এসএসসি: পিছিয়ে পড়ারা এগিয়ে আনল চট্টগ্রামকে

গণিত ও ইংরেজিতে পাসের হার বৃদ্ধি, তিন পার্বত্য জেলার ফলে উন্নতি এবং ছাত্রীদের জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা বাড়ায় এবার চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের ফলাফল গত কয়েক বছরের তুলনায় ভালো হয়েছে।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরী চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2020, 03:50 PM
Updated : 31 May 2020, 03:52 PM

শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা ও শিক্ষকরা বলছেন, তুলনামূলক পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলোর ভালো ফল এবং ‘কঠিন’ দুই বিষয়ে পাসের হার বাড়ায় এবার ফলাফলের চিত্র পাল্টেছে।

পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখিতা এবং চেষ্টাকেও ভালো ফলের কারণ হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ।

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা পাঁচ বছরের মধ্যে এবারই সর্বোচ্চ।

২০১৬ সালে চট্টগ্রাম বোর্ডে ৮৫০২ জন ছাত্রছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছিল। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯০০৮ জন। গত বছরের তুলনায় এ সংখ্যা এক হাজার ৬১৫ জন বেশি।

জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হিসেবে এবার বোর্ডে শীর্ষে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল। তাদের ৪৭০ হন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪৩৮ জনই জিপিএ-৫ পেয়েছে।

কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবব্রত দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একটু পিছিয়ে পড়া এলাকার স্কুলগুলোতে শিক্ষা প্রশাসন থেকে বেশি জোর দেওয়া হয়েছিল এবার। বিশেষ করে ইংরেজি ও গণিতে।

“এ দুটো বিষয়ে চট্টগ্রাম একটু পিছিয়ে ছিল বিগত বছরগুলোতে। এবার দুই বিষয়েই ফল ভালো হয়েছে। একারণে সার্বিক ফলাফল ভালো হয়েছে।”

পরিসংখ্যানও সমর্থন করছে এই দাবি। চলতি বছর বেড়েছে গণিত ও ইংরেজিতে পাসের হার।

এ বছর গণিতে পাসের হার ৯৫ দশমিক ১৫ শতাংশ। ২০১৯ সালে তা ছিল ৮৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ আর ২০১৮ সালে ৮৮ দশমিক ১১ শতাংশ।

আর এবার ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রে ৯০ দশমিক ৬১ শতাংশ ও প্রথমপত্রে ৯৭ দশমিক ৫২ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছে। যা গড় হিসেবে ইংরেজিতে পাসের হার দাঁড়ায় ৯৪ দশমিক ০৬ শতাংশ।

২০১৮ সালে তা ছিল ৯২ দশমিক ২৯ শতাংশ আর ২০১৯ সালে ৯৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

বোর্ডে পাসের হার ২০১৬ সালের পর এবার সবচেয়ে বেশি।

২০১৬ সালে মোট পাসের হার ছিল ৯০ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এরপর ২০১৭ সালে কমে ৮৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ। ২০১৮ সালে ৭৫ দশমিক ৫০ এবং ২০১৯ সালে ৭৮ দশমিক ১১ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল।

এবছর পাসের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৪ দশমিক ৭৫ শতাংশে। এরমধ্যে ছাত্র পাসের হার ৮৪ দশমিক ৯৩ এবং ছাত্রী পাসের ৮৪ দশমিক ৬০ শতাংশ।

জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে এবার এগিয়ে ছাত্রীরা। চলতি বছর ৪৭৬৩ জন ছাত্রী এবং ৪২৪৫ জন ছাত্র জিপিএ-৫ পেয়েছে।

গত বছরের তুলনায় এক হাজার ২২ জন বেশি ছাত্রী এবার সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ পেয়েছে। আর ছাত্রদের বেলায় এ সংখ্যা বেড়েছে ৫৯৩ জন।

জিপিএ-৫ পাওয়া তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে থাকা ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শাহেদা আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শিক্ষার্থীরা সারাবছর ধরে অনেক কষ্ট করে ভালো প্রস্তুতি নিয়েছে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক সবার সম্মিলিত চেষ্টায় ভালো ফল হয়েছে।

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণক নারায়ন চন্দ্র নাথ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সরকারের শিক্ষা সহায়ক নানা পদক্ষেপের কারণে শিক্ষার্থীরা স্কুলমুখী হয়েছে। যার ফল আসতে শুরু করেছে। বিশেষ করে নারী শিক্ষা ও স্বল্পোন্নত এলাকাগুলোতে শিক্ষা বিস্তারে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

“ছাত্রীদের জিপিএ-৫ পাওয়া বৃদ্ধি ও তিন পার্বত্য জেলায় পাসের হারা বাড়া সার্বিক ফলে প্রভাব ফেলেছে। এবার অনেকে বলেছিল প্রশ্ন বেশি কঠিন হয়েছে তারপরও ফল বেশ ভালো হয়েছে। এটা শিক্ষার্থীদের উৎকর্ষ প্রমাণ করে।”

নারায়ন চন্দ্র নাথ জানান, ইংরেজি ও গণিতের পাসের হার গতবারের চেয়ে বেশি। এমনকি অন্য বিষয়গুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটিতে পাসের হার ৯৯ শতাংশ।

পার্বত্য জেলায় পাসের হার বেড়েছে

তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙামাটিতেই শুধু পাসের হার বেড়েছে এবার ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ।  

এবার তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙামাটি সর্বোচ্চ পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। গত বছর তা ছিল ৬৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

খাগড়াছড়ি জেলায় এবছর পাসের হার ৬৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ, গতবার যা ছিল ৬৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

এবার বান্দরবান জেলায় ৭৩ দশমিক ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে যা গত বছর ছিল ৬৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

কক্সবাজার জেলায় এবার পাসের হার ৮৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। গত বছর ছিল ৭৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

চট্টগ্রাম মহানগরে এবার পাসের হার ৯০ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আর মহানগর বাদে জেলায় পাসের হার ৮৫ দশমিক ১৪ শতাংশ।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছে এমন স্কুলের সংখ্যা এবার ৫০টি যা গতবছর ছিল ৩০টি।

এক হাজার ৪৩ বিদ্যালয়ের মোট এক লাখ ৪৩ হাজার ৮২৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে এক লাখ ২১ হাজার ৮৮৮ জন।