চট্টগ্রামে দগ্ধ ৯ জনের মধ্যে বৃদ্ধার মৃত্যু

চট্টগ্রামে একটি বাসায় আগুন লেগে দগ্ধ ৯ নারী ও শিশুর মধ্যে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Nov 2020, 07:27 AM
Updated : 9 Nov 2020, 01:11 PM

সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পিয়ারা বেগম নামের ৬৫ বছর বয়সী ওই নারীর মৃত্যু হয় বলে সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ এস খালেদ জানান।

রোববার রাতে নগরীর আকবর শাহ থানার উত্তর কাট্টলীর বিশ্বাস পাড়া এলাকায় মরিয়ম ভিলা নামের একটি ছয় তলার ভবনের ষষ্ঠ তলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

দগ্ধ অন্যরা হলেন- পিয়ারা বেগমের ছেলে মিজানুর রহমান (৪২), মিজানের স্ত্রী বিবি সুলতানা মুন্নী (৩৫), দুই ছেলে মাহের (৮) ও মানহা (২), মিজানের বোন সুমাইয়া (২৫) ও ছোট ভাই সাইফুর রহমান (১৮) এবং ওই পরিবারের সাবলেট ভাড়াটে রিয়াজুল ইসলাম (২২) ও তার স্ত্রী সালমা জাহান (২১)।

বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খালেদ বলেন, পিয়ারা বেগমের শরীরের ৬০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। দগ্ধদের মধ্যে রিয়াজ ও সালমা জাহান ছাড়া বাকিদের ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আকবর শাহ থানার ওসি জহির হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ছয় তলা ভবনের ষষ্ঠ তলার একটি ফ্ল্যাটে আগুন লাগার পর স্থানীয় লোকজন দগ্ধ অবস্থায় নয়জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

ছয় তলা ওই ভবনের নিচ তলা থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত দুই ইউনিটের। আর তৃতীয় তলা থেকে ছয় তলা পর্যন্ত তিন ইউনিটের বাসা। আগুন লাগে ষষ্ঠ তলার এফ-২ ইউনিটে।

ওসি জহির জানান, মিজানুর রহমান বাসাটি ভাড়া নিয়ে এক রুমে থাকতেন, আর এক রুম রিয়াজ ও সালমাকে সাবলেট দিয়েছিলেন। শুক্রবার মিজানুরের মা, ভাই, বোন, স্ত্রী-সন্তানরা ফেনীর বাড়ি থেকে চট্টগ্রামে এসেছিলেন।

প্রতিবেশীদের বরাত দিয়ে ওসি জানান, রিয়াজ-সালমা দম্পতির চার দিন বয়েসী একটি সন্তান রয়েছে। পাশের ফ্লাটেই সালমার বাবা ও মা থাকেন। মাস কয়েক আগে পাশে মিজানুরের বাসায় একটি রুম ভাড়া নেন তারা। রোববার ঘটনার সালমার শিশু সন্তান পাশের ফ্ল্যাটে তার মায়ের কাছে ছিল।

বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার আলী জামান আল-সোলায়মান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, দগ্ধদের মধ্যে সুমাইয়ার দেহের ১৫ শতাংশ, রিয়াদের ১৮ শতাংশ, সালমা জাহানের ১২ শতাংশ, মিজানুরের ৪৮ শতাংশ, সাইফুরের ২২ শতাংশ, মাহেরের ৫ শতাংশ এবং বিবি সুলতানা ও মানহার ২০ শতাংশ করে পুড়ে গেছে।

“তাদের মধ্যে মাহের, মানহা ও সালমা জাহান ছাড়া সবার শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। সাইফুরের শরীর তুলনামূলক কম দগ্ধ হলেও তার অবস্থা বেশি আশঙ্কাজনক।

আগুনের উৎস কী?

অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা ওই বাসায় গিয়েছিলেন জানিয়ে আকবর শাহ থানার ওসি জহির হোসেন বলেন, “তাদের ধারণা, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। বাসার প্রতিটি কক্ষের বৈদ্যুতিক তার গলে গেছে। বিষয়টি আমরাও তদন্ত করে দেখছি।”

তবে দগ্ধদের পোড়ার যে ধরন, তাতে ওসির বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের ডা. আলী জামান।

তিনি বলেন, “বৈদ্যুতিক আগুনে দগ্ধদের ক্ষত বেশি হয়। আহতদের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে গ্যাসের আগুনে তারা দগ্ধ হয়েছেন। তাদের অধিকাংশের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে।"

অগ্নিকাণ্ডের পর সকালে সিআইডি’র ক্রাইম সিন ইউনিট, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) এবং বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকৌশলীরাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। 

পরির্দশন শেষে পিডিবি’র বিতরণ বিভাগ পাহাড়তলীর সহকারী প্রকৌশলী তৌফিকুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাসার বিদ্যুৎ মিটার, লাইনসহ সবকিছু ঠিক আছে। প্রাথমিকভাবে তারা নিশ্চিত হয়েছেন, ওই অগ্নিকাণ্ড বৈদ্যুতিক কারণে ঘটেনি।

“বাসার বিদ্যুত লাইনের ওয়্যারিং ঠিক আছে। প্রতিটি রুমে ফিউজ লাগানো ছিল, কিন্তু সেগুলো পোড়েনি। বিদ্যুতের সমস্যা হলে সেগুলো পুড়ে যেত। লাইট ফেটে গেলেও সেগুলোর সার্কিট ভালো আছে। বাসার যে তারগুলো পুড়ে গেছে প্রাথমিকভাবে দেখে মনে হচ্ছে অতিরিক্ত হিটের কারণে সেগুলো পুড়েছে।”

অন্যদিকে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের জিএম (ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস) প্রকৌশলী সরোয়ার হোসেন বলেন, “সকালে আমাদের লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা জানিয়েছেন, ওই বাসার গ্যাস রাইজার, গ্যাস লাইন এবং চুলার কিছুই হয়নি। সেখান থেকে আমরা বলতে পারি, গ্যাসের লাইনের কোনো ত্রুটি ছিল না।

ঘটনা তদন্তে কমিটি

অগ্নিকাণ্ডের এই ঘটনা খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন। কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে চট্টগ্রামের ডিসি ইলিয়াছ হোসাইন জানিয়েছেন।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বদিউল আলমকে প্রধান করে গঠিত এ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- পিডিবির বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ খুলশীর নির্বাহী প্রকৌশলী কেনোয়ার হোসাইন, নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (পাহাড়তলী জোন) আরিফ হোসেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথরাইজড অফিসার মো. ইলিয়াছ ও ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আলী আকবর।