চট্টগ্রামে ‘বিজয় মঞ্চের’ জায়গায় করা শিশু পার্ক সরানোর দাবি

চট্টগ্রামের পুরনো সার্কিট হাউজ প্রাঙ্গণের যে খোলা জায়গায় বিজয় মঞ্চ করে একাত্তরের রণাঙ্গনের যোদ্ধাদের নিয়ে কর্মসূচি পালন করা হত, সেখানে গড়ে তোলা শিশুপার্ক সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে একটি সংগঠন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Sept 2020, 03:23 PM
Updated : 8 Sept 2020, 03:23 PM

মঙ্গলবার সার্কিট হাউজ সংলগ্ন এলাকায় মানববন্ধন ও সমাবেশ করে তারা এ দাবি জানান।

‘জনদুভোর্গ লাঘবে জনতার ঐক্য চাই’ স্লোগানে পরিচালিত ‘নাগরিক উদ্যোগ’ নামের সংগঠনটি এই কর্মসূচির আয়োজন করে। সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) বর্তমান প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।

দায়িত্ব গ্রহণের আগ পর্যন্ত এই সংগঠনের ব্যানারে বিভিন্ন নাগরিক দাবি-দাওয়া নিয়ে কর্মসূচি পালনে সক্রিয় ছিলেন সুজন। মঙ্গলবার কর্মসূচিতে সংগঠনের অন্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশে নাগরিক উদ্যোগের সদস্য সচিব মো. হোসেন বলেন, “সম্প্রতি এই পার্কের ইজারা চুক্তির ২৫ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পরিবেশবাদীসহ চট্টগ্রামের নাগরিকরা সবাই আবেদন করেছিলেন, এই চুক্তি যেন আর বাড়ানো না হয়। কিন্তু কারও মতামতের তোয়াক্কা না করে আবারও মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

“আগে শিশু পার্ক ঘিরে লোহার গ্রিল ছিল। এখন দেওয়া হয়েছে অন্ধকারাচ্ছন্ন সীমানা প্রাচীর। এজন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য পুরাতন সার্কিট হাউস বাইরে থেকে আর দেখার সুযোগ নাই।”

প্রশাসক সুজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, “আপনি জানেন মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা মঞ্চের আলোচনা বন্ধ করার জন্য শিশু পার্ক নামক এই জঞ্জাল বানিয়েছিল বিএনপি। এই জঞ্জাল সরিয়ে ফেলুন। অপ্রয়োজনীয় এই আত্মঘাতী চুক্তি বাতিল করুন। এটি এখন সময়ের দাবি। চট্টগ্রামবাসী আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে।”

সমাবেশে লালখান বাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হাসনাত বেলাল বলেন, “১৯৯১ সালে বেগম জিয়ার বিএনপি যখন জামায়াতের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসে, এই বিজয় মেলার কার্যক্রম তাদের গাত্রদাহ হচ্ছিল। স্বাধীনতাবিরোধী জামাত চক্রের ইন্ধনে বিএনপির তৎকালীন মেয়র মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বিজয় মঞ্চের আলোচনা বন্ধ করার মানসে শিশু পার্ক নামের জঞ্জালটি সৃষ্টি করে।”

সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের কো-চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা যখন সূচনা হয় তখন এই চত্বরে নির্মিত হয়েছিল বিজয় মঞ্চ। সেই মঞ্চে সারা দেশ থেকে আসা রণাঙ্গণের বীর মুক্তিযোদ্ধারা নতুন প্রজন্মের সামনে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতেন। এই মঞ্চেই চর্চা হত মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস।”

১৯৯৪ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রাম পুরাতন সার্কিট হাউজের সামনের খোলা অংশটি ২৫ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয় ‘ভায়া মিডিয়া সার্ভিসেস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে।

২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর এই ইজারার মেয়াদ শেষ হয়। তখন বিভিন্ন মহল থেকে পার্কটির ইজারা আর না বাড়ানোর দাবি জানানো হয়।

পাশাপাশি আগের সবুজ উদ্যান ফিরিয়ে এনে ঐতিহ্য সংরক্ষণের দাবি জানানো হয়। কিন্তু আবারও ১৫ বছরের জন্য একই প্রতিষ্ঠানের কাছে ৩ একর জমিটির ইজারা নবায়ন করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।

সমন্বয়কারী মোরশেদ আলমের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাইদুর চৌধুরী, শফিউল আজম বাহার, নাজিম উদ্দিন, হাজী শের আলী সওদাগর, আবদুর রহমান মিয়া, শেখ মামুনুর রশীদ, মোহাম্মদ সেলিম, সমির মহাজন লিটন, হাসান মো. মুরাদ, মোহাম্মদ শাহজাহান, জাইদুল ইসলাম দুর্লভ, হাসান মুরাদ, আলমগীর ফেরদৌস, সাইফুল্লাহ আনসারী, রকিবুল আলম সাজ্জি, নগর ছাত্রলীগ সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু প্রমুখ।