করোনাভাইরাস: সংক্রমণ কমছে চট্টগ্রাম পুলিশে

কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার কমছে চট্টগ্রামের পুলিশ সদস্যদের মধ্যে, বাড়ছে সুস্থতার হারও।

উত্তম সেন গুপ্ত চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 July 2020, 01:23 PM
Updated : 26 July 2020, 01:23 PM

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ৮ মার্চ। আর চট্টগ্রামে প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে ৪ এপ্রিল।

দেশব্যাপী লকডাউনের মধ্যে চট্টগ্রামেও পুলিশ সদস্যরা ত্রাণ বিতরণ, বাসায় বাজার পৌঁছানোসহ বিভিন্ন কাজে অগ্রভাগে ছিলেন।

চট্টগ্রাম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হওয়ার আট দিনের মাথায় ১২ এপ্রিল চট্টগ্রাম নগর পুলিশের প্রথম সদস্যের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। দামপাড়া পুলিশ লাইনের ট্রাফিক ব্যারাকে থাকা ওই সদস্য আক্রান্তের পর অবরুদ্ধ করে দেয়া হয় ব্যারাকটি।

এরপর থেকে পুলিশ সদস্যদের সংক্রমণ ঠেকাতে ব্যারাক থেকে সরিয়ে পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, কমিউনিটি ও কনভেনশন সেন্টারে নেয়া হয়। তবুও পুলিশ সদস্যদের মধ্যে এই সংক্রমণ পুরোপুরি ঠেকানো সম্ভব হয়নি। তবে অনেকটা রোধ করা গেছে বলে দাবি কর্মকর্তাদের।

সরকারি হিসেবে, চট্টগ্রাম জেলায় রোববার পর্যন্ত করোনাভাইরাস শনাক্তের সংখ্যা ১৩ হাজার ৬৯৯ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ২২৮ জনের।

আক্রান্তদের মধ্যে রোববার পর্যন্ত পুলিশ সদস্যের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় হাজার জনে। আর মৃত্যু হয়েছে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তাসহ সাত জনের।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) সদস্যদেরই তুলনামূলক বেশি করোনাভাইরাস শনাক্ত ও মৃত্যু হয়েছে।

নগর পুলিশের কমিশনার মাহবুবর রহমানসহ সিএমপি’র মোট শনাক্ত সদস্যের সংখ্যা ৪৯৭ জন। গোয়েন্দা বিভাগের দক্ষিণ জোনের উপ-কমিশনার মিজানুর রহমানসহ মারা গেছেন পাঁচ জন।

আর চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের এই সংখ্যা ৩০৮, মারা গেছেন দুই জন। র‌্যাব-৭ এ শনাক্তের সংখ্যা ৮৭ জন এবং পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটে ২০ জন। 

এছাড়া শিল্প পুলিশ, পিবিআইসহ অন্যান্য ইউনিটেও আরও শতাধিক পুলিশ সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, এপ্রিল মাসে চট্টগ্রামের পুলিশ সদস্যদের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শুরু হলেও তা বেড়ে যায় জুন মাসে। পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার জন্য বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে আলাদা করে করোনা ইউনিট স্থাপন করা হয়।

স্থান সংকুলানের অভাবে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে রেখে এবং একটি বেসরকারি হাসপাতালে আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা করানো হয়।

নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (বিশেষ শাখা) আব্দুল ওয়ারিশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আগের মাসগুলোতে যে হারে পুলিশ সদস্য আক্রান্তের হার ছিল সে হার এখন অনেকটা কমে গেছে। পাশাপাশি জটিল রোগীর সংখ্যাও কমেছে আগের চেয়ে দুই তৃতীয়াংশ।

“সবমিলিয়ে এখন আক্রান্তের হার নিম্নগামী, আর সুস্থতার হার ঊর্ধগামী।”

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ও চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উদ্যোগে পতেঙ্গায় গড়ে তোলা ফিল্ড হাসপাতাল

সিএমপি থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, জুন মাসে নগর পুলিশের সর্বোচ্চ শনাক্ত ছিল ১৯২ জন। তার আগে মে মাসে ১৬৪ এবং এপ্রিল মাসে ১৯ জন আক্রান্ত হয়েছিল। জুলাই মাসে ১২১ জন।   

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (সদর) মঈনুল ইসলাম জানান, গত মাসেও পুলিশ হাসপাতাল থেকে দৈনিক ৪০ থেকে ৫০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় পাঠানো হতো। আর একদিনে ১৮ থেকে ২০ জনও আক্রান্ত হয়েছিল। 

তবে এই সংখ্যা এখন অনেক কমে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বর্তমানে নমুনা পাঠানো হয় ১৯ থেকে ২০ জনের। আর পজিটিভ রিপোর্ট আসে চার থেকে পাঁচ জনের।

“আগে আক্রান্তদের মধ্যে সিভিয়ার পেশেন্ট বেশি থাকলেও এখন নেই। যারা আক্রান্ত হচ্ছে তাদের সাধারণ চিকিৎসায় ভালো হয়ে উঠছে।”

সিএমপি’র আক্রান্ত ৪৯৭ জনের মধ্যে ৩৬৩ জন সুস্থ হয়ে গেছে এবং তাদের বেশির ভাগ সদস্যই কাজে যোগ দিয়েছেন বলে জানান এডিসি মঈনুল।

এদিকে চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মশিউদ্দৌলাহ রেজা জানান, চট্টগ্রাম জেলায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যের সংথ্যা ৩০৮ জন। যাদের মধ্যে ২৯২ জনই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। আর মারা গেছেন দুই জন সদস্য।

তিনিও বলেন, “ইদানিং আক্রান্তের হার অনেক কমে গেছে। সুস্থতার হার বাড়ছে বেশি। চিকিৎসাধীন ১৬ সদস্যও সুস্থতার পথে।”

আর র‌্যাব-৭ এর আক্রান্ত ৮৭ সদস্যের মধ্যে ৮০ জনই সুস্থ হয়ে উঠেছে বলে জানান র‌্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক এএসপি মাহমুদুল হাসান মামুন।

এদিকে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো কার্যালয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ আক্রান্ত ২০ সদস্যের মধ্যে সবাই সুস্থ হয়ে কাজে যোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইউনিটটির জনসংযোগের দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক সন্তোষ চাকমা।