সিসিসি: দায়ের ভারে ন্যুব্জ, টাকার খোঁজে সুজন

বকেয়া পরিশোধ, মশা নিধন ও বেহাল সড়ক সংস্কারে ৩৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সাথে সাক্ষাত করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 August 2020, 07:01 PM
Updated : 27 August 2020, 11:34 AM

বুধবার ঢাকায় গিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও সচিবের সাথে দেখা করার পাশাপাশি নৌপরবিহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেও সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

সুজন জানান, এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) ৮৫০ কোটি টাকা দায়ের তথ্য পেয়েছেন তিনি।

তিনি বলছেন, ‘এত দেনার বোঝা মাথায় নিয়ে’ করপোরেশনের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানো ‘অত্যন্ত কঠিন’। পাশাপাশি টাকা না পেলে মশা নিধন, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও সড়ক সংস্কার চালানো ‘প্রায় অসম্ভব’।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের আগে গত সপ্তাহে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে তিনটি উপ-আনুষ্ঠানিক পত্র (ডিও) দিয়েছিলেন সুজন।

এসব চিঠিতে ঠিকাদারের বকেয়া বিল পরিশোধের জন্য ২৯৩ কোটি টাকা, মশা নিধন ও পরিচ্ছন্নতার জন্য ২০ কোটি টাকা এবং সড়ক সংস্কারের জন্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়।

বুধবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সাথে সাক্ষাতের বিষয়টি জানিয়ে সুজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের ঠিকাদাররা টাকা পাবে। কর্মচারীদের পাওনা প্রায় ১৫০ কোটি টাকার মত। ২০১৫ সাল থেকে তাদের গ্র্যাচুইটি ও প্রভিডেন্ড ফান্ডের অর্ধেক বকেয়া।

“উনারা (মন্ত্রী ও সচিব) বলেছেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ে টাকা চেয়ে লিখেছেন। চেষ্টা করবেন সর্বোচ্চ সহায়তা করতে।”

সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের আগে প্রশাসকের অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব পাওয়া সুজন বলেন, “নগরবাসী মশার যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছে। সড়কে খানাখন্দ। কিন্তু টাকা না থাকলে এসব কাজ আগানো কঠিন। এগুলো তো অল্প টাকার বিষয় না।”

এর আগে গত ৪ অগাস্ট বিদায়ী মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন জানিয়েছিলেন, সিটি করপোরেশনের দায়ের পরিমাণ প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। যার মধ্যে ৫০০ কোটি টাকার মত প্রকল্পের বিপরীতে এবং বাকি ৩০০ কোটি টাকা সাধারণ দায়।

বিগত মেয়রদের আমলের প্রায় ২৯৫ কোটি টাকা দায় শোধ করেছিলেন বলেও দাবি করেন নাছির।

নৌপরবিহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সাথে দেখা করেও সহায়তা চাওয়ার কথা জানান সুজন।

“উনাকে বলেছি, চট্টগ্রামের ভৌগলিক অবস্থানের মূল বেনিফিশারি বন্দর এবং জাতীয় অর্থনীতির প্রাণও বন্দর। নগরীর ৮০ শতাংশ রাস্তার মূল ব্যবহারকারীও বন্দর। বন্দরকে সুন্দর রাখতে হলে নগরীকেও ‍সুন্দর থাকতে হবে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন

“উনি এতে একমত হয়েছেন। উনার সহায়তা চেয়েছি। উনি আশ্বাস দিয়েছেন।”

কী ধরনের সহায়তা চেয়েছেন প্রশ্ন করলে সুজন বলেন, নগরবাসী ১৭ শতাংশ হারে হোল্ডিং ট্যাক্স দেয়। বন্দর দেয় থোক হিসেবে। নগরবাসী যে হারে দেয়, সেই হারে দিলেও সিটি করপোরেশনের আয় বাড়ে। সেটাই তিনি নৌপরবিহন প্রতিমন্ত্রীর কাছে চেয়েছেন।

“দেশের সিংহভাগ আমদানি-রপ্তানি হয় চট্টগ্রাম দিয়ে। এতে কাস্টমসও অনেক আয় করে। তারাও কিছু দিক (সিটি ট্যাক্স হিসেবে)। শহরের সুবিধা ভোগ করলে কিছু কন্ট্রিবিউট তো করা উচিত।”

গত অর্থবছরের হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ বন্দর কর্তপক্ষ ৮ জুলাই সিটি করপোরেশনকে ৩৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা পরিশোধ করে। এর আগে ২০১৯ সালে ৩০ কোটি এবং ২০১৬ সালে ৩৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স দিয়েছিল বন্দর।

গত ৪ অগাস্ট চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে নিজের মেয়াদের শেষ বাজেট ঘোষণা করেন আ জ ম নাছির।

২০২০-২১ অর্থ বছরের জন্য দুই হাজার ৪৩৬ কোটি ৩০ লাখ টাকার এই বাজেটে ৭৯০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় ধরা হয় দায় শোধে।

পাশাপাশি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা ও পারিশ্রমিক বাবদ ব্যয় ধরা হয় ২৯০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতার এই টাকা করপোরেশনের নিজস্ব আয় থেকে পরিশোধ করতে হয়।

২০১৯-২০ অর্থ বছরে সব খাত মিলিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের রাজস্ব আদায় হয় ২৫৩ কোটি সাত লাখ টাকা।

২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেটে কর ও অভিকর খাতে ১৯৯ কোটি ১৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

তার আগে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে এ খাতে ২০১ কোটি টাকা পাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে মাত্র ৫৩ কোটি টাকা আদায় হয়েছিল।