বাঘের ছানা ‘করোনা’

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ব্যাঘ্র যুগল রাজ-পরীর সংসারে গত ডিসেম্বরে যে মেয়ে বাঘের জন্ম হয়েছে, মহামারীর এই সময়ের সঙ্গে মিল রেখে তার নাম রাখা হয়েছে ‘করোনা’।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2020, 12:10 PM
Updated : 29 July 2020, 04:25 PM

করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে দর্শনার্থীদের জন্য চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা বন্ধ রাখা হয়েছে সেই মার্চ থেকে। ফলে নতুন এই বাঘের ছানার দেখা এখনও পাননি দর্শনার্থীরা।

সাত মাস বয়সী ‘করোনা’র এখন দিন কাটছে মা পরীর সাথে সারাদিন খেলা আর খুনসুটিতে।

পাশের খাঁচায় আছে বাংলাদেশের প্রথম সাদা বাঘ দুই বছর বয়সী ‘শুভ্রা’, যে এই চিড়িয়াখানায় আসা দর্শনার্থীদের অন্যতম আকর্ষণ।

চিড়িয়াখানার বাঘ দম্পতি রাজ-পরীর সংসারে গত বছর ৩০ ডিসেম্বর দুটি শাবকের জন্ম হয়। এরমধ্যে পরদিনই একটির মৃত্যু হয়।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় মা পরীর সঙ্গে খেলায় ব্যস্ত সাত মাসের করোনা

বেঁচে থাকা শাবকটি শুরুর দিকে ইনকিউবেটরে এবং পরে তিন মাস পর্দায় ঢাকা খাচায় নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়।

এর মধ্যেই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ১৯ মার্চ থেকে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

তারপর চার মাস পেরিয়ে গেছে, এখনো খোলেনি চিড়িয়াখানা। তাই দর্শনার্থীরা দেখা পায়নি নতুন বাঘ শাবকের।

চিড়িয়াখানার কিউরেটর ও চিকিৎসক ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওর জন্মের পরপরই চীনে করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব দেখা দিল। সে কারণে ‘করোনা’ নামটি আমাদের মাথায় ছিল। পরে সারা পৃথিবীতে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ল। তাই নাম রাখা হয়েছে করোনা।”

চিড়িয়াখানা পরিচালনা পর্ষদের সচিব মো. রুহুল আমীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “করোনাভাইরাস আমাদের দেশে শনাক্ত হওয়ার আগেই বাঘ শাবকটির জন্ম। কিন্তু মহামারীর মধ্যে এর আনুষ্ঠানিক নামকরণের সুযোগ মেলেনি। একটি বাঘ বহু বছর বাঁচে। যতদিন বাঁচবে ততদিন সবাই জানবে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় করোনা নামের একটি বাঘ আছে।”

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় মা পরীর সঙ্গে খেলায় ব্যস্ত সাত মাসের করোনা

২৮ কেজি ওজনের ‘করোনা’ এখন মাংস খেতে শুরু করেছে। খাবারের তালিকায় আছে দুধও।

ডা. শুভ বলেন, “আস্তে আস্তে মাংস খাওয়ার পরিমাণ বাড়বে। তখন আর দুধ দেওয়া হবে না। এক বছর সে মা বাঘিনী পরীর সাথেই থাকবে। তারপর যাবে আলাদা খাচায়।”

২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর ৩৩ লাখ টাকায় কেনা ১১ মাস বয়সী রাজ এবং ৯ মাস বয়সী পরীকে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় আনা হয়।

২০১৮ সালের ১৯ জুলাই বেঙ্গল টাইগার দম্পতি রাজ-পরীর তিনটি ছানার জন্ম হয়। যার মধ্যে দু্টি ছিল ‘হোয়াইট টাইগার’, অন্যটি কমলা-কালো ডোরাকাটা।

পরদিন একটি সাদা বাঘ শাবক মারা যায়। অন্য সাদা বাঘিনীটি ‘শুভ্রা’। কমলা-কালো বাঘিনীটির নাম দেয়া হয় ‘জয়া’।    

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় মা পরীর সঙ্গে খেলায় ব্যস্ত সাত মাসের করোনা

বেঙ্গল টাইগার রাজ-পরীর ছানা শুভ্রাই বাংলাদেশের প্রথম সাদা বাঘ।

কোনো প্রাণী সচরাচর যে রঙের হয়, তার বদলে সাদা রঙ নিয়ে জন্ম নিলে তাকে চিহ্নিত করা হয় ‘অ্যালবিনো’ হিসেবে। বেঙ্গল টাইগারের ক্ষেত্রেও তাই।

বাংলাদেশের প্রকৃতিতে এখনও কোনো হোয়াইট টাইগারের দেখা মেলেনি। এমনকি বাংলাদেশের চিড়িয়াখানা বা সাফারি পার্কগুলোর মধ্যে শুভ্রাই প্রথম এ ধরনের বাঘ।

শুভ্রা’র বয়স এখন দুই বছর, ওজন প্রায় ১২০ কেজি। বোন জয়ার চেয়ে তুলনায় তার ওজন প্রায় ২০ কেজি বেশি।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বাংলাদেশের প্রথম সাদা বাঘ শুভ্রা

ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, অ্যালবিনো বাঘ সাধারণ বাঘের চেয়ে একটু বড় ও বেশি ওজনের হয়। শুভ্রা এখন দেখতে খুবই আকর্ষণীয়।

“দর্শনার্থী না থাকায় চিড়িয়াখানার শান্ত পরিবেশে প্রাণীরা এখন প্রজননে আগ্রহী হচ্ছে। শুভ্রা এখন প্রাপ্তবয়স্ক। হয়ত মাস ছয়েকের মধ্যে সুখবর দিতে পারব। সাদা বাঘের সন্তান সাদা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সেটা হলে আরো সাদা বাঘ পাব আমরা।”

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও চিড়িয়াখানায় ‘অ্যালবিনো’দের নিয়ে মাতামাতি দীর্ঘদিনের।

অ্যালবিনো বেঙ্গল টাইগার শুভ্রার বয়স এখন দুই বছর

চিড়িয়াখানায় বাঘের প্রজনন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে ডা. শুভ বলেন, “বন বিভাগ রাজি হলে বাঘিনী জয়া’র বিনিময়ে আমরা একটা বাঘ আনতে পারব। এতে বাঘের প্রজনন বাড়ানো সম্ভব হবে।”

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার বাঘ পরিবারে এখন একমাত্র পুরুষ হল রাজ, বাকি চারটিই বাঘিনী।