চট্টগ্রামে পুজোর আকাশে মেঘের ঘনঘটা

মহামারীর কারণে স্বাস্থ্যবিধির কড়াকড়ি আর বাজেট কাটছাঁটের কারণে এমনিতেই এবার উৎসবের সেই আড়ম্বর নেই; তার সঙ্গে যোগ হয়েছে বৃষ্টির চোখ রাঙানি। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামে পূজোর আকাশে আক্ষরিত অর্থেই এবার মেঘের ঘনঘটা।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2020, 08:39 AM
Updated : 22 Oct 2020, 11:19 AM

বৃহস্পতিবার বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে বাঙালি হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজা। তার আগে বুধবার রাতে বন্দরনগরীর পূজা মণ্ডপগুলোতে মাতৃ বরণ হয়ে গেছে। তারপর সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার।

লঘুচাপের প্রভাবে বিরতিহীন বৃষ্টি চলছে চট্টগ্রামে। নানা কারণে পূজার্থীদের মনে জমে থাকা মেঘও যেন তার সঙ্গে যোগ হয়েছে।

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এবার চাপ পড়েছে পূজার বাজেটে। গত এক দশক ধরে বন্দরনগরীতে যেখানে রীতিমত প্রতিযোগিতা করে পূজা প্যান্ডেলের থিম সাজানো হত, এবার তেমন কিছু চোখে পড়ছে না। আলোকসজ্জার সেই ঝলকানিও এবার নেই।

সন্ধ্যা আরতির পর মণ্ডপ দশনার্থীদের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশনায় আয়োজকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ আরেকটু বেড়েছে।

পাথরঘাটার মেনকা সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রতি বছরের মত এবারও পূজার আয়োজন করেছে ‘আমরা ক’জনা পূজা উদযাপন পরিষদ’।

পরিষদের সদস্য কল্লোল নন্দী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রতি বছর পূজায় সপ্তমী বা নবমীতে যে কোনো একদিন প্রসাদ বিতরণ করা হত। এবার তাতে মানা আছে। সাধারণ মানের স্টেজ আর আলোকসজ্জায় এবারের পূজার আয়োজন করা হয়েছে।

“মহামারীর কারণে বাজেট কম, তাই অন্যবারের মত আয়োজন কর যায়নি। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টাও বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে।”

হাজারী লেইনের মণ্ডপ প্রতিবছর বড় বাজেটে পূজার আয়োজনের জন্য পরিচিত। সেখানেও এবার বাজেট কমে অর্ধেক।

পূজা কমিটির সভাপতি জহর লাল হাজারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গতবার বাজেট ছিল ১৫ লাখ, এবার সাত লাখ টাকা। আয়োজনে আলাদা ‘থিম’ রাখা হয়নি। আগে যে লাইট শো হত, এবার সেটাও নেই। সাত্ত্বিক নিয়ম মেনে এবার পূজা হচ্ছে।

“গতকাল কৈবল্যধামের মোহন্ত মহারাজ কালীপদ ভট্টচার্য্য পূজার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন। আজ বোধন হবে। করোনায় স্থানীয়দের মধ্যে যারা জীবিকা হারিয়েছেন, এবার শুধু তাদের মাঝে বস্ত্র বিতরণ হবে।”

প্রতিবছর দীর্ঘ ভিড় ঠেলে এই পূজা দেখতে আসত পুরো শহরের মানুষ। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন।  

জহর লাল হাজারী বলেন, “এবার দর্শনাথীদেরও আগ্রহ কম। স্বাস্থ্যবিধি মানতে প্রচারণা করছি। মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। বেশি সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক রাখা হয়েছে।”

নগরীর বন্দর এলাকার বাসিন্দা তাপস দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিবছর পূজায় কয়টা দিন পরিবারের সদস্য আর বন্ধুদের নিয়ে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে প্রতিমা দেখতাম। এবার করোনার কারণে জীবনযাত্রা তো স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। তাই পূজা ঘিরে আগ্রহ বেশি ছিল। ভেবেছিলাম পূজায় অন্তত বেড়ানো হবে।  

“কিন্তু নানা রকম নির্দেশনা আর স্বাস্থ্যবিধির কড়াকড়ি বেশি। বৃষ্টিও শুরু হয়েছে। এবার হয়ত তেমন করে আর বেড়ানো হবে না।”

অনিমেষ তালুকদার নামে আরেকজন বলেন, চাকরিজীবীরা সাধারণত সন্ধ্যার পরই পূজা দেখতে বের হন। ট্রাফিক জ্যাম ঠেলে একেকটা মণ্ডপে যেতে অনেক সময় লাগে। সন্ধ্যা আরতির পর মণ্ডপ বন্ধ হয়ে গেলে সে সুযোগ থাকবে না। 

চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় আয়োজনে হওয়া জে এম সেন হলের পূজাতেও আড়ম্বর কমানো হয়েছে।

এবার প্রতিদিনের আলোচনা সভা আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নেই। আছে শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা আর দরিদ্রদের মাঝে বস্ত্র বিতরণ।

পরিষদের সভাপতি চন্দন কুমার তালুকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘নো মাস্ক নো এন্ট্রি’ নীতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ২৭৩টি মণ্ডপের সবগুলোতে পূজার আয়োজন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। খরচ কমিয়ে সাবেকী পূজার আয়োজন এখন সবখানেই।

“সন্ধ্যা আরতির পর মণ্ডপ বন্ধ রাখার নির্দেশনা মানা হবে। আবহাওয়াও খারাপ। ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে।”

এবারের পূজায় নিরাপত্তার আয়োজন নিয়েও শঙ্কা কাজ করছে আয়োজকদের মনে।

পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্রীপ্রকাশ দাশ অসিত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতি বছরের মত এবার মণ্ডপে পুলিশ থাকছে না। বলা হয়েছে তারা পেট্রোলে থাকবে। এদিকে ফরিদপুরে মণ্ডপে প্রতিমা ভাঙার ঘটনা সবাই জেনেছি। নিরাপত্তা নিয়ে আমরা চিন্তিত। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই।”

অন্তত দিনের বেলায় মানুষ নির্বিঘ্নে মণ্ডপে যেতে পারবে কি না, সে বিষয়েও কোনো সুখবর দিতে পারছে না আবহাওয়া অফিস।

বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে চট্টগ্রামে।  

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মেঘনাদ তংচংগ্যা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, লঘুচাপের প্রভাবে আরো মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে।