নিহত মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের দাবি, এই হত্যাকাণ্ডের জন্য তার মেয়ের স্বামী পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আক্তার দায়ী।
দুই বছর ধরে বাবুলের খোঁজ পাচ্ছেন না জানিয়ে মেয়ে হত্যার বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় খুন হন চট্টগ্রামে বিভিন্ন জঙ্গিবিরোধী অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু।
হত্যাকাণ্ডের পর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন বাবুল আক্তার নিজেই।
এরপর ওই বছরের ২৪ জুন ঢাকার বনশ্রীর শ্বশুরের বাসা থেকে ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর বাবুলকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
শুরু থেকে গোয়েন্দা পুলিশ মামলাটির তদন্ত করছিল। তারা প্রায় তিন বছর তদন্ত করেও কোনো অভিযোগপত্র দিতে পারেনি। এরপর গত জানুয়ারিতে আদালত মামলাটি তদন্তের ভার পিবিআইকে দেয়।
মামলার তদন্ত নিয়ে অসন্তুষ্ট মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা ভিকটিমের পরিবার, মামলা অন্য তদন্তকারী সংস্থায় যাওয়ার বিষয়টি আমরা জানতাম না। আগের তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) বা নতুন আইও কেউ আমাদের কিছু জানাননি।
সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, “আগের তদন্তে যতটুকু তথ্য উদঘাটন হয়েছে সেটা কেস ডকেটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে পিবিআইর প্রতি আহ্বান জানাব।
“আমার শতভাগ ধারণা, বাবুল আক্তারই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমি মেয়ে হত্যার বিচারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।”
হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিন পর ২০১৬ সালের ২৬ জুন এই মামলায় মো. আনোয়ার ও মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তারা আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা নামে একজনের ‘পরিকল্পনাতেই’ এ হত্যাকাণ্ড ঘটানোর কথা বলেন।
জবানবন্দিতে ওয়াসিম বলেন, নবী, কালু, মুছা ও তিনি ‘সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন’ এবং নবী ও কালু মিতুকে ‘ছুরিকাঘাত করে’।
এরপরই পুলিশ বাকলিয়া এলাকা থেকে ‘হত্যকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র সরবরাহকারী’ ভোলা ও তার সহযোগী মনিরকে পয়েন্ট ৩২ বোরের একটি পিস্তলসহ গ্রেপ্তার করে। উদ্ধার করা পিস্তলটি মিতু হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার হয় বলে তখন পুলিশ দাবি করেছিল।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সন্দেহভাজন ছয়জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে এবং দুজন কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।
তবে জবানবন্দিতে আসা ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা ও কালুর খোঁজ পুলিশ চার বছরেও ‘পায়নি’।
হত্যাকাণ্ডের ১৭ দিনের মাথায় মুছাকে বন্দর থানা এলাকায় এক আত্মীয়র বাসা থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় বলে মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার তখন দাবি করেছিল। তবে পুলিশ তা স্বীকার করেনি।
অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া এহতেশামুল হক ভোলাও গত বছরের ডিসেম্বরে জামিনে মুক্তি পেয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছেন।
তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে মামলার আগের আইও নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. কামরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা অনেক দূর অগ্রসর হয়েছিলাম। তদন্ত শেষ পর্যায়ে ছিল। আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলার তদন্ত ভার পিবিআইকে দিয়েছেন। আমরা তাদের ডকেট পাঠিয়েছি।”
নতুন আইও পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাঈন উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতির কারণে আমরা এখনও কাজ শুরু করতে পারিনি। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে তখন শুরু করব।”
মোশাররফ হোসেন বলেন, “দুই বছর আগে বাবুল মগবাজারের বাসা পাল্টে চলে গেছে। এরপর চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারিনি। সে ফোনও ধরে না। নাতি-নাতনিদের দেখতে না পেয়ে আমার স্ত্রী খুব কষ্ট পাচ্ছে।
“মেয়ে মারা গেছে। এখন নাতি-নাতনিদেরও দেখতে পাচ্ছি না। আমরা শেষ হয়ে গেছি।”
এসব বিষয়ে জানতে বাবুল আক্তারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
তবে পিবিআই’র ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলার ডকেট পেলেও এখনও সেটা দেখা হয়নি। অবশ্যই গুরুত্বের সাথেই মামলাটি তদন্ত করা হবে।”
আরও পড়ুন: