মাহতাবকে ‘ভারমুক্ত’ করতে নাছিরের প্রস্তাব

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীকে পরবর্তী সম্মেলন পর্যন্ত সভাপতি হিসেবে পদায়নের প্রস্তাব তুলেছেন সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Sept 2020, 03:48 PM
Updated : 10 Sept 2020, 03:48 PM

বৃহস্পতিবার নগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভায় এ প্রস্তাব করেন নাছির। তখন কমিটির সদস্যরা এই প্রস্তাবে সম্মতি জানান।

প্রস্তাবটি বিবেচনার জন্য কমিটির পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ জানাবে বলে নগর নেতারা জানিয়েছেন।

২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম নগর কমিটির সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী মারা যান। তারপর ২৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম সফরে এসে প্রথম সহ-সভাপতি মাহতাবকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

মাহতাব চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর প্রয়াত জহুর আহমদ চৌধুরীর মেজ ছেলে।

২০১৩ সালের নভেম্বরে নগর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়, যা ইতোমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ।

বৃহস্পতিবারের সভার প্রস্তাব নিয়ে নগর কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতিকে পরবর্তী সম্মেলন পর্যন্ত ভারমুক্ত করতে সভায় প্রস্তাব করেছেন সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন।

“সভায় এ প্রস্তাবে উপস্থিতরা কেউ দ্বিমত করেননি। সবার সম্মতিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভার সিদ্ধান্তের বিষয়টি চিঠি দিয়ে নগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলীয় সভানেত্রীকে অনুরোধ জানানো হবে।”

নগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক চন্দন ধর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাধারণ সম্পাদক প্রস্তাব করলে অন্যরা সমর্থন করেছেন। সম্মেলন পর্যন্ত উনাকে যেন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।”

কার্যকরী কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্তের পাশাপাশি ওয়ার্ড, থানা ও ইউনিট কমিটিগুলোর মৃত, অসুস্থ ও নিস্ক্রিয় সদস্যদের পরিবর্তে কমিটির সক্ষম সদস্যদের দিয়ে শূন্য পদ পূরণের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।

নগর আওয়ামী লীগের ৪৩টি ওয়ার্ড, ১৫টি থানা ও ১২৯টি ইউনিট কমিটি আছে।

চন্দন ধর বলেন, ওয়ার্ড ও থানা কমিটিগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মারা গেছেন। সেক্ষেত্রে যথাক্রমে প্রথম সহ-সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ভারপ্রাপ্ত হিসেবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাবেন। এরকম ছয়-সাতটি পদ শূন্য আছে।

মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী

২০১৩ সালের নভেম্বরে ঘোষিত ৭১ সদস্যের নগর কমিটির মেয়াদ দলীয় গঠনতন্ত্র অনুসারে তিন বছর। সে হিসেবে বর্তমান কমিটির মেয়াদের পর আরও চার বছর পেরিয়ে গেছে।

তবে এখনও সব থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট কমিটি গঠন সম্ভব হয়নি।

সাত বছর আগে এসব কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হলে কয়েকটি ক্ষেত্রে পাল্টা কমিটিও দেখা দেয়।

চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগে প্রয়াত মহিউদ্দিন ও আ জ ম নাছিরের বিরোধ ছিল ব্যাপক আলোচিত।

২০১৩ সালে কমিটি গঠনের আগে মহিউদ্দিনের বিরোধী শিবিরে ছিলেন বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি আফসারুল আমীন ও নুরুল ইসলাম বিএসসি, কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালামসহ কয়েকজন।

তখন সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিলেন আফসারুল আমীন, খোরশেদ আলম সুজন, ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু।

জ্যেষ্ঠ নেতাদের দ্বন্দ্ব আর নানা হিসেব-নিকাশে সাধারণ সম্পাদকের পদ পান নাছির। এরপর তিনি মেয়র পদেও দলের মনোনয়নও পান।

নাছির মেয়র পদে থাকাকালে বিভিন্ন বিষয়ে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিনের বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নিয়েছিল।

২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর মহিউদ্দিন চৌধুরী মারা গেলে সেদিন রাতে তার চশমা হিলের বাসায় অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বসেছিলেন নগর কমিটির জ্যেষ্ঠ নেতারা।

সেই বৈঠকে মাহতাব চৌধুরীকে সভাপতির দায়িত্ব পালন করতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত তারা নিলেও নাছিরের অনুসারীরা তাতে শুরুতে রাজি ছিলেন না।

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এবার পিছিয়ে যাওয়া সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চেয়েও পাননি নাছির।

মেয়র পদে দলের মনোনীত নগর কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী এবং এখন প্রশাসক পদে নিয়োগ পাওয়া সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন দুজনই মহিউদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

বৃহস্পতিবার দারুল ফজল মার্কেটের দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন মাহতাব চৌধুরী।

সভায় মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম ও এম এ রশীদ, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, হাসান মাহমুদ হাসনী, শফিকুল ইসলাম, সৈয়দ হাসান মাহমুদ শমসের, শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী, মোহাম্মদ হোসেন, মানস রক্ষিত, জোবায়েরা নার্গিস খান, দেবাশীষ গুহ বুলবুল, দিদারুল আলম চৌধুরী, আবদুল আহাদ, মোহাম্মদ আবু তাহের, ফয়সাল ইকবাল চৌদুরী, শহীদুল আলম, জহরলাল হাজারী উপস্থিত ছিলেন।