চমেকে ছাত্রাবাসে মারামারি: এবার আরেক পক্ষের মামলা

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসে মারামারির ঘটনায় এবার ১২ শিক্ষার্থীকে আসামি করে পাল্টার মামলা করেছে ছাত্রলীগের অন্য পক্ষ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 August 2020, 03:43 PM
Updated : 27 August 2020, 03:43 PM

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালতে বুধবার মামলাটি করা হয়। মামলার বাদী অনির্বান দে বিডিএস ২৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।

মামলার আসামিরা হলেন শাওন দত্ত, ওবায়দুল হক, মিসবাহ উদ্দীন জিম, শাহরিয়ার ইসলাম ইমন, কাজী সারওয়ার ফারুকী, সুমিত চক্রবর্তী, মো. বুলবুল আহমেদ, মাহমুদুল হাসান সৈকত, মুশফিকুল ইসলাম আরাফ, রিয়াজুল ইসলাম জয়, অভিজিৎ দাশ ও আতাউল্লাহ বোখারী।

আসামিরা সবাই মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থী।

বাদীর আইনজীবী চন্দন বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মূলত পূর্ব শত্রুতার জেরে এই হামলা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে আগে পাঁচলাইশ ও চকবাজার থানায় মামলা হয়েছিল। বাদীকে মারধর করে গুরুতর জখম, অপহরণ করে হত্যাচেষ্টা এবং মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে নতুন মামলায়।

“আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ১৯ অক্টোবর মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত।”

মামলার এজাহারে বলা হয়, বাদী অনির্বাণ দে আসন্ন চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার জন্য ১৩ অগাস্ট দুপুরে ছাত্রাবাসে ইন্টার্ন চিকিৎসক আবদুস সামিরের কাছে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পরমার্শ নিতে গিয়েছিলেন। তখন শাওন দত্ত, ওবায়দুল হক ও মিসবাহ উদ্দীন জিম লোহার রড, হকিস্টিক ও লাঠিসোঁটা দিয়ে তার উপর হামলা চালায়।

এই মামলার বাদী অনির্বাণ সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী এবং আসামিরা সবাই শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

এরআগে একই ঘটনায় ২৪ অগাস্ট একই আদালতে অর্নিবাণ দেসহ ২৬ জনকে আসামি করে মামলা করেছিলেন বিডিএস শিক্ষার্থী শাওন দত্ত। ওই মামলার আসামিদের মধ্যে ১১ জন ছিলেন শিক্ষানবিস চিকিৎসক।

বুধবার অনির্বান দের করা মামলায় শাওন দত্তকে আসামি করা হয়েছে। পাশাপাশি শাওন দত্তের করা মামলায় যাদের সাক্ষী করা হয়েছিলেন, অর্নিবাণের মামলায় তারাও আসামি।

গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকবার মারামারিতে জড়িয়েছে চমেক ছাত্রলীগের দুই অংশ (ফাইল ছবি)

গত ১৩ অগাস্ট বিকেলে চমেক প্রধান ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে মারামারি হয়।

ওই ঘটনার বিষয়ে উভয় পক্ষ চকবাজার থানায় অভিযোগ করে। এরপর ১৩ অগাস্ট রাতে চকবাজারের গুলজার মোড়ে হামলায় আহত হন ডা. ‍ওসমান গণি ও চমেক ছাত্র সংসদের সাহিত্য সম্পাদক সানি হাসনাইন প্রান্তিক।

সে ঘটনায় ১৩ অগাস্ট রাতে চকবাজার থানায় ২১ জনকে আসামি করে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের পক্ষে মামলা করেন ডা. আউয়াল রাফি।

ওই মামলার পর ১১ জনকে জয় নগর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ যারা পরদিন জামিনে মুক্ত হন।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর চমেক ছাত্রাবাস থেকে বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা চলে যান। গতমাস থেকে হাসপাতালের কাজে যোগ দেওয়া ইন্টার্ন চিকিৎসকরা শুধু ওই ছাত্রাবাসে ছিলেন।

দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীদের হাতে ছিল। সম্প্রতি ছাত্রলীগের অন্য অংশটি ক্যাম্পাসে তাদের অবস্থান জোরালো করার চেষ্টা করে।

এ নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে দুই পক্ষের মধ্যে একাধিকবার বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে।

এর আগে গত ১২ জুলাই নওফেল ও সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুটি হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা দিতে যান। তারা বেরিয়ে যাওয়ার পর দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়।

সেদিন দুই পক্ষের কয়েকজন আহত হন। পরে পাল্টাপাল্টি মামলাও হয়।

এ নিয়ে ১২ জুলাই ও ১৩ অগাস্টের ঘটনায় মোট পাঁচটি মামলা হল।