করোনাভাইরাস: নমুনা পরীক্ষার জটে বিঘ্নিত পুলিশের কাজ

চট্টগ্রামে জটে আটকে আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় সাড়ে ৫০০ সদস্যের নমুনা পরীক্ষার ফল।

উত্তম সেন গুপ্ত চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2020, 03:15 PM
Updated : 30 June 2020, 03:15 PM

এদের সংস্পর্শে আসা আরও দেড় হাজার সদস্য কোয়ারেন্টিনে থাকায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণসহ স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে বাহিনীগুলোকে।

চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রথম কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয় ১২ এপ্রিল। সেদিন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের এক সদস্যের দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে।

এরপর আড়াই মাসে এই সংখ্যা ৭০০ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে শুধু চট্টগ্রাম নগর ‍পুলিশে (সিএমপি) ৪৩৩ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৭৮। জেলা পুলিশে ২৮০ জন আক্রান্ত হয়ে ১২৩ জন সুস্থ হয়েছেন। আর র‌্যাব-৭ এ আক্রান্তের সংখ্যা ৮৩ জন, যাদের মধ্যে ৪৯ জন সুস্থ হয়েছেন।  

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কোভিড-১৯ এর নমুনা সংগ্রহ করা হয় দামপাড়া বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতাল বুথে।

এই বুথে গত কয়েক মাসে নমুনা সংগ্রহ করা হয় প্রায় এক হাজার ৬০০ জনের। যার মধ্যে ৫৩২ জন সদস্যের নমুনার ফল এখনও পাওয়া যায়নি।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, নমুনা প্রতিবেদন না পাওয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি নগর পুলিশে ৪১৩ জন।

এছাড়া চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের ২২ জন, আরআরএফ ১০ জন, শিল্প পুলিশের চারজন, ৯ এপিবিএন-এর ১২ জন, চট্টগ্রাম রেঞ্জ অফিসের সাতজন, পিবিআইর ২৮ জন, টুরিস্ট পুলিশের দুই জন, সিআইডির ছয় জন, রেলওয়ে পুলিশের চারজন ও ইমিগ্রেশন পুলিশের দুজন, নৌ পুলিশের ১৬ জন।

এর বাইরে রাঙামাটি, কুমিল্লা ও বান্দরবান, ফেনী জেলার একজন করে পুলিশ সদস্যের নমুনা প্রতিবেদন এখনও পাওয়া যায়নি।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (সদর) মঈনুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চট্টগ্রাম নগর পুলিশের বাইরেও জেলা, রেঞ্জসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করা হয় বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে। সেখান থেকে বিভিন্ন ল্যাবে পাঠানো নমুনার মধ্যে কিছু কিছু প্রতিবেদন এক মাসেও পাওয়া যাচ্ছে না।

“নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পেতে বিলম্ব হওয়ায় বেশকিছু সমস্যার মুথোমুখি হতে হচ্ছে। প্রতিবেদন পেতে বিলম্ব হওয়ায় সদস্যদের মনোবলও প্রভাবিত হওয়ার শঙ্কা থাকে।”

এছাড়া ‘ফোর্স’ মোতায়েনেও সমস্যা হচ্ছে জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “প্রতিবেদন পেতে দেরি হওয়ায় কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি পজেটিভ-নেগেটিভ শনাক্তে দেরি হওয়ায় সদস্যদের কোয়ারেন্টিনে রাখার স্থান সংকুলানও হচ্ছে না।”

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে নমুনা পরীক্ষায় পুলিশ সদস্যদের প্রাধান্য দেওয়ার আহ্বান জানান এডিসি মঈনুল।

এদিকে সরকারি পরীক্ষায় প্রতিবেদন পেতে বিলম্ব হওয়ায় অনেক পুলিশ কর্মকর্তা আবার বেসরকারিভাবে নমুনা পরীক্ষা করাতে দিচ্ছেন।

সরকারিভাবে নমুনা দিয়েও ফল পেতে বিলম্ব হওয়ায় বেসরকারিভাবে নমুনা পরীক্ষা করিয়েছেন এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক সন্তোষ চাকমা।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, অসুস্থ হয়ে প্রথম বার নমুনা পরীক্ষা করাতে দিয়েছিলেন ৮ জুন। ছয় দিন পর ১৩ জুন পাওয়া প্রতিবেদনে কোভিড-১৯ পজেটিভ হয়েছে। গত ২৪ জুন দ্বিতীয় বার নমুনা পরীক্ষা করাতে দিয়ে এখনও প্রতিবেদন পাননি।

পরে বেসরকারি একটি হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষা করাতে দিয়ে ‍দুই দিনের মধ্যেই প্রতিবেদন পান, সেখানে তার নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে বলে জানান পরিদর্শক সন্তোষ চাকমা।

একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলার সামনের সারির মধ্যে পুলিশ সদস্যরা রয়েছেন। লকডাউন শিথিল করায় পুলিশ সদস্যদের দায়িত্বও বেড়ে গেছে। সড়কে যানবাহন নিয়ন্ত্রণও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ বিভিন্ন কাজ করতে হচ্ছে পুলিশ সদস্যদের। যার কারণে সাধারণ মানুষের খুব কাছে যেতে হয় পুলিশ সদস্যদের।

তারা বলছেন, পুলিশের সদস্যেদের অনেকেই ব্যারাকে থাকেন। যেখান থেকে সংক্রমণের শঙ্কা সবচেয়ে বেশি। সেজন্য নমুনা দেওয়া সদস্যরা প্রতিবেদন পেতে দেরি হলে সংক্রমণের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা বেশি থাকে। আবার নমুনার ফলাফল না জেনে দায়িত্ব পালন করলে সহকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও সংক্রমিত হওয়ার শঙ্কা থাকে।  

চট্টগ্রামে মূলত নমুনা পরীক্ষা করা হয় ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউন অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকসাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি), চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে। আর কিছু সংখ্যা নমুনা পরীক্ষা করা হয় কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে।

এর বাইরে বেসরকারি ভাবে ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল ও শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে সম্প্রতি।

গত কয়েক দিনে চট্টগ্রামে কিট স্বল্পতায় নমুনা পরীক্ষা নেমে আসে অর্ধেকে। তবে এক কিটে দুই পরীক্ষার পরও রয়ে গেছে নমুনাজট। জট কমাতে চট্টগ্রাম থেকে তিন দফায় প্রায় সাত হাজার নমুনা পাঠানো হয়েছে ঢাকায়।