সেই এসআই হেলালের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা

চট্টগ্রামের স্কুলছাত্র সালমান ইসলাম মারুকের ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা ও মা-বোনকে মারধরের পর তার লাশ উদ্ধারের ঘটনায় বরখাস্ত এসআই হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2020, 12:12 PM
Updated : 27 July 2020, 12:35 PM

মারুফের মা রুবিনা আক্তারের মামলাটি সোমবার চট্টগ্রামের তৃতীয় মহানগর হাকিম শফি উদ্দীনের আদালতে শুনানি শেষে গ্রহণ করা হয়।

আদালত মামলার তদন্তে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে বাদির আইনজীবী রোখসানা আক্তার জানিয়েছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ অনুসারে এসআই হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে নির্যাতন এবং আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছে।

“এই ঘটনায় শুধু মারুফই ভিকটিম নয় তার মা ও বোনও ভিকটিম। মারুফের বোন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে।”

এই আইনজীবী জানান, মামলায় পুলিশের তিন সোর্সকে আসামি করার আবেদন করা হলেও তাদের বিস্তারিত পরিচয় ও ঠিকানা দিতে না পারায় আদালত তা গ্রহণ করেনি। তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের আসামি করা হবে।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. কামরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এসআই হেলালের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া অন্য তিন জনকে আসামি তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।”

মামলার বিষয়ে মারুফের মা রুবিনা আক্তার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আপনারা তো বুঝেন, মা কী জিনিস। আমার মনে কোনো শান্তি নাই। কী হবে তাও বুঝতে পারছি না। আমার ছেলে ছিল, চলে গেছে। আমি ছেলেহারা হয়ে বসে আছি। আর কী বলব?”

১৬ জুলাই রাতে সাদা পোশাকে ডবলমুরিং থানার বাদামতলীর বড় মসজিদ গলিতে অভিযানে যায় পুলিশ সদস্য এসআই হেলাল উদ্দিন। 

নিহত মারুফের স্বজনদের দাবি, কিছুদিন আগে মারুফের বাসা থেকে সাইকেল ও মোবাইল ফোন চুরি হয়েছিল। সেদিন সন্ধ্যায় দুই লোক গিয়ে মারুফের বাসায় উঁকি দিচ্ছিলেন। এসময় মারুফ তাদের ‘চোর চোর’ বলে ধরে ফেলেন।

এরপর এসআই হেলাল পুলিশের লোক পরিচয় দিয়ে মারুফকে মারধর করে এবং থানায় ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা এবং টাকা দাবি করে। মারুফের মা ও বোন পুলিশকে বাধা দেয়।

যে দুই জন বাসায় উঁকি দিয়েছেন, তারা নিজেদের পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচয় দেন। আর তাদের সাথে থাকা এসআই হেলাল ছিলেন সাদা পোশাকে।

সেখানে মারধরের পর কিশোর মারুফের বোন আহত হলে মাসহ তাদের হাসপাতালে নেয়া হয়, এরপর বাসা থেকে মারুফের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

মৃত সালমান ইসলাম মারুফ স্থানীয় একটি স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। পড়ার খরচ চালাতে স্থানীয় একটি মার্কেটে দোকান বিক্রয় কর্মী হিসেবেও কাজ করত সে।

স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে সেই রাতে এসআই হেলালকে ক্লোজড করা হয়েছিল।

এ ঘটনার পর মৃতের স্বজন ও স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, এসআই হেলাল দুই সোর্সকে সঙ্গে নিয়ে মারুফকে মারধর করে, তার কাছ থেকে টাকা দাবি করে এবং তাকে আটকের চেষ্টা করে। তখন তার পরিবারের সদস্যরা বাধা দেয়।

ঘটনার পর চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) মনজুর মোরশেদকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি ২০ জুলাই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

তাতে বলা হয়, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অগোচরে সাদা পোশাকে আগ্রাবাদের বড় মসজিদ গলিতে গিয়ে মারুফের পরিবারের সদস্যদের মারধর এবং তাকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিল এসআই হেলাল উদ্দিন।

তদন্ত প্রতিবেদনে এসআই হেলালকে বরখাস্তের সুপারিশ করা হলে সেদিনই তাকে বরখাস্ত করা হয়।

ওই ঘটনায় “শৃঙ্খলা পূর্ণ আচরণ নিশ্চিত’ করতে না পারায় এবং ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ’ হওয়ায় ওসি সদীপ কুমার দাশকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন