অধিকতর তদন্ত শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী সোমবার চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় অভিযোগপত্রটি জমা দেন।
বর্তমানে র্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার মুহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নূর মোহাম্মদসহ ১০ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।”
আসামিরা হলেন- খান জাহান আলী লিমিটেডের কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা সোহেল, মালিক নূর মোহাম্মদ, মোস্তফা কামাল, আইটি বিশেষজ্ঞ মো. মেহেদী আলম, গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মণ্ডল গ্রুপের বাণিজ্যিক নির্বাহী আতিকুর রহমান, কসকো বাংলাদেশ শিপিং লাইনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (করপোরেট, বিক্রয় ও বিপণন) একেএম আজাদ রহমান, সিএন্ডএফ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, নূর মোহাম্মদের ভাই খান জাহান আলী লিমিটেডের পরিচালক মোস্তাক আহমদ খান, দুই যুক্তরাজ্য প্রবাসী ফজলুর রহমান ও বকুল মিয়া।
এরআগে ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল এই ঘটনায় করা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলাটিতে আদালতে দেওয়া সম্পূরক অভিযোগপত্রেও এই ১০ জনকে আসামি করা হয়েছিল।
এই কোকেন বন্দর থেকে ছাড় করানোর ‘চেষ্টা’ ও ছাড়ের পর দেশেই কোকেন ‘পরিশোধনের উদ্যোগ’ নূর মোহাম্মদ নিয়েছিলেন বলেও মাদক মামলার সেই সম্পূরক অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।
গত বছরের ২৯ এপ্রিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলাটিতে অভিযোগও গঠন করা হয়।
বিশেষ ক্ষমতা আইনে চোরাচালানের ধারায় করা মামলায় সোমবার দেওয়া অভিযোগপত্রেও একই অভিযোগ আনা হয়েছে বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ২০১৫ সালের ৭ জুন চট্টগ্রাম বন্দরে একটি কনটেইনার আটক করে সিলগালা করে দেয় শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর।
বলিভিয়া থেকে মেসার্স খান জাহান আলী লিমিটেডের নামে আমদানি করা সূর্যমুখী তেলবাহী কনটেইনারটি জাহাজে তোলা হয় উরুগুয়ের মন্টেভিডিও বন্দর থেকে। সেখান থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে ওই বছরের ১২ মে পৌঁছায় চট্টগ্রাম বন্দরে।
পরে আদালতের নির্দেশে কন্টেইনার খুলে ১০৭টি ড্রাম থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। প্রথমে বন্দরের পরীক্ষায় এসব নমুনায় কোকেনের উপস্থিতি না মেলায় ঢাকার বিসিএসআইআর এবং বাংলাদেশ ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে তরলের নমুনা পুনরায় পরীক্ষা করা হয়।
এ ঘটনায় ২৭ জুন চট্টগ্রামের বন্দর থানায় নূর মোহাম্মদ ও গোলাম মোস্তফা সোহেলকে আসামি করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে পুলিশ। পরে আদালত চোরাচালানের ধারা সংযোজনের নির্দেশ দেয়।
তখনকার চট্টগ্রাম নগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো. কামরুজ্জামান মাদক আইনের মামলায় ২০১৫ সালের ১৯ নভেম্বরে এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় ২০১৭ সালের ১২ মে অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেন।
মাদক আইনের মামলায় দেয়া অভিযোগপত্রে আটজনকে আসামি করা হলেও নূর মোহাম্মদকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়।
ওই তদন্তে ‘ত্রুটি’ আছে উল্লেখ করে ২০১৫ সালের ৭ ডিসেম্বর আদালত অভিযোগপত্রটি গ্রহণ না করে অধিকতর তদন্ত করতে র্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মর্যাদার কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
সেসময় র্যাব-৭ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকীকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে বিশেষ ক্ষমতা আইনের চোরাচালানের ধারার মামলাটিও তদন্তের দায়িত্ব পান তিনি।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় ২০১৭ সালের ২ এপ্রিল ১০ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেন মহিউদ্দিন ফারুকী। এতে নূর মোহাম্মদের পাশাপাশি আসামি হিসেবে যোগ করা হয় তার ভাই মোস্তাক আহমদ খানকেও।
বিশেষ ক্ষমতা আইনে চোরাচালানের অভিযোগে মামলাটি অভিযোগপত্র সোমবার দেয়া হলো।
জব্দ করা ওই কোকেনের বাজার মূল্য প্রায় নয় হাজার কোটি টাকা বলে জানায় র্যাব।
চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি র্যাব-৭ সদর দপ্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও র্যাব মহাপরিচালকের উপস্থিতিতে ধ্বংস করা হয়।
এই দুই মামলার আসামিদের মধ্যে নূর মোহাম্মদ জামিনে গিয়ে পলাতক হয়েছেন। তার ভাই মোস্তক আহম্মদ শুরু থেকেই পলাতক।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী ফজলুর রহমান এবং বকুল মিয়াকেও পলাতক দেখানো হয়েছে। কারাগারে আছেন গোলাম মোস্তফা সোহেল এবং আতিকুর রহমান। বাকি চার আসামি জামিনে আছেন।