মহামারীকালে পেশা বদলাচ্ছে মৃৎশিল্পী-বাদ্যযন্ত্র নির্মাতারা

করোনাভাইরাস মহামারীকালে লোকজ ও মৃৎশিল্পী, বাদ্যযন্ত্র নির্মাতারা জীবিকার তাগিদে পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 August 2020, 06:22 PM
Updated : 31 August 2020, 06:22 PM

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব থিয়েটার আর্টসের (বিটা) এক গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, এসব পেশায় কী পরিমাণ শিল্পী বা পেশাজীবী রয়েছেন তার কোনো সরকারি হিসেবও নেই। তারা সরকারি কোনো প্রণোদনাও পাননি।

বিটা গত জুন থেকে অগাস্ট পর্যন্ত দেশের ৪৭টি জেলার ৩০০ শিল্পী বা সৃজনশীল পেশায় জড়িত লোকজনের উপর অনলাইন সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে এই গবেষণা চালায়।

সোমবার চট্টগ্রামে অনলাইনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ‘করোনাকালীন পরিস্থিতি এবং তৎপরবর্তী প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতির সাথে যুক্ত মাঠপর্যায়ের শিল্পীদের অবস্থা ও অবস্থান মূল্যায়ন’ শীর্ষক গবেষণার ফল প্রকাশ করা হয়।

বিটার নির্বাহী পরিচালক শিশির দত্ত গবেষণার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। বিটার সমন্বয়কারী অশোক বড়ুয়াও গবেষণার কারণ এবং প্রান্তিক পর্যায়ে শিল্পীদের দুরবস্থার দিক তুলে ধরেন।

শিশির দত্ত বলেন, “লোকশিল্পী, বাদ্যযন্ত্র নির্মাতা, মৃৎশিল্পীসহ বিভিন্ন গান, নাচ কিংবা শিল্পের অন্যান্য মাধ্যমের শিল্পীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তারা সরকারি বেসরকারি প্রণোদনা পায়নি।

“তাই আমরা চেয়েছি তাদের দিকটি তুলে ধরতে। তাদের কোনো তালিকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে নেই। এই গবেষণার মাধ্যমে সার্বিকভাবে একটা চিত্র পাওয়া গেছে।”

তিনি বলেন, করোনাকালের ক্ষতি পোষাতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ দরকার। এতে অন্তত সৃজনশীল পেশায় নিয়োজিত এসব শিল্পী বা নির্মাতারা তাদের পেশাটিকে ধরে রাখতে সক্ষম হবে।

গবেষণায় বিভিন্ন পর্যায়ের শিল্পীদের ছয়টি ভাগে ভাগ করে গবেষণা চলে। এর মধ্যে সংস্কৃতিকর্মীর মধ্যে থিয়েটার কর্মী, আবৃত্তি শিল্পী, চিত্রশিল্পী, নৃত্য ও গানের পাশাপাশি লোকজশিল্পীরা রয়েছেন।

এর বাইরে বাদ্যযন্ত্র নির্মাতা, মৃৎশিল্পী এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সংশ্লিষ্ট নেপথ্যের কলাকুশলীরা গবেষণার অংশ ছিলেন।

করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে লোকশিল্পীদের প্রায় ২১ শতাংশ পেশা পরিবর্তনের কথা ভাবছে। ৪৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ লোকশিল্পী এই শিল্পকে তাদের একমাত্র আয়ের উৎস হিসেবে বিবেচনা করেছেন। তাদের আয় ৯১ শতাংশ কমে গেছে।

৫০ শতাংশ প্রান্তিক পর্যায়ের লোকশিল্পী সরকারি, বেসকারি পর্যায়ে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাননি।

গবেষণায় দেখা গেছে, মৃৎশিল্পের ২২ শতাংশ শিল্পী অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়েছেন। আয় কমেছে ৯৪ দশমিক ২৭ শতাংশের।

মৃৎশিল্পীদের মধ্যে প্রতিমা কারিগরদের আয় ৯৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ, তৈজসপত্র কারিগরদের আয় ৮৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ কমেছে।

বাদ্যযন্ত্র নির্মাতারা ২০ শতাংশ পেশা পরিবর্তনের পক্ষে রয়েছেন। আয়ের অবনমনের হার ৮৪ শতাংশ। পেশা ছেড়ে অনেকে অটোরিকশা চালানোর পাশাপাশি সবজিও বিক্রি করার বিষয়টি উঠে এসেছে।

নগরকেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক শিল্পীদের ৫২ শতাংশ এটাকে পেশা হিসেবে নিয়ে জীবনযাপন করেন। করোনাভাইরাস সঙ্কটে তাদের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। ৬৬ শতাংশ শিল্পী কোনো সহায়তা পাননি।

সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আলোকসজ্জা, মঞ্চসজ্জা কিংবা শব্দযন্ত্রে জড়িতদের ৬৫ শতাংশ কোনো সহযোগিতা পায়নি।

গবেষণার সুপারিশে বলা হয়েছে, মৃৎশিল্পী, বাদ্যযন্ত্র নির্মাতা, লোকজ শিল্পী এবং যান্ত্রিক কলাকুশলীসহ সকল অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্পীদের সরকারিভাবে শিল্পী হিসেবে ঘোষণা করে তাদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য সম্বলিত ডাটাবেইজ প্রণয়ন করা দরকার।

ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পীদের ও শিল্পের ক্ষতির পরিমাণ মূল্যায়ন করে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে সুপারিশ করা হয়।

এ ছাড়া সরকারি উদ্যোগে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় সাংস্কৃতিক মেলার আয়োজন করে করোনাকালের ক্ষতি কাটিয়ে ওটা সম্ভব বলে সুপারিশে বলা হয়।