মারুফকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে চেয়েছিলেন এসআই হেলাল: তদন্ত কমিটি

কর্মকর্তাদের অগোচরে সাদা পোশাকে আগ্রাবাদের বড় মসজিদ গলিতে গিয়ে কিশোর সালমান ইসলাম মারুফের পরিবারের সদস্যদের মারধর এবং তাকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিলেন এসআই হেলাল উদ্দিন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 July 2020, 02:15 PM
Updated : 20 July 2020, 02:16 PM

বন্দরনগরীর আলোচিত এই ঘটনা নিয়ে পুলিশের তদন্তেই এমন তথ্য উঠে এসেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত প্রতিবেদনে এসআই হেলালকে বরখাস্তের সুপারিশ করা হয়।

 ওই তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরপরই ডবলমুরিং থানার এসআই হেলালকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে সাদা পোশাকে ডবলমুরিং থানার বাদামতলীর বড় মসজিদ গলিতে অভিযানে গিয়েছিলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

সেখানে মারধরের পর কিশোর মারুফের বোন আহত হলে মাসহ তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়, এরপর বাসা থেকে মারুফের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

মৃত মারুফ স্থানীয় একটি স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। পড়ার খরচ চালাতে স্থানীয় একটি মার্কেটের এক দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করতেন তিনি।

এ ঘটনার পর মৃতের স্বজন ও স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, এসআই হেলাল দুই সোর্সকে সঙ্গে নিয়ে মারুফকে মারধর করে, তার কাছ থেকে টাকা দাবি করে এবং তাকে আটকের চেষ্টা করে। তখন তার পরিবারের সদস্যরা বাধা দেয়।

ঘটনার পর চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) মনজুর মোরশেদকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

সেই কমিটি সোমবার বিকেলে সিএমপি কমিশনার মো. মাহবুবর রহমানের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

১৮ পৃষ্ঠার ওই তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনার পূর্বাপর তুলে ধরা হয়। এরআগে মারুফের পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয় সংশ্লিষ্ট ১৭ জন এবং ১৫ জন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।

তদন্ত কমিটির প্রধান গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) মনজুর মোরশেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেদিন এসআই হেলাল ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগে থানাকে অবহিত করেননি। থানায় এ সংক্রান্ত কোনো জিডি এন্ট্রি নেই।”

কোনো পুলিশ কর্মকর্তার কোনো অভিযানে যেতে হলে থানায় এ সংক্রান্তে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে যেতে হয়।

তদন্ত কমিটির প্রধান মোরশেদ বলেন, “তার ঊর্ধতন সকল কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি। এই অভিযানের বিষয়ে কেউ জানতেন না। ইউনিফর্ম ছাড়াই সাদা পোশাকে এসআই হেলাল ঘটনাস্থলে যান, যার কোনো সুযোগ নেই।

“সিনিয়র অফিসরদের অবহিত না করেই সেখানে গিয়ে তিনি সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছেন। ভিকটিম (মারুফ) ও তার মা-বোনকে মারধর করে এবং ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেয়। যার কারণে এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।”

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসআই হেলালকে বরখাস্ত করার সুপারিশের পাশাপাশি এ ঘটনায় থানার ওসির তদারকির ‘ঘাটতি ছিল’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, “ওসি এক্ষেত্রে শৃঙ্খলা পূর্ণ আচরণ নিশ্চিত করতে পারেননি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছেন।”

এসআই হেলালের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশও করেছে তদন্ত কমিটি।

এ বিষয়ে উপ-কমিশনার (পশ্চিম) ফারুক উল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “তদন্তের ভিত্তিতে এসআই হেলালকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ওসি সদীপ কুমার দাশকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে তাকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।”

এরআগে বৃহস্পতিবার রাতেই ঘটনার পর স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে এসআই হেলালকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল।

নিহত মারুফের স্বজনদের দাবি, কিছুদিন আগে তার বাসা থেকে সাইকেল ও মোবাইল ফোন চুরি হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুই লোক গিয়ে মারুফের বাসায় উঁকি দিচ্ছিলেন। এসময় মারুফ তাদের ‘চোর চোর’ বলে ধরে ফেলেন।

এরপর এসআই হেলাল পুলিশের লোক পরিচয় দিয়ে মারুফকে মারধর করেন এবং থানায় ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা এবং টাকা দাবি করে। মারুফের মা ও বোন পুলিশকে বাধা দেন।

যে দুই জন বাসায় উঁকি দিয়েছেন, তারা নিজেদের পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচয় দেন। আর তাদের সাথে থাকা এসআই হেলাল ছিলেন সাদা পোশাকে।