ম্রোদের জমিতে হোটেল নির্মাণের উদ্যোগের প্রতিবাদ চট্টগ্রামে

বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে ম্রো সম্প্রদায়ের জমি দখল করে পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ উদ্যোগের প্রতিবাদে চট্টগ্রামে সংহতি সমাবেশ করেছে চার পাহাড়ি সংগঠন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2020, 04:07 PM
Updated : 13 Nov 2020, 04:07 PM

শুক্রবার বিকেলে নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ এবং হিল উইমেন্স ফেডারেশন যৌথভাবে এই কর্মসূচি পালন করে।

‘উন্নয়নের নামে পাহাড়ে ভূমি বেদখল ও উচ্ছেদ বন্ধ কর’ স্লোগান নিয়ে মিছিল পরবর্তী সমাবেশ সঞ্চালনা করেন পিসিপি নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক অমিত চাকমা, সভাপতিত্ব করেন যুব নেতা উচিংশৈ চাক শুভ।

মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান সমাবেশে বলেন, “মুক্তিযুদ্ধে আদিবাসীদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সামনে রেখে পাহাড়িদের ভূমি দখল নয়, তাদের নিজস্ব অধিকার দিতে হবে। চিম্বুক পাহাড়ে অবিলম্বে পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ ও ম্রো উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।”

অ্যাডভোকেট ভুলন লাল ভৌমিক বলেন, “বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণকে নিশ্চিহ্ন করার গভীয় ষড়যন্ত্রের অংশ। এই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের আগ্রাসনে পাহাড়ে বসবাসকারীদের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।”

ম্রো জনগোষ্ঠীর অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে পর্যটনের নামে ম্রোদের প্রথাগত ভূমি চিম্বুক পাহাড়ে নানা অংশ বেদখল হয়ে গেছে। এখন প্রায় ১০০ একর ভূমিতে সিকদার গ্রুপ ওই পাহাড়ে পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।

ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে ম্রো জনগোষ্ঠীর কাপ্রুপাড়া, কলাইপাড়া, দলাপাড়া, এরা পাড়া, রেমনাই পাড়া প্রত্যক্ষভাবে এবং ৭০ থেকে ১০০টি পাড়া পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে; প্রায় ১০ হাজার জুমচাষী উদ্বাস্তু হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে, ৪০৫টি পরিবার তাদের ভিটেমাটি হারাবে বলে তাদের শঙ্কা।

গণসংহতি আন্দোলন চট্টগ্রাম অঞ্চলের নেতা হাসান মারুফ রুমি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জাত্তিসত্তাকে ‘জোরপূর্বক উচ্ছেদ’ করা হচ্ছে।

ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, “ম্রোরা হলে চিম্বুক পাহাড়ের ভূমিপুত্র। তারা পাহাড় রক্ষায় যে আন্দোলনের সূচনা করেছে তাতে পূর্ণ সমর্থন জানাই। ম্রোদের ভূমি দখল করা হলে সমতলের মানুষরাসহ মিলে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।”

অন্যদের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক মাইদুল ইসলাম, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সুবর্ণা মজুমদার, কবি ও সাংবাদিক হাফিজ রশিদ খান, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস পপি, পিসিপি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মিটন চাকমা, পাবর্ত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সহ-সভাপতি পিংকী চাকমা সমাবেশে বক্তব্য দেন।

পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ বন্ধের দাবি ওয়ার্কার্স পার্টির
:

বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে ম্রো সম্প্রদায়ের জায়গা দখল করে পাঁচ তারকা হোটল নির্মাণ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, চট্টগ্রাম জেলা শাখা।

কমিটির সভাপতি আবু হানিফ ও সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান এক বিবৃতিতে বলেন, “ম্রোদের জমি দখল করে হোটেল নির্মাণ পার্বত্য শান্তিচুক্তির মূল লক্ষ্যের বিরোধী এবং পরিবেশ বিরোধী। এই সিন্ধান্তের ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবিক এবং পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিবে।”

বিবৃতিতে বলা হয়, “ওয়ার্কার্স পার্টি মনে করে, এই ধরনের সিন্ধান্ত শান্তিচুক্তর মূল ধারা বিরোধী, কারণ ভূমি কমিশনের মাধ্যমে এখনো ভূমির অধিকার নির্ধারিত হয়নি। সেখানে কোন গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়কে তার বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ করে মানবিক বিপর্যয় এবং একই সঙ্গে বাণিজ্যিক ট্যুরিজমের নামে পরিবেশ বিপর্যয় ডেকে আনা থেকে বিরত থাকতে হবে।”