বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) প্রশাসক পদে নিয়োগ দেওয়া হয় নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনকে।
মেয়র পদে দায়িত্ব গ্রহণের শুরু থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা-সমালোচনায় থাকা নাছিরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৫ অগাস্ট। তার আগের দিন বুধবার দুপুরে প্রশাসক পদে সুজনকে নিয়োগ দেয়া হল।
এর ঘণ্টাখানেক পর টেলিফোন আলাপচারিতায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নের জবাব দেন বিদায়ী মেয়র নাছির।
প্রশাসক পদে সুজনের নিয়োগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, “একজন দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক কর্মীর মূল্যায়ন হয়েছে। ইতোমধ্যে উনার সাথে আমার কথা হয়েছে। আমি যতটুকু পারি তার শতভাগ উনাকে সহযোগিতা করব। আমার লক্ষ্য নগরবাসী যেন উপকৃত হয়।”
মেয়র পদে নিজের উত্তরসূরীকে স্বাগত জানানোর পর নাছিরের কাছে প্রশ্ন ছিল, দায়িত্ব পালনে কী কী প্রতিবন্ধকতার মুখে তাকে পড়তে হয়েছে।
“প্রয়োজনীয় ও দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোনো উৎসাহ উদ্দীপনাই ছিল না। আমরা অর্গানোগ্রাম করেছি। প্রবিধানমালা হওয়াতে এখন তারা কাজে আগ্রহী।”
মেয়র নাছিরের কাছে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিটি করপোরেশন পরিচালনায় ‘বড় বাধা’ হল ‘আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকা’।
তিনি বলেন, “আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকায় বড় প্রকল্প নেওয়া সম্ভব হয় না। কারণ সিটি করপোরেশনের প্রকল্প নিতে হলে ম্যাচিং ফান্ড (উন্নয়ন প্রকল্পে মোট ব্যয়ের যে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ সিটি করপোরেশন প্রদান করে) দিতে হয়। টাকা না থাকলে সেটা সম্ভব হয় না।
“আর্থিক সক্ষমতা লাভের জন্য পৌর কর পুনঃমূল্যায়নের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু নানা বাধায় সেটা করতে পারিনি। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হলে সিটি করপোরেশনের আর্থিক ক্ষমতা বাড়াতে হবে।”
জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রকল্প সিটি করপোরেশনের পরিবর্তে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কেন পেল এমন প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর দেননি নাছির।
তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে নিজের ‘অভিজ্ঞতা’ অনুসারে একাধিক প্রকল্প গ্রহণের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন তিনি।
নাছির বলেন, “জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ যে প্রকল্প পেয়েছে তা সেনাবাহিনী বাস্তবায়ন করছে। সেটা যত দ্রুত বাস্তবায়ন হবে তত নগরবাসী উপকৃত হবে। তবে আমার অভিজ্ঞতা থেকে যা দেখেছি, জলাবদ্ধতা নিরসনে একাধিক প্রকল্প না নিয়ে একটি বড় সামগ্রিক প্রকল্প নিলে সেটি বাস্তবায়ন ও সমস্যা নিরসন সহজ হত।”
নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ দুটি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তিন প্রকল্পে মোট ব্যয় প্রায় ৯ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা।
সিটি মেয়র পদের পাশাপাশি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে থাকায় দায়িত্ব পালনে কোনো ‘সমস্যা হয়নি’ বলে দাবি করেন নাছির।
তিনি বলেন, “এতে কোনো কিছুই হয়নি। এর বাইরেও আমি আরও অনেক পদে আছি। সব দায়িত্বই ভালোভাবে পালন করছি।
“এখন দলের জন্য বেশি সময় দিতে পারব। সংগঠন গোছানোর কাজ আরও ভালোভাবে করব।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র নাছির বলেন, “ধার দেনা ছিল। বিগত মেয়রের আমলের ২৯৫ কোটি টাকা দেনা ছিল। সেটা শোধ করেছি। এখন যা আছে সেটা ‘অনেক বেশি’ নয়। ৮০০ কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে ৫০০ কোটি টাকা প্রকল্পের। আর তিনশ কোটি টাকা সাধারণ দেনা।”
এত বড় অংকের দেনা পরবর্তী প্রশাসক বা মেয়রের জন্য সংকটের হবে কি না প্রশ্ন করা হলে নাছির বলেন, “কষ্ট কেন হবে? মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা তারা পাবেন। আর এখন তো প্রশাসক দায়িত্ব পালন করবেন, মেয়র আসবেন আরও পরে।”
দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দিক থেকে ‘অসহযোগিতার’ অভিযোগ তুলেছিলেন নাছির।
ওই অবস্থা পুরো মেয়াদজুড়ে ছিল কি না, পরে সহযোগিতা পেয়েছেন কি না তা জানতে চাওয়া হয়েছিল চট্টগ্রামের বিদায়ী মেয়রের কাছে।
জবাবে নাছির বলেন, “এ বিষয়গুলো নিয়ে এখন কথা বলব না।”
তার মেয়াদে সাফল্য ও ব্যর্থতা সম্পর্কে বলতে বললে আ জ ম নাছির বলেন, “সফলতা অনেক আছে। সেটা জনগণই বিচার করবে।”
দায়িত্ব নিয়েই নগরী থেকে সব বিলবোর্ড উচ্ছেদের উদ্যোগ নিয়ে প্রশংসিত হন নাছির। এরপর আবর্জনা অপসারণে তার ‘ডোর টু ডোর’ প্রকল্পও প্রশংসিত হয়।
জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়র নির্বাচিত হলেও পরে এই কাজ ‘সিটি করপোরেশনের একার নয়’ বলে অবস্থান পরিবর্তন করেন নাছির। পরে সিডিএ সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পটি পায়।
নগরীর আগ্রাবাদ এক্সেস সড়ক ও পিসি রোডের উন্নয়ন কাজের ভোগান্তি এখনো নগরবাসীর যন্ত্রণা হয়ে আছে। বিমানবন্দর সড়কের সংস্কার কাজের ধীরগতিও সমালোচিত হয় ব্যাপকভাবে।
মেয়র পদে থাকাকালে দলের জ্যেষ্ঠ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সাথেও বিরোধে জড়ান নাছির। দ্বিতীয় মেয়াদেও দলের মনোনয়ন চেয়ে আর তা পাননি তিনি।