সিনহা হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা প্রত্যাশা সেনাপ্রধানের

সেনাবাহিনীর আর কাউকে যেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের ভাগ্য বরণ করতে না হয়, সেজন্য তার হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রত্যাশা করেছেন বাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2020, 11:00 AM
Updated : 2 Sept 2020, 04:56 PM

বুধবার চট্টগ্রাম সেনানিবাসে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “যারা ক্রিমিনাল তাদের উপযুক্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা সেনাবাহিনীর সার্ভিং অথবা রিটায়ার্ড কারও সাথে না ঘটে। আমি সেটা প্রত্যাশা করি।”

ঘটনার তদন্তে সন্তুষ্ট কিনা জানতে চাইলে সেনাপ্রধান বলেন, “ঘটনাটি তদন্ত হচ্ছে, এ ব্যাপারে কিছু বলা যাবে না।

“যে ঘটনাটা ঘটেছে সেটা সবাই জানে। অত্যন্ত জঘন্যতম একটা ঘটনা ঘটেছে এবং সেটার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে হবে। এটা তদন্তে বেরিয়ে আসবে এবং সাজাটা যখন হবে তাহলে সন্তুষ্টির প্রশ্ন আসবে। তার আগে সন্তুষ্টি কীভাবে বলব, বলার সুযোগ নেই।”

গত ৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

এ ঘটনায় গত ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার আসামি টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ সাত পুলিশ সদস্য পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

সিনহা নিহতের ঘটনা তদন্ত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। আগামী ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা রয়েছে ওই কমিটির।

এক প্রশ্নের উত্তরে সেনাপ্রধান বলেন, “আমরা যুগ যুগ ধরে দেখে আসছি, কোনো ঘটনা ঘটলে কেউ না কেউ এটার আনডিউ প্রিভিলেজ নিতে চায়। এবারও অনেকে চেষ্টা করেছিল। হয়ত এখনও চেষ্টা করছে। এ ধরনের ঘটনা চলতেই থাকবে। তবে সচেতন মানুষ এগুলো বোঝে। যে ঘটনা ঘটেছে অবশ্যই অত্যন্ত নৃশংস ঘটনা, ন্যক্কারজনক ঘটনা।

“শুধু সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেই ঘৃণা জানানো হয়নি, পুলিশ প্রধানও সেদিন এসেছিলেন। তারাও সে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে। সকলেই এ ঘটনার জন্য মর্মাহত হয়েছেন। এরকম একটা ঘটনাকে নিয়ে কেউ যদি অন্য কিছু করার চেষ্টা করে সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা, সেটা কাঙ্ক্ষিত নয়।”

সেনাবাহিনীর কোনো সদস্যের ‘অস্বাভাবিক’ কিছু ঘটলে নিজস্ব তদন্ত হয় জানিয়ে জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, “সেটা আমাদের ডিপার্টমেন্টাল প্রয়োজন। আমরাও সে ধরনের একটা তদন্তের নির্দেশ সাথে সাথে দিয়েছিলাম, তদন্ত হচ্ছে।”

আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সরকারকে কোনো সুপারিশ দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। কারণ এ ঘটনার পরপর সরকারের পক্ষ থেকে একটি যৌথ তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। এ তদন্ত টিমের প্রতি সেনাবাহিনী এবং আমি নিশ্চিত পুলিশ বাহিনীরও সমর্থন রয়েছে।

“এ তদন্ত দল সরকারকে যেটা উপযুক্ত মনে করবে তারা সুপারিশগুলো করবে। এখানে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সুপারিশ করার সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না। কারণ এখানে একটা যৌথ টিম গঠন করা হয়েছে এবং সেখানে আমাদের সেনাবাহিনীরও সদস্য আছে। সুতরাং আলাদাভাবে সুপারিশ করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।”

চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ছয়টি ইউনিটের রেজিমেন্টাল কালার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেনারেল আজিজ আহমেদ।

সকালে সেনাবাহিনীর ছয়টি সিগন্যাল ব্যাটালিয়ন ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৩ বীর কালার প্যারেডে অংশ নেয় এবং প্রধান অতিথির কাছ থেকে রেজিমেন্টাল পতাকা গ্রহণ করে।

এ সময় সেনাবাহিনী প্রধান সবাইকে ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, পারস্পরিক বিশ্বাস, সহমর্মিতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রেখে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সৃশৃঙ্খল, দক্ষ ও যোগ্য সেনা সদস্য হিসেবে গড়ে ওঠার আহ্বান জানান।

পুরনো খবর