সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নে একমত সুজন-ডলফিন

সমন্বয়ের মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে একমত হয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ ডলফিন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Sept 2020, 04:34 PM
Updated : 1 Sept 2020, 04:34 PM

মঙ্গলবার বিকালে সিডিএ ভবনে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে দুই প্রতিষ্ঠান প্রধানের সাক্ষাতে এ বিষয়ে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তারা।

এরআগে গত কয়েক বছর ধরে আগের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং আগের সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের মধ্যে মতবিরোধ ছিল প্রকাশ্য।

সিসিসি’র পরিবর্তে সিডিএ’র অধীনে জলাবদ্ধতা নিরসনের মেগাপ্রকল্প অনুমোদন এবং এর বাস্তবায়ন নিয়ে দুই নেতার বিরোধ ছিল চট্টগ্রামের রাজনৈতিক মহলে আলোচ্য।

এমনকি জলাবদ্ধতার প্রকল্পের ‘অসঙ্গতি’ আছে বলেও মত দিয়েছিলেন নাছির। পরে অবশ্য ‘শতভাগ’ সহযোগিতার আশ্বাসও দেন।

মঙ্গলবারের সভায় প্রশাসক সুজন বলেন, “আজ থেকে সিডিএ ও সিটি কর্পোরেশন পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাবে। চট্টগ্রামের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুবই আন্তরিক ও সংবেদনশীল। তাই সুদূর প্রসারী, অবকাঠামোগত ও দৃশ্যমান উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট বরাদ্দ দিয়ে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের অনুমোদন দিয়েছেন।

“এই বিপুল পরিমাণ বরাদ্দের যথার্থ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চট্টগ্রামবাসীর আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে হবে। নগরীর প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। শুধুমাত্র সমন্বয়হীনতার কারণেই এখন পর্যন্ত জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী কোন সমাধান হয়নি।”

সুজন বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সমস্যা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, সেনাবাহিনী, ওয়াসা, ও সিটি কর্পারেশনকে একাধিক মেগা প্রকল্প দিয়েছেন। এসকল প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চসিকের সাথে সমন্বয় সাধানের বিষয়টিও তিনি নির্ধারণ করে দিয়েছেন।”

নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, আউটার রিং রোডসহ বেশ কিছু বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ।

জলাবদ্ধতাসহ অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়নে সিসিসি’র যে জনবল ও অভিজ্ঞতা রয়েছে তা অন্য কোন সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নেই দাবি করে সুজন বলেন, “তাই এই সমস্ত প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা প্রদানের জন্য সিসিসি মুখিয়ে আছে।”

“চট্টগ্রাম উন্ননের সাথে সংশ্লিষ্ট ২৩ টি সংস্থা প্রধানদের নিয়ে একটি সমন্বয় কমিটি হবে এবং একটি করে মাসকি সভা হবে। এতে পারষ্পরিক দূরত্ব কমে আসবে।”  

বৈঠকে সিডিএ চেয়াম্যান জহিরুল আলম দোভাষ ডলফিন বলেন, “চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই চট্টগ্রামের উন্নয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সেবা সংস্থার সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা শুরু করি। ২০২০ সালের শুরুতে আমার এই সমন্বয় প্রচেষ্টা সফল হয় এবং এর সুফলও পাচ্ছি।

“আমি আন্তরিকভাবে পারস্পরিক সমন্বয় ও সহযোগিতাকে গুরুত্ব দিই। আমরা যদি পরস্পর আন্তরিক হই তাহলে সমন্বয় সাধনের ক্ষেত্রে কোন সংকট থাকবে না। প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে নাগরিক দূর্ভোগ যেন প্রলম্বিত না হয়।”

বৈঠকে সিডিএ সচিব মোহম্মদ সাইফুল আলম চৌধুরী, প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস্, সিসিসি’র প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমদ, প্রশাসকের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম, চউকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এএএম হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

বন্দর ও রেলের জমিতে আয়বর্ধক প্রকল্পের প্রস্তাব

চট্টগ্রাম বন্দর ও রেলের অব্যবহৃত জমিতে আয়বর্ধক প্রকল্প চান প্রশাসক সুজন।

মঙ্গলবার চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে সুজন বলেন, “নগরীর সিহংভাগ ভূমি বন্দর ও রেলওয়ের মালিকানাধীন। এই ভূমির বিরাট অংশ অবৈধ দখলদারদের হাতে। এবং কর্ণফুলীর তীরবর্তী বা ভরাট হয়ে যাওয়া অংশ যেগুলোর মালিকানা বন্দর ও জেলা প্রশাসনের সেগুলোরও অধিকাংশ জায়গা বেদখল হয়ে আছে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রাণ শক্তি কর্ণফুলী নদী বিপন্ন।

“রেল ও বন্দরের যেসমস্ত জায়গা অব্যবহৃত যা অবৈধ দখলদারদের হাতে সেগুলো পুনরুদ্ধার করে জেলা প্রশাসনের সাথে পার্ক, বিনোদনকেন্দ্র ও আয়বর্ধক প্রকল্প গ্রহণ করতে পারে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন উদ্যোগী হলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।”

এসময় ফয়’স লেককে ভাটিয়ারী লেক পর্যন্ত সম্প্রসারিত করে মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রসহ বাণিজ্যিক পর্যটন স্থাপনা গড়া, সীতাকুণ্ডের পাহাড়ী ঢালুতে প্রাকৃতিক পানি সংরক্ষণ কেন্দ্র তৈরী করে পন্যবাহী বিদেশি জাহাজে মিঠাপানি সরবরাহ, নগরীতে স্থায়ী পরিবহন পার্কিং ও টার্মিনাল নির্মাণসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ কামাল হোসেন ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) আবু হাসান সিদ্দিক উপস্থিত ছিলেন।