শিশুটি জানল না, কী ঘটে গেল জীবনে

সাড়ে তিন বছর আগে যৌতুকের জন্য যখন বাবার হাতে মা খুন হয়, তখন শিশুটির বয়স ছিল এক বছর দুই মাস। সেই মামলায় বাবার ফাঁসির রায় ঘোষণার দিন পাঁচ বছর বয়সী শিশুটি জানলও না, কী ঘটে গেল তার জীবনে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Nov 2020, 03:05 PM
Updated : 5 Nov 2020, 03:05 PM

চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মুন্সী আব্দুল মজিদ বৃহস্পতিবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

স্ত্রী ইতি বেগমকে (২৪) হত্যার দায়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার নাসিরপুর গ্রামের সানু মিয়াকে (৩৩) রায়ে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।

আসামি সানু মিয়া রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি খন্দকার আরিফুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সানু-ইতি দম্পতির পাঁচ বছরের ছেলে মো. হামদু মিয়া এদিন আদালতে এসেছিল নানী রোকেয়া বেগমের কোলো চড়ে।

“সে শিশুসুলভভাবে হাসছিল, তার মত করে সময় কাটাচ্ছিল। সে জানতেও পারল না, তার জীবনে কী ঘটে গেছে। যৌতুকের জন্য তার মার প্রাণ গেছে তার বাবার হাতে। আজ তার বাবারও ফাঁসির রায় হল। এসব বোঝার বয়স তার হয়নি, কিন্তু একটি শিশুর জন্য কী মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল!”

আইনজীবী আরিফুল বলেন, হামদুর নানীর পরিবার অত্যন্ত গরিব। কিন্তু তারা পরম মমতায় শিশুটিকে আগলে রেখেছে। অর্থদণ্ডের টাকা পাওয়া গেলে তা ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে হামদুর নানীকে দেওয়া হবে।

“একটি পরিবার এভাবে যৌতুকের বলি হল। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আর কোনো শিশুর ক্ষেত্রে যেন এটা না ঘটে।”

যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (ক) ধারায় আদালত আসামি সানু মিয়াকে প্রাণদণ্ড দিয়েছে।

পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়ে বিচারক বলেছেন, এই টাকা আসামির সম্পত্তি থেকে সংগ্রহের পর ট্রাইব্যুনালে জমা দিতে হবে।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, আসামি সানু মিয়া কখনো ঠেলাগাড়ি চালাতেন, কখনো আবার অন্য কাজ করতেন। ২০১৪ সালে বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য স্ত্রী ইতি বেগমকে নানাভাবে চাপ দিয়ে আসছিলেন তিনি।

২০১৬ সালের নভেম্বর চট্টগ্রামের সদরঘাট থানার পশ্চিম মাদারবাড়ি এলাকার একটি ছোট ভাড়া বাসায় স্ত্রীকে নিয়ে ওঠেন সানু। হত্যাকাণ্ড ঘটে তার পরের বছর জানুয়ারিতে।

যৌতুকের জন্য ইতি বেগমকে মারধর করে সানু মিয়া হুমকি দিয়েছিলেন, টাকা এনে না দিলে তাকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ঘটনাটি টেলিফোনে বোন খুরশিদা আক্তারকে জানান ইতি।

পরদিন ১৫ জানুয়ারি বেলা দেড়টায় সানু মিয়া দাবি করেন, তার স্ত্রী ইতি বেগম আত্মহত্যা করেছেন। খবর পেয়ে খুরশিদা এবং পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ঘটনাস্থল থেকেই সানুকে আটক করা হয়।

আইনজীবী খন্দকার আরিফুল আলম বলেন, “ইতি আত্মহত্যা করেছেন বলে সানু দাবি করলেও তার হাঁটু ছিল মাটিতে লাগানো। পরে সুরতহাল ও ময়নাতদন্তে জানা যায়, শ্বাসরোধ করে ইতি বেগমকে হত্যা করা হয়েছে।”

এ ঘটনায় খুরশিদা আক্তারের করা মামলায় ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ওই বছরের ৬ জুলাই অভিযোগ গঠন করে সানু মিয়ার বিচার শুরু হয়।

রায় দেওয়ার আগে মামলায় বাদীপক্ষে মোট সাতজনের সাক্ষ্য শুনেছে আদালত। তবে সানু মিয়া কোনো সাফাই সাক্ষ্য দেননি। তার পক্ষেও কেউ সাক্ষ্য দেয়নি।