চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানার চাক্তাই ভেড়া মার্কেট কলোনি সংলগ্ন নতুন ফিশারিঘাট-কোতোয়ালী সড়কের উপর শুক্রবার রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আবু তৈয়ব (৪৫) নতুন ফিশারি ঘাটে শ্রমিক সরবরাহ করতেন। পাশাপাশি নতুন তৈরি নৌযান নদীতে ভাসাতে চুক্তিভিত্তিক কাজ করতেন।
কর্ণফুলী থানার শিকলবাহা মাস্টার হাট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা তৈয়ব নতুন ফিশারী ঘাট এলাকায় আকতারের কলোনিতে পরিবারসহ ভাড়া থাকতেন।
শুক্রবার রাতে ঘটনার পর ‘প্রতিবেশীদের সাথে বিরোধের জেরে মারধরে’ তৈয়ব নিহত হন বলে পুলিশ জানিয়েছিল।
এরপর শুক্রবার রাত থেকে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, ‘পূর্ব শত্রুতার জেরে’ পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।
তবে নিহতের স্বজনদের দাবি, চাঁদা না পেয়ে ডেকে নিয়ে তৈয়বকে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তাররা হলেন- আকতার হোসেন ওরফে কসাই আকতার (৪১), সাইফুদ্দিন (৪১), রায়হান উদ্দিন রানা (২৫), আশরাফুল ইসলাম (২৮), মো. সবুজ (৩৫), আবু তাহের কালু (২০) ও হাসিনা (২৬)।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত আকতারের ভাই মুন্না ও কবির নামের দু’জন পলাতক।
সংবাদ সম্মেলনে সিএমপির উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মেহেদী হাসান বলেন, শুক্রবার রাত আটটায় ভেড়া মার্কেট এলাকা থেকে খবর দেয় গণপিটুনিতে একজন মারা গেছে।
“পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং আশেপাশের লোকজনের সাথে কথা বলে আমরা জানতে পারি- পূর্বপরিকল্পিভাবে দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে তাকে হত্যা করে গণপিটুনি বলে চালানোর চেষ্টা করা হয়। হত্যাকাণ্ড যে নয়জনের নেতৃত্বে হয়েছে তাদের সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছি।”
নিহত আবু তৈয়বের ছেলের সামনেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটে জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, নিহতের ছেলে বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছে।
“প্রাথমিকভাবে কিছু তথ্য পেয়েছি তদন্তের স্বার্থে এখনই তা প্রকাশ করতে চাই না।”
হত্যাকাণ্ডের কারণ জানতে চাইলে মেহেদী হাসান বলেন, “ওই কলোনির ইনচার্জ হাসিনার সঙ্গে নিহতের পূর্ব শত্রুতা ছিল। মাঝেমাঝেই বাক বিতণ্ডা হত। এতে হাসিনাও জড়িত।
“অনেক ধরনের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় ছিল। গতকাল সকালেও হাসিনার সঙ্গে তৈয়বের বাক বিতণ্ডা হয়। দুই পক্ষের মধ্যে দখল বেদখল নিয়ে একটা সংকট ছিল।”
তবে নিহতের স্বজনদের দাবি ভিন্ন।
সিএমপির উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) কার্যালয়ে উপস্থিত নিহতের বড় ছেলে মো. শাজাহান সাংবাদিকদের বলেন, “আমার বাবা ৪০-৫০ হাজার টাকায় একটা বোট নামাতো। তারা বলে তাদের অর্ধেক টাকা ট্যাক্স (চাঁদা) দিতে হবে। এটা নিয়ে পরশু হাতাহাতি হয়। তখন কসাই আকতার বলে যে, ‘বিচার করবে’।
“কসাই আকতার শুক্রবার তার অফিসে যেতে বলে। আমি বাবার সাথে যাই। আমরা অফিসে ঢুকতেই কসাই আকতার বলে, ‘এই ল’ (নাও)। এটা বলেই কয়েকজন রামদা, কিরিচ, বটি নিয়ে বাবাকে হামলা করে। তখন কসাই আকতার বলে, একেবারে মেরে ফেল। এসময় তার ভাই মুন্না, হাসিনাসহ চার-পাঁচজন ছিল।”
হামলার শিকার আবু তৈয়ব দৌড়ে সংলগ্ন নতুন ফিশারীঘাট-কোতোয়ালী সড়কে উঠে পড়েন। তখন প্রায় ২০-২১ জন লোক মিলে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে বলে জানান শাজাহান।
তিনি বলেন, তখন বাবাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেও পারিনি।
কর্ণফুলী নদীর তীরে সরকারি খাস জমি দখল করে গড়ে ওঠা এই আকতারের কলোনি। আকতার নিজেকে স্থানীয় ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি বলে পরিচয় দেন। সেখানে ‘সি বিচ কলোনি যুবলীগ অফিস’ নামে তার একটি কার্যালয় আছে।
শিকলবাহার আবু তৈয়ব মাস চারেক আগে ওই কলোনিতে বাসা ভাড়া নেন। তিনি কর্ণফুলী নদী ও চাক্তাই খালের সংযোগ অংশে তৈরি হওয়া মাছ ধরার বোট ও নৌযান নদীতে ভাসানোর কাজ করতেন চুক্তি ভিত্তিতে।
আকতারের কলোনির ঘরগুলোর ভাড়া তুলতেন আসামি হাসিনা।
নিহত তৈয়বের ভাতিজা মো. হোসেন বলেন, “১৫টা বোট নদীতে নামানোর কাজ পেয়েছিল চাচা (তৈয়ব)। যার অর্ধেক টাকা চাঁদা হিসেবে দাবি করেছিল আসামিরা। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার ঝগড়াও হয়। সেটা মিটমাটের কথা বলে কসাই আকতার ডেকে পাঠায় তৈয়বকে।
“ভাত খেয়ে নতুন কাপড় পড়ে ঘর থেকে বের হয়েছিল চাচা। গতকাল (শুক্রবার) চাচাত বোনের বিয়ের কথাবার্তাও হয়েছিল ছেলেপক্ষের সাথে।”
নিহত তৈয়ব দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক।
সিএমপির উপ-কমিশনার কার্যালয়ে উপস্থিত আকতার হোসেন সংবাদকর্মীদের কাছে দাবি করেন, ঘটনাস্থলে তিনি ছিলেন না। শনিবার তিনি বিষয়টা সমঝোতা করে দিবেন বলেছিলেন।
নিজেকে তিনি বক্সিরহাট ওয়ার্ড যু্বলীগের সহ-সভাপতি বলে পরিচয় দেন।
আরেক গ্রেপ্তার সাইফুদ্দিন দাবি করেন, নিহত তৈয়ব ‘ডাকাত’। ঘটনার সময়ে সেখানে না থাকলেও ৯৯৯ এ ফোন করে পুলিশকে জানাই।
“পরে পুলিশ থানায় ডেকে নিয়ে আমাকে গ্রেপ্তার করে।”
আকতারের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে ৩৫ নম্বর বক্সিরহাট ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মান্না বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আকতার ওয়ার্ড যুবলীগের কেউ না। অপরাধ থেকে বাঁচার জন্য এখন অনেকে সহ-সভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক এসব পরিচয় দেয়।”