চমেক ছাত্রাবাসে মারামারি নিয়ে পাল্টা মামলা

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনায় শিক্ষানবিস চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 August 2020, 02:43 PM
Updated : 24 August 2020, 02:43 PM

সোমবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম শফি উদ্দিনের আদালতে মামলা করেন চমেক বিডিএসের ২৯ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাওন দত্ত।

মামলার আসামিদের মধ্যে ১১ জন শিক্ষানবিস চিকিৎসক এবং বাকিরা চমেকের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থী।

এই মামলার বাদী শাওন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী। আসামিরা সবাই চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী।

গত ১৩ অগাস্ট ছাত্রাবাসে সংঘর্ষের পর নাছিরের অনুসারীরা ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পক্ষে মামলা করেছিলেন নাছিরের অনুসারী ডা. এম এ আউয়াল রাফি।

সোমবার করা শাওনের মামলায় তাকেই আসামি করা হয়েছে।

মামলার আসামি অন্য শিক্ষানবিস চিকিৎসকরা হলেন- ডা. হাবিবুর রহমান, ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব ডা. তাজওয়ার রহমান অয়ন ও আহ্বায়ক ডা. ওসমান গণি, ডা. ইমতিয়াজ উদ্দিন মানিক, ডা, মাসুম বিল্লাহ মাহিন, ডা. ফয়সাল আহমেদ, ডা. আসিফ আনজুম রিফাত, ডা. অতন্দ্র আকাশ, ডা. নূর মোহাম্মদ তানজিম ও ডা. এ এল এন এস শাহরিয়ার।

আসামির তালিকায়  রয়েছেন- আল আমিন ইসলাম শিমুল, শোয়াইব আলী খান, রাহাত জামান, সানি হাসনাইন প্রান্তিক, মাহাদী বিন হাসিম, এম এ কাইয়ুম ইমন, মিনহাজ আরমান লিখন, মো. হাসিবুল ইসলাম, মঈদ সাকিব, আহমেদ ফয়সাল, এস এম জিয়াউদ্দীন, সাহেদ কামাল, এইচ আর মাহফুজুর রহমান, আহসানুল করিম মাহরুস এবং অনির্বাণ দে।

শাওনের আইনজীবী শাহরিয়ার ইয়াসির আরাফাত তানিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছে। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে তা তদন্ত করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন।”

গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকবার মারামারিতে জড়িয়েছে চমেক ছাত্রলীগের দুই অংশ (ফাইল ছবি)

গত ১৩ অগাস্ট বিকালে চমেক প্রধান ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে মারামারি হয়। ওই ঘটনার বিষয়ে উভয় পক্ষ চকবাজার থানায় অভিযোগ করে।

এরপর ১৩ অগাস্ট রাতে চকবাজারের গুলজার মোড়ে হামলায় আহত হন ডা. ‍ওসমান গণি ও চমেক ছাত্র সংসদের সাহিত্য সম্পাদক সানি হাসনাইন প্রান্তিক।

সে ঘটনায় ১৩ অগাস্ট রাতে চকবাজার থানায় ২১ জনকে আসামি করে মামলা করেন ডা. আউয়াল রাফি। ওই মামলার পর ১১ জনকে জয় নগর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ, যারা পরদিন জামিনে মুক্ত হন।

সোমবার করা মামলায় শাওন দত্ত অভিযোগ করেন, শোক দিবসের মিলাদ মাহফিলের প্রাক প্রস্তুতি হিসেবে ছাত্রবাসারে লবিতে সমবেত হয়েছিলেন তারা। দীর্ঘদিন ছাত্রাবাসে না থাকায় তারা নিজ নিজ কক্ষে বই ও জিনিসপত্র আনতে যান এবং ফেরার পথে লবিতে তাদের উপর ৩০-৩৫ জন পরিকল্পিতভাবে রামদা, হকি স্টিক, কিরিচ, লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়।

হামলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে বোখারি নামের এক শিক্ষার্থীর বাম কান রক্তাক্ত হয়। তাকে রক্ষা করতে গেলে আউয়াল রাফি হকিস্টিক দিয়ে বাদীর বাম কাঁধে গুরুতর জখম করেন বলে অভিযোগ করা হয় মামলায়।

এজাহারে অভিযোগ করা হয়, অনির্বান দে হকিস্টিক দিয়ে মাথায় এবং মাহাদী বিন হাসিম, কাইয়ুম ইমন ও হাসিবুল ইসলাম কিল, ঘুষি ও লাথি মারে বাদী পক্ষের কর্মীদের উপর।

এজাহারে শাওন দে বলেন, “ছাত্ররা জড়ো হয়ে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় অতীতে করা মামলা তুলে না নিলে বাদীর পরিবারের সদস্যদের আগুনে পুড়িয়ে লাশ গুম করার হুমকি দেয়। এরপর চমেক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গেলেও আসামিরা বাধা দেয়।”

করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর চমেক ছাত্রাবাস থেকে বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা চলে যান। গতমাস থেকে হাসপাতালের কাজে যোগ দেওয়া ইন্টার্ন চিকিৎসকরা শুধু ওই ছাত্রাবাসে ছিলেন।

দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ আ জ ম নাছিরের অনুসারীদের হাতে ছিল। সম্প্রতি ছাত্রলীগের অন্য অংশটি ক্যাম্পাসে তাদের অবস্থান জোরালো করার চেষ্টা করে।

এ নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে দুই পক্ষের মধ্যে একাধিকবার বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে।

১৩ অগাস্টের ঘটনার পর ১৪ অগাস্ট কর্মবিরতির ডাক দেন শিক্ষানবিশ ডাক্তাররা। পরে সেদিন রাত সাড়ে ১০টায় তারা কর্মবিরতি স্থগিত করেন।

এর আগে গত ১২ জুলাই নওফেল ও সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুটি হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা দিতে যান। তারা বেরিয়ে যাওয়ার পর দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়।

সেদিন দুই পক্ষের কয়েকজন আহত হন। পরে পাল্টাপাল্টি মামলাও হয়।

এর আগেও কয়েকবার চট্টগ্রাম-৯ আসনের (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) সাংসদ নওফেল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে গেলে নাছির অনুসারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তার গাড়ি ঘিরে স্লোগান দেওয়াসহ নানাভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন।