চট্টগ্রামে শহরে গরু কম, গ্রামে হাট জমজমাট

বন্দর নগরীর হাটগুলোতে ঈদের আগের দিন গরুর সংকট দেখা দিলেও গ্রামের হাটে পর্যাপ্ত গরু আছে।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 July 2020, 10:15 AM
Updated : 31 July 2020, 10:23 AM

বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই নগরীর স্থায়ী-অস্থায়ী হাটগুলোতে গরুর সংখ্যা কমতে থাকে। রাতে প্রায় শূন্য হয়ে পড়ে দুই স্থায়ী হাট সাগরিকা ও বিবিরহাট।

শুক্রবার সকালে বিবিরহাট বাজারে গরু ছিল শখানেক। আর সবচেয়ে বড় বাজার সাগরিকায় হাজার দুয়েক। নগরীতে দুটি স্থায়ী হাটের পাশাপাশি চারটি অস্থায়ী হাটের চিত্রও একই রকম।

এতে নগরীর বাসিন্দারা গরু কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন, চড়তে শুরু করেছে গরুর দামও।

বিপরীতে চট্টগ্রামে বিভিন্ন উপজেলার হাটগুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক গরু আছে। তাই নগরীর বাসিন্দারা কেউ কেউ ছুটছেন গ্রামের দিকে গরু কিনতে।

এদিকে নগরীতে গরুর সংকট দেখা দেয়ায় আশেপাশের জেলা ও চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোতে গরুর ব্যাপারিদের সাথে যোগাযোগ শুরু করে হাটের ইজারাদার ও প্রাণি সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা।

শহরে চাহিদার কথা শুনে সংলগ্ন কয়েকটি জেলা ও উপজেলা থেকে গরু আসতে শুরু করেছে। শুক্রবার বিকেল নাগাদ গরুর সংকট কিছুটা হলেও কমবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।

নগরীতে গরুর হাট বসানো নিয়ে ‘নেতিবাচক’ প্রচারণা, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আর্থিক ক্ষতির কারণে নগরীর বাসিন্দারা কোরবানি কম দেবেন এমন ধারণা ও বন্যার কারণে এবার বাইরের জেলাগুলো থেকে চট্টগ্রামে কম গরু এসেছে।

বিবিরহাট বাজারের ইজারাদার আরিফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, করোনায় বেচাবিক্রি হবে না এমন খবর পেয়ে এবার ব্যাপারিরা শুরুতে কম গরু নিয়ে এসেছে। আর বন্যার কারণেও অনেকে আসেনি।

“আমাদের হাটে পরশু তিনশ গরু বিক্রি হয়েছে। কালকে তেমন বিক্রি হয়নি, গরুই ছিল না দুপুরের পর। আজ একদম ফাঁকা।”

শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে বিবিরহাট বাজার থেকে ছোট একটি গরু ৪২ হাজার টাকায় কিনেছেন সাইদুল ইসলাম।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এই বাজারে অল্প কয়টা গরু আছে। কিন্তু ক্রেতা অনেক। একটা গরুর আশেপাশে সাত-আটজন ক্রেতা দাঁড়িয়ে আছে। একজন সরলে অন্যজন দরদাম করছেন। একারণে দামও বাড়তি।

“শহরের মানুষ শেষ দুই দিনে গরু কেনে। ক্রেতা না পেয়ে ব্যাপারিরা হয়ত হাট থেকে সরে গেছে।”

এদিকে হাটগুলোতে গরু কমার খবরে নগরীর বিভিন্ন স্থানে ভাসমান গরুর হাটেও গরুর দাম বেড়ে গেছে।

খুলশী এলাকার ঝাউতলা বাজার মাঠে রেখে স্থানীয়রা কিছু গরু বিক্রি করেন, সেখান থেকে ৮৫ হাজার টাকায় বৃহস্পতিবার রাতে গরু কিনেছেন এলাকার আবদুল আল আমিন।

তিনি বলেন, এই সাইজের গরু ৬০-৬৫ হাজার টাকায় দুই দিন আগে বিক্রি হয়েছে। বাজারে গরু নেই শুনে এরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে সাগরিকা হাটে ট্রাকে করে বিভিন্ন জেলা থেকে গরু আসতে দেখা গেছে।

হাটের ইজারাদার সাইফুল হুদা জাহাঙ্গীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কালকে হাটে সব মিলিয়ে দুই হাজার গরু ছিল। এখন আছে সাত হাজার। কুমিল্লা, নোয়াখালী, মিরসরাই থেকে গরু এসেছে। চাপাইনবাবগঞ্জ থেকেও এসেছে কিছু।

“গতকাল গরু না থাকায় ব্যাপারিদের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তারা গরু নিয়ে আসছেন। পথে আরও গরু আছে। বিকেলের মধ্যে চলে আসবে। আশাকারি সংকট হবে না।”

এদিকে নগরীতে গরু না থাকলেও উপজেলার বাজারগুলোর চিত্র ভিন্ন।

বাঁশখালীর গণ্ডামারার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন শিকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গ্রামের হাটগুলোতে প্রচুর গরু আছে। এখান থেকে কিছু ব্যাপারি সকালে গরু নিয়ে শহরে রওনা দিয়েছেন এখনো অনেকে যাচ্ছেন।

হাটহাজারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন বলেন, সকাল থেকে পৌর সদর, চৌধুরীহাট, ফরহাদাবাদ ও কাটিরহাটের গরুর বাজারগুলো ঘুরে দেখেছি পর্যাপ্ত সংখ্যক গরু আছে। শহর থেকে অনেকে চৌধুরীহাট ও ফতেয়াবাদে এসে গরু কিনছেন।

“স্থানীয় খামারি ও গৃহস্থরা গরু নিয়ে বাজারে এসেছেন। সাথে যোগ হয়েছে বাইরের ব্যাপারিরা। নগরীতে শুরুতে গরুর ক্রেতা কম থাকায় ব্যাপারিরা গরু নিয়ে গত দুইদিনে উপজেলাগুলোর হাটে চলে এসেছেন। তাই গ্রামের হাটে এখন অনেক গরু। দামও তিনদিন আগের মতই।”

নগরীর হাটগুলোতে গরু সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. রেয়াজুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দেশের বড় শহরগুলোতে হাট নিরুৎসাহিত করায় ব্যাপারিরা গরু কম সংগ্রহ করেছে এবং হাটেও কম এসেছে।

“ঢাকা, কুমিল্লা, সাতকানিয়া ও চন্দনাইশ থেকে অনেক গরুর ট্রাক রওনা হয়েছে। বিকেলের মধ্যে পৌঁছে যাবে। উপজেলার হাটগুলোতে পর্যাপ্ত গরু আছে। বিবিরহাটে সাতকানিয়া এবং নাহার এগ্রো খামার থেকে গরু পাঠানো হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “এবার করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে খামারভিত্তিক গরু বিক্রি বেশি হয়েছে। সেজন্য খামারিরা আর হাটমুখী হয়নি। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করেছেন তাদের খামারিদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছি।

“একটু কষ্ট করে আশেপাশের উপজেলার খামারিদের সাথে যোগাযোগ করে এখনো শহরের বাসিন্দারা গরু কিনছেন। প্রয়োজনে খামারিরা ক্রেতার বাসায় গরু পৌঁছে দিচ্ছেন।”

প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের হিসেবে, এবার কোরবানিতে চট্টগ্রাম জেলায় পশুর চাহিদা রয়েছে সাত লাখ ৩১ হাজার। তার মধ্যে জেলার আট হাজারের মতো খামার থেকে স্থানীয়ভাবে জোগান দেওয়া সম্ভব হবে ছয় লাখ ৮৯ হাজার ২২টি পশু।

এসব পশুর মধ্যে গরু চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭২টি, মহিষ ৫৭ হাজার ১৩১টি, ছাগল ও ভেড়া এক লাখ ৬৭ হাজার ২১০টি। অবশিষ্ট গরু দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়।

নগরীর স্থায়ী-অস্থায়ী ছয় হাটের পাশাপাশি ১৪ উপজেলার আরও প্রায় শতাধিক হাটে এসব পশু বিকিকিনি হচ্ছে।