কোভিড-১৯: চট্টগ্রামে আইসিইউ ফাঁকা নেই, নতুন দুই হাসপাতাল

চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য নির্ধারিত ১০টি আইসিইউ বেড পূর্ণ থাকায় নতুন করে আর কোনো রোগীকে এ সুবিধা দেওয়া যাচ্ছে না।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরী চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2020, 05:39 PM
Updated : 16 May 2020, 05:39 PM

এ অবস্থায় শনিবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আরও দুটি হাসপাতাল কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার অনুমতি মিলেছে।

কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট দুটি হাসপাতালের মধ্যে জেনারেল হাসপাতালের ১০০ শয্যায় শনিবার রোগী ছিল ১০২ জন। ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডিতে ৩০ শয্যার ১৭টিতে রোগী রয়েছে।

জেনারেল হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ শয্যা আছে। ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডিতে) কোনো আইসিইউ সুবিধা নেই।

বিআইটিআইডিতে নেই আইসিইউ

জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও ফোকাল পারসন ডা. মো. আব্দুর রব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের আইসিইউউ পরিপূর্ণ। নতুন করে রোগী সেখানে রাখার কোনো সুযোগ নেই।

“দুঃখজনক হলো কোনো রোগীর আইসিইউ সুবিধা প্রয়োজন হলে সেটা আর এখন দেওয়া সম্ভব নয়। এখানে আরও আটটি আইসিইউ স্থাপনের কাজ চলছে, সেগুলো আগামী সপ্তাহে চালু হতে পারে।”

জেনারেল হাসপাতালে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় নিয়োজিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য একজন চিকিৎসক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যখন খুব দ্রুত রোগীর সংখ্যা বাড়ছিল আমরা বারবার বলছিলাম অন্য কোনো সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেডের ব্যবস্থা করতে। সেটা করা হলে এখন এই পরিস্থিতি হত না।”

এ বিষয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইসিইউ কারও প্রয়োজন হলে অক্সিজেন সুবিধা দিয়ে অপেক্ষমান রাখা হবে। বেড খালি হলে তারপর সেখানে নেওয়া হবে।”

চট্টগ্রামে এ দুটি হাসপাতাল ছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে সীতাকুণ্ডে চালু হওয়া ফিল্ড হাসপাতালের ৫০টি শয্যায় শনিবার ৩৭ জন রোগী ভর্তি ছিলেন।

চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালেও নেই আইসিইউ

শুক্রবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ৬৪১ জন। এদের মধ্যে মারা গেছে ৩১ জন।

গত এক সপ্তাহ ধরেই চট্টগ্রামে লাফিয়ে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। ১০ মে থেকে ১৫ মে পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে ৪২৫ জন।

আরও দুইশ শয্যা

রোগী সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকায় করণীয় ঠিক করতে শনিবার বিকেলে বৈঠকে বসেন চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের প্রধানরা।

এরপর সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নতুন দুটি হাসপাতালে কোভিড-১৯ চিকিৎসা শুরুর অনুমতি দিয়ে চিঠি আসে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল) মো. সিরাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত পত্রে অনুমতি দেয়া হয়েছে। ১০ দিন আগেই অনুমতি চেয়ে আমরা চিঠি দিয়েছিলাম।”

এতে চমেক হাসপাতালে পৃথক কোভিড-১৯ ইউনিট চালু এবং বেসরকারি হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালটি সরকারি জেনারেল হাসপাতালের ইউনিট-২ হিসেবে চালু করতে বলা হয়েছে।

হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, চমেক হাসপাতালে কোভিড-১৯ ইউনিটে আইসিইউ এবং ডায়ালাইসিসসহ আনুষাঙ্গিক সব সুবিধা রাখতে বলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ন কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাসপাতালের নিচতলায় চালু থাকা ফ্লু কর্নারের পাশে ১০০ শয্যার ইউনিটটি করা হবে। আমাদের আনুষাঙ্গিক প্রস্তুতি আছে। মন্ত্রণালয়ে আমরা ১০টা আইসিইউ চাইব। পাঁচটা বা দশটা যা পাব, তা দিয়ে শুরু করবো।

“চিকিৎসকসহ অন্যান্য লোকবল নির্ধারণ এবং অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা প্রস্তুত করে এক সপ্তাহের মধ্যে ইউনিটতে সেবা দেওয়া শুরু করতে পারব বলে আশা করছি।”

বেসরকারি ক্লিনিক মালিকদের উদ্যোগে গত প্রায় তিন বছর ধরে বন্ধ থাকা হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালটি প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে সেটি প্রস্তুত করলেও পরিচালনার জন্য সরকারের দ্বারস্থ হয় তারা।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, জেনারেল হাসপাতালের দ্বিতীয় ইউনিট হিসেবে এটি চালু করতে লোকবল স্থানীয়ভাবে নিয়োগ দিতে বলা হয়েছে।

“এটিতে মোট ১০০ শয্যা হবে। তারমধ্যে ১০টি ভেন্টিলেটর দিয়ে ২০টি আইসিইউ চালানো যাবে। আশাকরি ২০ মে হলি ক্রিসেন্ট চালু করতে পারব। দুটো হাসপাতাল চালু হলে অনেক বেশি রোগীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।”