৭৯০ কোটি টাকা দেনা শোধের বাজেট দিয়ে গেলেন মেয়র নাছির

মেয়র হিসেবে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের দিন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট দিয়ে গেলেন আ জ ম নাছির উদ্দীন, তার প্রস্তাবিত আড়াই হাজার কোটি টাকার বাজেটে ৭৯০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হবে দেনা শোধে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 August 2020, 04:25 PM
Updated : 4 August 2020, 04:25 PM

বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম ক্লাবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) বাজেট ঘোষণা করেন মেয়র নাছির। বুধবার তার মেয়াদের শেষ দিন।

দুই হাজার ৪৩৬ কোটি ৩০ লাখ টাকার ২০২০-২১ সালের প্রস্তাবিত বাজেটে সর্বোচ্চ আয়ের খাত ধরা হয়েছে উন্নয়ন অনুদান।

এই খাতে আয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৬২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে থোক বরাদ্দ ৮৩৩ কোটি টাকা, জাইকার প্রস্তাবিত প্রকল্প সমূহে ৩০০ কোটি টাকা এবং সড়ক নেটওয়ার্ক ও বাস ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে ১৫০ কোটি টাকা আয় ধরা হয়েছে।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বকেয়া কর ও অভিকর খাতে ১৯৯ কোটি ১৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও বিদায়ী অর্থবছরে ২০১ কোটি টাকা লক্ষ্য নির্ধারণ করে মাত্র ৫৩ কোটি টাকা আদায় হয়েছে এ খাতে।

এছাড়া হালকর ও অভিকর খাতে ১৪৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা, অন্যান্য কর ১৩১ কোটি টাকা, ফি বাবদ ১২২ কোটি ১০ লাখ টাকা, সম্পদ হতে অর্জিত ভাড়া ৯৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা আয় ধরা হয়েছে।

অন্যদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে উন্নয়ন খাতে সর্বোচ্চ ৯৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং বকেয়া দেনা পরিশোধে ৭৯০ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা ও পারিশ্রমিক ব্যয় হবে বছরে ২৯০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এছাড়া মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

২০১৯-২০ অর্থবছরের ২৪৮৫ কোটি ৯১ লাখ টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হলেও বুধবার ১৪৪৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকার সংশোধিত বাজেট অনুমোদন করা হয়।

প্রস্তাবিত বাজেটে লক্ষ্য অনুযায়ী আয় না এলে ঘাটতি পূরণ কীভাবে হবে, সে বিষয়ে কোনো ধারণা দেওয়া হয়নি।

বাজেট অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, “এই পরিষদের পঞ্চম ও সর্বশেষ বাজেট এটি। সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, কাউন্সিলরদের একত্রিত করে আমাদের সাড়ে নয় হাজার সদস্যের পরিবার। সবাই মিলে শতভাগ উজাড় করে কীভাবে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা যায় সেই চেষ্টা করেছি।

“সিসিসি ইতিহাসে এক মেয়াদে ১৩টি বড় প্রকল্প গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করেছি। কিছু চলমান আছে। প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা না থাকলে এতগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারতাম না।”

তিনি বলেন, “সিটি করপোরেশনের যতটুকু সদিচ্ছা আছে ততটুকু আর্থিক সক্ষমতা না থাকায় নগরবাসীর শতভাগ প্রত্যাশা পূরণ করা যায় না। এ কারণে পৌর করের উপর নির্ভর করে সকল কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হয়। নাগরিক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করতে হলে সিটি করপোরেশনের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

“এখন বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যে ম্যাচিং ফান্ড দিতে হয় তা দেয়ার পুরোপুরি সক্ষমতা নেই। তা দিতে না পারলে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা খুব কঠিন হয়। সে কারণে আইনি প্রক্রিয়ার যে সুযোগ তা কাজে লাগিয়ে পৌর কর পুনঃমূল্যায়ন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য এটা করতে গিয়ে বাধাগ্রস্ত হয়েছি। আমার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে তাতে শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রামই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।”  

মেয়র নাছির বলেন, “যদি সে চেষ্টায় সফল হতাম তাহলে যে রাজস্ব আদায় হচ্ছে তা এতদিনে দ্বিগুণ বা তিনগুণ হয়ে যেত। প্রত্যাশিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সহজ হত।”

বিদায়ী মেয়র নাছির বলেন, “মানুষের ভালোবাসা নিয়ে আজীবন মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই। গত নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। নগরবাসীর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই যারা আমাদের পরিষদকে সেবার গুরু দায়িত্ব অর্পন করেছেন।

“আইনের ভেতরে থেকে সকল সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সততা ও জবাবদিহির সাথে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি। এই নগরবাসীর সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং আগামীতেও থাকব। কারণ আমি এই নগরবাসীর কাছে অনেক বেশি ঋণী। এই ঋণ শোধ করার চেষ্টায় থাকব সর্বক্ষণ। অগোচরে যদি কোনো ব্যর্থতা ভুল ভ্রান্তি সীমাবদ্ধতার দায় নিজের কাঁধে গ্রহণ করলাম। যা কিছু সফলতা এটা নগরবাসীকে দিলাম।”

বাজেট অধিবেশনে সিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা, শিক্ষা অর্থ স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন হিরণ, প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী ও নেছার উদ্দিন মঞ্জু, সিসিসি সচিব আবু শাহেদ, প্রধান প্রকৌশলী কর্নেল সোহেল আহমদসহ ওয়ার্ড কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।