দেখিয়ে দেন একজন, ‘অস্ত্র ঠেকিয়ে’ টাকা ছিনিয়ে নেন ৬ জন: পুলিশ

চট্টগ্রামে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে যাওয়ার পথে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় একটি চক্র গ্রেপ্তার হয়েছে। পুলিশ বলছে, সাতজনের এই চক্রের একজন ব্যাংকের ভেতরে ঘোরাঘুরি করে ‘টার্গেট’ ঠিক করেন, বেরোনোর সময় তিনি দেখিয়ে দেওয়ার পর বাকি কাজ সারেন তার ছয় সহযোগী।

চট্টগ্রাম ব্যুরোউত্তম সেনগুপ্ত, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2020, 01:26 PM
Updated : 27 June 2020, 01:26 PM

সম্প্রতি বন্দরনগরীতে দিনে দুপুরে অস্ত্র ঠেকিয়ে পাঁচ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের একটি ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে এই চক্রের সন্ধান পায় পুলিশ। তাদের ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. কামাল হোসেন (৩০), মোক্তার হোসেন (২২), সাদ্দাম হোসেন (২৬), মো. এরশাদ (৩৩), শের আলী (৩৩) ও মাসুদুর রহমান (৪০)।

পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, এদের মধ্যে শের আলী ছিনতাইকারী চক্রটির ‘বেদি’ (টাকা উত্তোলনকারীকে শনাক্তকারী) হিসেবে কাজ করেন। আর মাসুদুর রহমান নিজেকে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন তাঁতী লীগের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কমিটির সভাপতি বলে পরিচয় দেন। 

কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গত ১৬ জুন দুপুরে নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ জামে মসজিদের পশ্চিম গেইটে মোটরসাইকেল আরোহী ছয় ব্যক্তি একটি সিএনজি অটোরিকশার গতিরোধ করে এক ব্যক্তির কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ আসে।

“তার তদন্ত করতে গিয়ে আমরা সাতজনের এই চক্রের সন্ধান পেয়েছি। তাদের মধ্যে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

ওসি মহসিন বলেন, চক্রটি আগেও বিভিন্ন সময়ে একই কায়দায় ছিনতাই করেছে। বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন তারা। জামিনে এসে আবার তারা ছিনতাইয়ে জড়িয় পড়েন।

শুক্রবার দিনভর অভিযান চালিয়ে আনোয়ারা উপজেলা থেকে মাসুদুর রহমান, ফটিকছড়ি  থেকে শের আলী এবং নগরীর ওয়াসা মোড় এলাকা থেকে বাকি চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ছয়জনকে শনিবার আদালতে পাঠানো হলে এরশাদ ‘দোষ স্বীকার’ করে  জবানবন্দি দিয়েছেন। আর অন্যদের তিন দিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ওসি।  

এই চক্রের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো. আব্দুর রউফ বলেন, “এরা বিভিন্ন ব্যাংকের আশপাশে অবস্থান নিয়ে থাকে। সাতজনের চক্রটির ছয়জন সরাসরি ছিনতাইয়ে অংশ নেয়। আর শের আলী চক্রটির ‘বেদি’ হিসেবে কাজ করে। সেই মূলত জানিয়ে দেয় কার কাছে টাকা আছে।”

পাঁচ লাখ টাকা যার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল, সেই ফারুক আহমেদ একটি বেসরিকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বলে জানান তিনি।

পুলিশ কর্মকর্তা রউফ বলেন, ফারুক আহমেদ গত ১৬ জুন নগরীর নাসিরাবাদ সিডিএ এভিনিউ এলাকার এক্সিম ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়ে বের হওয়ার সময় শের আলী তাকে সহযোগীদের দেখিয়ে দেন।

ফারুক টাকা তুলে ষোলশহর দুই নম্বর গেইটে তার অফিসে চলে গেলেও অন্যরা তাকে খেয়াল করতে থাকেন। কিছু সময় পরে ফারুক অফিস থেকে বের হয়ে টাকা নিয়ে সিএনজি অটোরিকশা করে বন্দর এলাকায় যাওয়ার সময় তার পিছু নেয় দুই মোটরসাইকেল আরোহী ছয়জন।

“ওয়াসার মোড় অতিক্রম করে জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের পশ্চিম গেইটে যাওয়ার সাথে সাথেই ফারুককে বহনকারী সিএনজি অটোরিকশাটি গতিরোধ করে মোটরসাইকেল আরোহী ছয়জন। তাদের মধ্যে একটি মোটরসাইকেলের চালক ছিলেন মাসুদ।

‍‍‍‍“অন্য মোটরসাইকেলের চালক ছাড়া বাকিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল দুটির মালিক গ্রেপ্তার মাসুদ।”

‘ছিনতাইয়ের জন্য আলাদা মোবাইল নম্বর’

গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান বলেন, “তাদের নিজেদের ব্যবহৃত ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নম্বরগুলো একে অপরেরটি জানে না। শুধু ছিনতাইয়ের জন্য তারা আলাদা মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে থাকে। 

“মোবাইল নম্বরের মতো একে অন্যের ঠিকানা কিংবা ব্যক্তিগত কোনো তথ্য তারা জানে না। সেই নম্বরগুলোতে যোগাযোগ করেই তারা একত্রিত হয়। টার্গেট মতো ছিনতাই করে টাকা ভাগাভাগি করে তারা নিজ নিজ এলাকায় চলে যায়।”

কোতোয়ালি থানার ওসি মহসিন বলেন, “পাঁচ লাখ টাকা ছিনতাই করে মাসুদ একাই দুই লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়েছে। অন্যদের ১০, ২০ ও ৫০ হাজার টাকা করে ভাগ দিয়েছে।

“ছিনতাই করা পাঁচ লাখের মধ্যে এরশাদের কাছ থেকে ৩৫ এবং কামালের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে মোট ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।”