করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে চান রেজাউল

করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা দিতে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2020, 04:41 PM
Updated : 26 May 2020, 04:41 PM

মঙ্গলবার রাতে নিজের ফেইসবুক পেইজে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ আহ্বান জানান।

চট্টগ্রামবাসীর উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে নগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “সমগ্র পৃথিবী আজ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। আমাদের প্রিয় স্বদেশ বাংলাদেশও এই ভাইরাসে আক্রান্ত। বন্দর নগরী চট্টগ্রামেও এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

“যার ফলে চট্টগ্রামের সরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় আমরা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে পারি না। ব্যক্তিগতভাবে আমি চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিশিষ্টজনের সাথে আলাপ করেছি।”

তিনি বলেন, “চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করার জন্য বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করছি এবং চেষ্টা করছি যাতে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এ রোগে আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা পায়। আমার প্রচেষ্টা আমি চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি এ প্রচেষ্টা সফল হবে।

“আরেকটা জিনিস উল্লেখ করতে চাই, গত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে চট্টগ্রাম করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটিতে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, চট্টগ্রামে যে সমস্ত বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে সেগুলোতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। আমি অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার জন্য দাবি জানাচ্ছি।”

করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটি কোভিড-১৯ রোগীদের প্রয়োজনে হাসপাতালগুলোর আইসিইউ ব্যবহারের জন্য নগরীর ১২টি বেসরকারি হাসপাতাল নির্ধারণ করে। ধাপে ধাপে হাসপাতালগুলোর আইসিইউ ব্যবহারের কথা থাকলেও সেটা আর হয়নি।

এরপর বেসরকারি ক্লিনিক মালিকরা নগরীতে কয়েক বছর ধরে বন্ধ থাকা হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালটি নির্ধারণ করে সেখানে শয্যার ব্যবস্থা করে। তারপর তারা সেটি পরিচালনা করতে সরকারের কাছে দাবি জানায়।

এর মধ্যে ১৫ মে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে থাকা কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য বরাদ্দ ১০টি আইসিইউ শয্যা পূর্ণ হয়ে যায়। সে সময় আর নতুন করে কাউকে আইসিইউতে ঠাঁই দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না।

চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগের আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৬ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পৃথক কোভিড-১৯ ইউনিট এবং হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে জেনারেল হাসপাতালের ইউনিট-২ হিসেবে চালুর অনুমতি দেওয়া হয়।

২১ মে হাসপাতাল দুটির কোভিড-১৯ ইউনিট আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। সেদিন রাত থেকেই চমেকের ইউনিটটিতে রোগী ভর্তি ও সেবা দেওয়া শুরু হয়। কিন্তু নানা সমস্যায় মঙ্গলবার পর্যন্ত হলি ক্রিসেন্টে রোগী ভর্তি শুরু হয়নি।

মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের এক আদেশে বেসরকারি ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালকে বিশেষায়িত কোভিড-১৯ হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়।

চট্টগ্রামে কোভিড-১৯ রোগী ‘আশঙ্কাজনকভাবে’ বাড়তে থাকায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে জননিরাপত্তা বিভাগ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অনুরোধের প্রেক্ষিতে এ আদেশ দেওয়া হয় বলে উল্লেখ করা হয়।

চট্টগ্রামের জেনারেল হাসপাতালে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ১৫০ শয্যা, এর বাইরে ১০টি আইসিইউ শয্যা আছে। এছাড়া ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডিতে ৩০ শয্যা এবং চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালে ৬০ শয্যা আছে। পাশাপাশি চমেক হাসপাতালের ফ্লু কর্নারে আইসোলেশনের জন্য ৩০ শয্যা এবং কোভিড-১৯ ইউনিটে ৭০ শয্যা রয়েছে।

এরমধ্যে চট্টগ্রামে একাধিক কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু এবং অন্য রোগে আক্রান্ত রোগীরাও বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে আইসিইউ সুবিধা না পাওয়ায় আইসিইউ শয্যার সংকটের বিষয়টি আবারো আলোচনায় আসে।

মঙ্গলবার ভিডিও বার্তায় রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আমি চট্টগ্রামের শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, ধনাঢ্য ও সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের চট্টগ্রামের অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য আবেদন জানাচ্ছি।”

সবাই সচেতন থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই ‘আঁধার’ কেটে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।