শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে শুরু চবির অনলাইন ক্লাস

দুর্বল ইন্টারনেট সংযোগ, শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় ডিভাইসের অভাব, আর্থিক সমস্যা- এমন নানা সমস্যা নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে অনলাইনে পাঠদান।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Sept 2020, 02:34 PM
Updated : 6 Sept 2020, 02:34 PM

করোনাভাইরাস মহামারীতে বন্ধ থাকায় ‘ক্ষতি পোষাতে’ অনলাইন ক্লাস শুরু হলেও এসব সমস্যার কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর দুই সপ্তাহ পর সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো ছুটি ঘোষণা করে চবি কর্তৃপক্ষও।ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাড়ি ফিরে যান। প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস পর রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ক্লাস শুরু হয়।

তবে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ, মোবাইলে নেটওয়ার্ক, প্রয়োজনীয় ডিভাইস ও আর্থিক সমস্যার কারণে তারা অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত থাকতে পারছেন না।

বিশেষ করে দুর্বল নেটওয়ার্কের কারণে ক্লাস চলার সময় ইন্টারনেট সংযোগ বারবার বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে তাদেরকে।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফরমান উল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, অনলাইনে ক্লাস করার জন্য উৎসাহ আর আগ্রহ বসলেও হতাশ হতে হয়েছে।

“প্রথম দিকে উপস্থিতির সংখ্যাও ছিল সন্তোষজনক। কিন্তু ক্লাস শুরুর পরেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছিল। কয়েকবার যোগ দিলেও এতে মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে। অন্যান্য সহপাঠীদেরও একই অবস্থা। অনেকেই সংযোগ না পেয়ে ক্লাসে আর ফিরছে না।”

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার দুর্গম এলাকা উদালবাগান গ্রামের বাসিন্দা পালি বিভাগের শিক্ষার্থী কৈলাশ চাকমা বলেন, “গ্রামে শুধুমা টু-জি নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। এই নেটওয়ার্কে অনলাইনে ক্লাসে উপস্থিত থাকা সম্ভব না। আশপাশে ব্রডব্যান্ড সুবিধাও নেই।

“ইন্টারনেট সমস্যার জন্য অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত থাকতে পারব না, তবে লেকচারগুলো বন্ধুদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে নেব।”

দিনাজপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নের ইরশাদ আলি বলেন, “গ্রামে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। অনলাইনে ক্লাস করতে হলে তিন কিলোমিটার দূরে চাচার বাসায় যেতে হবে।

“তৃতীয় বর্ষের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষা বাকি আছে। সেগুলোর অ্যাসাইনমেন্ট যদি অনলাইনে শেষ করা যায় তাহলে হয়ত সেশনজট কমে আসবে।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, “জুম অ্যাপে ক্লাস করতে অ্যান্ড্রয়েড-৫ পয়েন্ট সিস্টেমের ফোন দরকার হয়। আমার ফোনটি ৪.৪ সিস্টেমের। তাই আজকের ক্লাসে যোগ দিতে পারিনি। নতুন ফোনের ব্যবস্থা হলে যোগ দেব।”

এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এসএম মনিরুল হাসান বলেন, রোববার প্রায় সবগুলো অনুষদে অনলাইনে পাঠদান শুরু হয়েছে। সারাদিনে প্রায় ৮৮টি ক্লাস নেওয়া হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের ডিভাইস সঙ্কট দূর করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা চাচ্ছি শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা দিতে। শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী ডিভাইসের জন্য ইউজিসিতে তালিকা পাঠানো হয়েছে।”

ইন্টারনেট সমস্যাও দূর করা হভে জানিয়ে মনিরুল বলেন, “ইন্টারনেটের সমস্যা দেশের প্রায় সব জায়গাতেই কমবেশি আছে। সেগুলো অতিক্রম করেই আমাদের পাঠদান করতে হবে। আপাতত আমরা শুরু করেছি। ইন্টারনেট প্যাকেজসহ যেসব সমস্যার সমাধান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ করতে পারবে, ধীরে ধীরে আমরা তা করার চেষ্টা করব।”