সিটি করপোরেশনের ক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশ

মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে সিটি করপোরেশনের ক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনে আইন সংশোধনের দাবি উঠেছে সিসিসি’র প্রশাসকের গঠিত পরামর্শক কমিটির প্রথম সভায়।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Sept 2020, 03:15 PM
Updated : 26 Sept 2020, 03:15 PM

শনিবার দুপুরে নগরীর টাইগার পাসে অস্থায়ী নগর ভবনের সভায় এই দাবি তোলেন পরামর্শক কমিটি সদস্যরা।

পাশাপাশি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে বন্দরের রাজসব আয়ের হিস্যার দাবিও তোলেন এক পরামর্শক ও প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।

সভায় পরামর্শক কমিটির সদস্য ও সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘সিটি গভর্নমেন্ট গঠন ছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সার্বিক কর্তৃত্ব অর্জন অসম্ভব। কারণ চট্টগ্রামের উন্নয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল সেবার সংস্থার সমন্বয়ের নেতৃত্ব সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত মেয়রের হাতে না থাকলে তিনি হবেন ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’।

“আমি মেয়র থাকাকালে একটি অর্গানোগ্রাম তৈরি করেছিলাম। যা আজ অবধি বাস্তবায়ন হয়নি। অথচ বিএনপি সরকার ১৯৯৩ সালে আইন করে মেয়রের ক্ষমতা সীমিত করেছে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রশাসক সুজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, করপোরেশনের কর্তৃত্ব না থাকলে মানসম্মত সেবা দান সম্ভব না। তিনি ১৯৯৩ সালের অধ্যাদেশ সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন।

পরামর্শক কমিটির প্রধান সাবেক মুখ্য সচিব ও পিকেএসএফ’র এমডি মোহাম্মদ আবদুল করিম সভায় বলেন, “যে সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগাতে পারলে চট্টগ্রাম একটি আন্তর্জাতিক নগরীতে উন্নীত হবে সে ব্যাপারে উপায় অন্বেষন করা আজ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

“চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী ঘোষণার ব্যাপারে যে একটি সিদ্ধান্ত আছে, তা বাস্তবায়নের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রকল্প বাস্তবায়নে সিটি কর্পোরেশন থেকে যে ম্যাচিং ফান্ড দিতে হয় তা কমানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারি থোক বরাদ্দ পাওয়া ক্ষেত্রে জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে।”

সভায় সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, “সেবার পরিধি বিস্তৃত করতে গিয়ে সহযোগিতার পাশাপাশি অনেক বাধাও পেয়েছি। এছাড়াও গণমাধ্যমেরও অনাকাঙ্ক্ষিত সমালোচনা, তীক্ত অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছি।

“ঠিকাদার, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসর গ্রহণকালীন পাওনা বাবদ ৩৫০ কোটি টাকা দেনা ছিল। এই দেনাগুলো পরিশোধ করেছি। চলমান উন্নয়ন কাজে দেনা থাকাটা স্বাভাবিক। এর সমাধানে আর্থিক সক্ষমতা অর্জনে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পাওনাগুলো যাতে আদায় হয় সে ব্যাপারে সরকারকে সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধান তৈরি করে দিতে হবে।”

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃক্ষের সাবেক কর্মকর্তা নৌ বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কমডোর জোবায়ের আহমেদ সভায় বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের ৬ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা নিজস্ব তহবিল আছে। এ থেকে মাত্র ১ শতাংশ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে দিলে চট্টগ্রামের উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি ‘বৈপ্লবিক পরিবর্তন’ আনা সম্ভব।

“চট্টগ্রামের সামগ্রিক উন্নয়নের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের সম্পৃক্ততা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।”

প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, দেশের আমদানি-রপ্তানির ৮০ শতাংশ কার্যক্রম পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম থেকেই। তাই চট্টগ্রাম জাতীয় অর্থনীতির হৃদপিণ্ড।

“এই চট্টগ্রাম থেকে সরকার যে ট্যাক্স নিয়ে যাচ্ছে, সেখান থেকে শতকরা ১ শতাংশ দিলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক সক্ষমতার ভিত্তি সুদৃঢ় হয় এবং চট্টগ্রামের উন্নয়নে অন্য কারও উপর নির্ভরশীলতা আর দরকার পড়ে না।”

সুজন বলেন, “আর্থিক সঙ্কটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত থাকায় আন্তর্জাতিক মানের নগরীতে উন্নীত করার মতো দায়িত্ব পালনে সিসিসি ব্যর্থ হয়েছে। এটাও সত্য যে, সিসিসি’র আর্থিক সক্ষমতা অর্জনের অনেক সম্ভাবনার দুয়ার খোলা রয়েছে। নগরীর বেনিফিশিয়ারি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব আয় ও তহবিলের একটি অংশ এই নগরীর জন্য বরাদ্দ নিশ্চিত হলে নগরীকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূর হবে।”

আর্থিক অস্বচ্ছলতার কথা উল্লেখ করে সুজন বলেন, জ্বালানি খাতে প্রতি সপ্তাহে তিন লক্ষ টাকা সাশ্রয়ের ব্যবস্থা করে বাড়তি ব্যয় কিছুটা কমিয়ে আনতে পেরেছি।

সভায় নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এ্যান্ড এ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গৌতম বুদ্ধ দাশ, বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি এম এ সালাম, শিক্ষাবিদ হাসিনা জাকারিয়া, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস, রাশিয়ার অনারারি কনসাল স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সভাপতি প্রবীর কুমার সেন উপস্থিত ছিলেন।