জানিয়েছে। সে আগে একটি গার্মেন্টে কাজ করলেও মাদকাসক্ত হওয়ায় তার চাকরি যায়। রাকিব ও নীপা ইয়াবায় এত আসক্ত যে দুই দিনে চারটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে, যার মধ্যে দুইজনকে ছুরিকাঘাত করেছে।”

তাদের কাছ থেকে তিনটি মোবাইল ফোন ও একটি ছূরি উদ্ধার করেছে পুলিশ।