বায়েজিদে বাধা ‍উপেক্ষা করে পাহাড় কেটে গড়া ৩৫০ স্থাপনা উচ্ছেদ

চট্টগ্রামের বায়েজিদ লিংক রোডে অবৈধভাবে পাহাড় কেটে গড়ে তোলা প্রায় ৩৫০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 June 2020, 03:36 PM
Updated : 24 June 2020, 03:36 PM

বুধবার দিনভর এই উচ্ছেদ চলাকালে অভিযান দল বাধা ও হামলার মুখে পড়ে। এ ঘটনায় আটক ১০ জনকে সাত দিন করে কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এদিকে অবৈধভাবে পাহাড় কেটে গড়ে তোলা এসব স্থাপনায় ৩০টি বিদ্যুতের মিটারও পাওয়া গেছে।

লকডাউনের মধ্যে এপ্রিল ও মে মাসে ফৌজদারহাট-বায়েজিদ ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ লিংক রোডের দুই পাশে পাহাড় কেটে প্রায় পাঁচ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলে অবৈধ দখলদাররা।

পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে বুধবার জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, পুলিশ, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও সিডিএ এ যৌথ অভিযান পরিচালনা করে।

অভিযানের শুরুতে বায়েজিদ প্রান্ত ও ফৌজদারহাট প্রান্ত থেকে দুটি দল উচ্ছেদ শুরু করে। এসময় জালালাবাদ অংশে অভিযান দলের উপর হামলা চালায় স্থানীয় দখলদাররা।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুরুতেই স্থানীয় দখলদাররা হামলা চালালে ভূমি অফিসের দু’জন কর্মচারী আহত হন। তারা বাধা দেয়ার চেষ্টা করে যাতে অভিযান পরিচালিত না হয়।

“এরপর পুলিশ বাধাদানকারী মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের প্রত্যেককে সাত দিন করে কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।”

এরপর টানা অভিযান চালিয়ে প্রায় সাড়ে তিনশ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয় বলে জানান তৌহিদুল।

সেখানকার প্রায় ১৬টি পাহাড়ে ব্যক্তিগত জমি, সরকারি খাস জমি এবং রেলওয়ের খাস জমি দখল করে এসব ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়।

বায়েজিদ লিংক রোডে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি জানিয়ে আসা পরিবেশবাদী সংগঠন পিপল’স ভয়েসের সভাপতি শরীফ চৌহান এই অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, “ওই এলাকার পাহাড় রক্ষা করতে হলে অবৈধ দখলদারদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে।”

“সরকারি খাস জমি রক্ষায় সেখানে জমি বেচাকেনা ও হস্তান্তর বন্ধে আইনগত নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে। পাহাড় রক্ষায় নিরাপত্তা বেষ্টনী ও স্থায়ী মনিটরিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।”

এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “যেসব স্থাপনা অনেক উঁচুতে সেগুলো অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। প্রয়োজনে আবার অভিযান চালানো হবে। সীতাকুণ্ড, হাটহাজারী ও নগরীর সীমানায় ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে যেসব স্থাপনা সেগুলোতে এনফোর্সমেন্ট পরিচালনার জন্য আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরকে লিখিতভাবে জানাব।”

পরিবেশ অধিদপ্তরের মেট্রো অঞ্চলের পরিচালক নূরুল্লাহ নুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অবশিষ্ট স্থাপনায় এনফোসর্মেন্ট মামলার অধীনে উচ্ছেদ ও জরিমানা করা হবে।

“জমি বিক্রি বা হস্তান্তরের দালিলিক প্রমাণ আমাদের কাছে না থাকলেও খালি চোখে দেখলেই বোঝা যায় সেখানে এসব ঘটনা ঘটছে। খাস জমি রক্ষা ও হস্তান্তর বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে আমরা জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ জানাব।”

এদিকে উচ্ছেদে গিয়ে অভিযান দল ওই এলাকায় রেলের খাস জমি দখলেরও প্রমাণ পেয়েছে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম বলেন, রেলওয়ের কিছু জমি ও একটি ছড়ার পানি প্রবাহের পথ বন্ধ করে স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। ছড়াটি ফয়’স লেকের সাথে সংযুক্ত।

“রেলওয়ের কর্মকর্তাদের আমরা বলেছি, তাদের নিজস্ব নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযানে যেন এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করে এবং ছড়াটির পানি প্রবাহের গতিপথ বাধামুক্ত করে।”

এছাড়া ওইসব অবৈধ স্থাপনায় কিভাবে ৩০টি বিদ্যুতের মিটার সংযোগ দেয়া হয়েছে এ বিষয়ে প্রশাসননিক তদন্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।

বুধবারের অভিযানে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন, উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদ, পূর্ব রেলের এস্টেট অফিসার মাহবুবুল আলম, নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (বায়েজিদ) পরিত্রাণ তালুকদার, সীতাকুণ্ডের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায়, আগ্রাবাদ সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুস সামাস শিকদার, চান্দগাঁও সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মামনুন আহমেদ অনীক ও হাটহাজারী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শরীফ হোসেন অংশ নেন।