পতেঙ্গায় বিসর্জনের পালায় মহামারীমুক্তির প্রার্থনা

মহামারীমুক্ত হয়ে আগামীর পৃথিবী হবে সুন্দর বাসযোগ্য- এ প্রার্থনার সঙ্গে আগামী বছরের অপেক্ষায় থেকে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানালো চট্টগ্রামের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।

উত্তম সেন গুপ্ত পতেঙ্গা সৈকত থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Oct 2020, 01:42 PM
Updated : 26 Oct 2020, 02:25 PM

ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় দেবীর নিদ্রাভঙ্গের বন্দনায় হিন্দুদের যে উৎসবের সূচনা হয়েছিল, তার সাঙ্গ হল বিজয়া দশমীতে।

সকালে মণ্ডপে মণ্ডপে ভক্তদের পুষ্পাঞ্জলির পর দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান দুর্গোৎসব।

হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, নবমী পূজা সম্পন্নের পর দেবী দুর্গা মর্ত্য ছেড়ে নিজালয়ে যাত্রা করেন। বিজয়া দশমীতে দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় ত্রিনয়নীর পূজা।

শাস্ত্র মতে, এবার দেবী দুর্গা কৈলাশ থেকে মর্ত্যলোকে এসেছেন দোলায় (পালকী) চড়ে। আর ফিরে গেছেন গজে (হাতি)।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস মা দুর্গা গজে ফিরে গেলে রেখে যান শস্য সুন্দর বসুন্ধরা।

মহামারীর দিনে এই বছরের দুর্গাপূজা ছিল অন্য রকম। স্বাস্থ্যবিধি পালনের বাধ্যবাধকতায় আয়োজন ছিল সংক্ষিপ্ত। চিরাচরিত জৌলুস ছিল না এবার পূজায়।

সোমবার সকালে বিজয়া দশমীর অঞ্জলীর পর থেকে নগরীর বিভিন্ন মণ্ডপে দেবী দুর্গাকে তেল সিঁদুর আর পান চিনিতে অশ্রুনয়নে বিদায় জানানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়।

তারপর থেকে ট্রাকে কিংবা ভ্যানে করে দেবী দুর্গার প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন স্থানে।

চট্টগ্রাম নগরীতে প্রতিবছরের মতো এবারও বিসর্জনের প্রধান স্থান ছিল পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয় প্রতিমা। দেবীকে বিদায় জানাতে জড়ো হন হাজারো ভক্ত।

ঢাকের বাদ্য-কাঁসার ঘণ্টায় মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো সৈকত এবং আশপাশের এলাকা।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষও জড়ো হয়েছিল বিসর্জন দেখতে। শিশু, কিশোর, তরুণ, যুবক- সব বয়সী মানুষের উপস্থিতিতে মিলনমেলায় পরিণত হয় সৈকত প্রাঙ্গণ।

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।

তিনি সাংবাদিকদের জানান, করপোরেশনের পক্ষ থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ছাড়াও কালুরঘাট ও অভয়মিত্র ঘাটেও প্রতিমা বিসর্জনের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। আবার সেসব স্থানে পরিচ্ছন্নতার জন্য চসিক কর্মীদের নিয়োজিত রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি চন্দন তালুকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয় স্বাস্থ্যবিধির সব নির্দেশনা মেনে।

মোট কত প্রতিমা পতেঙ্গা সৈকতে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে, সে হিসেব চূড়ান্তভাবে রাতে জানানো সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।

প্রতিমা বিসর্জনের জন্য পতেঙ্গা এলাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস, কোস্ট গার্ড সদস্যরা নিয়োজিত ছিল।

পতেঙ্গা থানার ওসি জোবায়ের সৈয়দ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে সমুদ্র সৈকতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। প্রতিমা বিসর্জনের সাথে যুক্ত যানবাহন ছাড়া অন্যকোন যানবাহন সোমবার সৈকতে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।

চট্টগ্রাম মহানগরীতে এবারে ২৩৭ মণ্ডপে দুর্গাপূজো অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া নগরীর বাইরে জেলায় হওয়া পূজোগুলোর মূর্তি বিসর্জন স্থানীয়ভাবে হয়েছে।