পূর্ণাঙ্গ বোনাসের দাবিতে ঈদের আগে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে) দৈনিক আজাদী পত্রিকার মালিক ও সম্পাদক এম এ মালেকের বাসা ঘেরাও করায় পত্রিকা প্রকাশনা বন্ধ রাখে চট্টগ্রাম নিউজ পেপার অ্যালায়েন্স (সিএনএ)।
চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক আজাদী, দৈনিক পূর্বকোণ, দৈনিক পূর্বদেশ, সুপ্রভাত বাংলাদেশ, বীর চট্টগ্রাম মঞ্চ পত্রিকাগুলো ঈদের ছুটির আগে দুই দিন প্রকাশিত হয়নি।
ঈদের ছুটি শেষে গত ৪ অগাস্ট বিভিন্ন সংবাদপত্র অফিস খুললেও চট্টগ্রামের কোনো আঞ্চলিক পত্রিকার কার্যালয় খোলেনি এবং প্রিন্ট ভার্সনের পাশাপাশি অনলাইন সংস্করণও বন্ধ রেখেছে।
গত মার্চ মাস থেকে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর থেকে সারা দেশের মতো চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পত্রিকাগুলোরও বিক্রি কমে আসে ৯০ শতাংশের কাছাকাছি। এই অবস্থায় দেশের গণমাধ্যমগুলোতে বিজ্ঞাপনের পরিমাণও কমে গেছে।
লোকসানের ধাক্কা সামাল দিতে প্রিন্ট সংস্করণ বন্ধ রাখে কয়েকটি জাতীয় পত্রিকা। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক, অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় দুই ঈদের ৫০ শতাংশ বোনাস কাটাসহ সাংবাদিকদের বেতন কমানোরও সিদ্ধান্ত নেয়।
মহামারীর ধাক্কা সামাল দিয়ে উঠে আসার সময় গত ২৯ জুলাই নগরীর খলিফা পট্টি এলাকায় দৈনিক আজাদীর মালিক ও সম্পাদক মালেকের বাসা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন।
ওই দিন রাতে আজাদীসহ অন্য পত্রিকাগুলোতে সাংবাদিক কর্মচারীরা কাজ করলেও সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন সিএনএ-র সিদ্ধান্তে ৩০ ও ৩১ জুলাই চট্টগ্রামের কোনো আঞ্চলিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়নি। এরপর চার দিনের ঈদের ছুটি শেষেও গত মঙ্গলবার থেকে পত্রিকাগুলোর কার্যালয় এবং প্রকাশনাও বন্ধ আছে।
২৯ জুলাই আজাদী মালিকের বাসা ঘেরাওয়ের পর ৩০ জুলাই সকালে দৈনিক পূর্বকোণ ও বিকালে দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার মালিক-সম্পাদকের বাসা ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ছিল চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের। কিন্তু পূর্ব ঘোষণা ছাড়া পত্রিকা প্রকাশনা বন্ধ করে দেওয়ায় সিইউজে’র পক্ষ থেকে অন্য কর্মসূচিগুলো স্থগিত করা হয়।
ঈদের ছুটির পর চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন পত্রিকা প্রকাশের দাবিতে সমাবেশ আয়োজন করে।
দৈনিক আজাদীর প্রধান প্রতিবেদক হাসান আকবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঈদের আগে ও পরে আমরা সাংবাদিকরা সম্পাদকের সাথে একাধিবার কথা বলেছি। কিন্তু উনি তার অবস্থানে দৃঢ় থেকে পত্রিকা প্রকাশ না করার কথা জানিয়েছেন।
“এই অবস্থায় গত ৬ অগাস্ট আমরা দৈনিক আজাদীর সাংবাদিক, কর্মচারীরা বৈঠক করে উদ্ভুত পরিস্থিতির সুরাহার জন্য সিইউজে নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ করেছি।”
হাসান আকবর বলেন, “করোনাকালীন সময়েও আজাদীর সাংবাদিক-কর্মচারীরা প্রতিমাসের ৭ তারিখে বেতন পেয়েছি। কিন্তু পত্রিকা বন্ধ থাকায় এই মাসে আমরা এখনও বেতন পাইনি।”
সমাবেশের দুই দিন পর আজাদী সম্পাদক এমএ মালেক বাসার সামনে ওই সমাবেশ থেকে কটূক্তি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “আমার প্রতিষ্ঠানে কোনো গোলমাল থাকলে আমার সাথে কথা বলতে পারত। কিন্তু তা না করে ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছে।
“এসব কারণে পত্রিকা প্রকাশ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে, অসম্মান নিয়ে পত্রিকা প্রকাশ করতে চাই না।”
রোববার আজাদী সম্পাদক মালেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখনও পত্রিকা বের করার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তারা (ইউনিয়ন) বসতে চায় বলল, তখন একটা সিদ্ধান্ত হবে।”
কবে নাগাদ বৈঠক হবে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “দেখি পরশুদিন বসতে পারি। তবে এখনও তাদের (সিইউজে) জানানো হয়নি।”
দৈনিক পূর্বকোণের সম্পাদক ম. রমিজ উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
পূর্বকোণের প্রধান প্রতিবেদক নওশের আলী খান বলেন, “২৯ জুলাই রাতে আমরা কাজ করেছিলাম। বাসায় এসে জানতে পারি পরদিন পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রকাশনা বন্ধ থাকবে এবং পরবর্তীতে জানানো হবে। এখনও কর্তৃপক্ষ আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি।”
দৈনিক পূর্বদেশের সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, “নিউজ পেপার অ্যালয়েন্সের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকাশনা বন্ধ আছে। তারা যখন সিদ্ধান্ত দেবে তখন থেকে পত্রিকা প্রকাশ করা হবে।”
সিইউজে সভাপতি মো. আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সুপ্রভাত বাংলাদেশ পত্রিকায় ১৪ মাসের বেতন বকেয়া, চট্টগ্রাম মঞ্চ এখনও অষ্টম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন করেনি। তারা ঈদের বোনাসও দেয়নি।
“আমরা পত্রিকা মালিকদের আলোচনায় বসতে বলেছিলাম। তারা আমাদের সাথে আলোচনা করেনি। পত্রিকাগুলোতে সাংবাদিকদের বেতন কম। অল্প কিছু টাকা বোনাস হয়। সেগুলো পরিশোধের জন্য আমরা অনুরোধ করেছিলাম।”
কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, “বাধ্য হয়ে এই কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। মালিকরা পূর্ব ঘোষণা ছাড়া প্রকাশনা বন্ধ করে দিয়েছে। এটা বেআইনি।”
সাংবাদিকিইউনিয়নের এই নেতা বলেন, “আমরা সঙ্কট সমাধানে আলোচনা চাই। যে কোনো সময়ে আমাদের বললে আমরা আলোচনায় বসতে রাজি।”
রিলেটেড
চট্টগ্রামের পাঁচ পত্রিকার প্রকাশনা দুদিন ধরে বন্ধ