‘বাস ভাড়া বৃদ্ধি জীবনযাত্রায় নতুন যন্ত্রণা যোগ করবে’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে চালু হতে যাওয়া বাসের ভাড়া বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় ‘নতুন যন্ত্রণা’ যোগ করবে বলে মনে করে ক্যাব, চট্টগ্রাম ও যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2020, 03:52 PM
Updated : 30 May 2020, 03:53 PM

শনিবার কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), চট্টগ্রাম এবং যাত্রী কল্যাণ সমিতি পৃথক বিবৃতিতে বাস ভাড়া বাড়ানোর সুপারিশ বাতিলের দাবি জানিয়েছে।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেই গণপরিবহন চালুর সরকারি সিদ্ধান্তের পর বাসের ভাড়া ৮০ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।

বাসে অর্ধেক আসন খালি থাকবে বলে মালিকদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে এই সুপারিশ করা হয়েছে, যা শিগগির সিদ্ধান্ত আকারে আসবে বলে জানিয়েছেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান ইউসুব আলী মোল্লা।

ক্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, করোনাভাইরাস মহামারী ও লকডাউন চলাকালে সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকা এমনিতে থমকে আছে।

“এ অবস্থায় বাস মালিক ও শ্রমিকদের দাবির প্রেক্ষিতে ভাড়া বৃদ্ধি করা হলে তা জনগণের জীবনযাত্রায় নতুন একটি ভোগান্তি ও যন্ত্রণা যোগ করবে। তাই এই জরুরি সংকটকালে বাস ভাড়া বৃদ্ধির মতো হঠকারী সিদ্ধান্তে উপনীত না হতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ও বিআরটিএর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

বিবৃতিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর সংকটকালে তড়িঘড়ি করে বাস ভাড়া বৃদ্ধির খবর উদ্বেগজনক। দীর্ঘদিন লকডাউনে থাকায় কর্মহীন মানুষ এমানিতেই আর্থিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, সেখানে বর্ধিত হারে বাস ভাড়া আদায়ের অনুমতি দেয়া হলে এটা হবে সড়কে ডাকাতির সামিল।

“কারণ বাস মালিক-শ্রমিকরা কোনো সময় সরকারের নির্ধারিত হারে ভাড়া আদায় না করে যাত্রীদের জিম্মি করে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া আদায় করে। সেখানে আইনশৃংখলা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সক্ষম হচ্ছে না।”

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সূত্রের বরাত দিতে বিবৃতিতে ক্যাব নেতারা বলেন, রাজধানীতে প্রতিটি সড়ক রুটে চলাচলকারী বাস-মিনিবাস দৈনিক গড়ে ১২০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিয়ে থাকেন। মহামারীকালে এই চাঁদা বন্ধ করা গেলে ও প্রয়োজনে সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি সরবরাহ করা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিটি গণপরিবহন অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করতে পারে।”

এস এম নাজের হোসাইন বলেন, “যেকোনো সংকট ও অজুহাতে গণপরিবহনগুলো বর্ধিত ভাড়া আদায় করলেও স্বাভাবিক সময়ে ভাড়া কমানোর কোনো নজির নেই। দেশের ইতিহাসে দীর্ঘ ছুটিতে থাকায় কর্মহীন মানুষ ভয়াবহ আর্থিক সংকটে আছে, তাই অর্ধেক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে যদি গণপরিবহনগুলো বিদ্যমান ভাড়া আদায় করে, পরিবহন সেবা চালু করে মালিক-শ্রমিকদের আয় ও কর্মসংস্থান পুনরায় শুরু করতে পারেন।”

পৃথক বিবৃতিতে এই বর্ধিত ভাড়ার প্রস্তাব অনতিবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বিবৃতিতে বলেন, “মহামারীর এই সংকটকালে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের অজুহাতে নিদারূণ আর্থিক সংকটে পতিত দেশের অসহায় জনগণের উপর জোর করে একচেটিয়াভাবে চাপিয়ে দেয়া ৮০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া অনতিবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।

“সড়কে চাঁদাবাজির বন্ধের পদক্ষেপ না নিয়ে, জ্বালানি তেলের মূল্য না কমিয়ে, পরিবহনের চালক-শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ সম্পর্কিত কোনো প্রকার প্রশিক্ষণ না দিয়ে গণপরিবহন চালুর মধ্য দিয়ে জনগণকে চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হচ্ছে। অন্যদিকে সড়কে নারকীয় পরিবেশের কোনো প্রকার উন্নতি না ঘটিয়ে উল্টো গণপরিবহনের ভাড়া বাড়িয়ে দিয়ে সরকার সড়কে নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি আরো বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করেছে।”

বিবিৃতি মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, “সরকার এক লাফে ৮০ শতাংশ ভাড়া বর্ধিত করলেও প্রকৃতপক্ষে বাস মালিকগণ নানা ছলচাতুরি করে ১২০ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত ভাড়া বাড়িয়ে দেবে।”

অনতিবিলম্বে গণপরিবহনের বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার করে ‘রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি’ দিয়ে বিদ্যমান ভাড়ায় জনসাধারণকে যাতায়াতের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।