‘পুলিশ বক্সে বিস্ফোরণে জড়িতরা উগ্র মৌলবাদে বিশ্বাসী’

উগ্র মৌলবাদী আদর্শে বিশ্বাসী কিছু তরুণ ‘স্বপ্রণোদিত’ (সেলফ মোটিভেটেড) হয়ে পুলিশ বক্সে বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 May 2020, 12:16 PM
Updated : 4 May 2020, 02:12 PM

দুই মাস আগে চট্টগ্রামে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে ওই ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ এ তথ্য জানিয়েছে।

গ্রেপ্তাররা নব্য জেএমবির সদস্য বলে জানিয়েছে নগর পুলিশের কাউন্টার টেরোজিম ইউনিট।

নগরীর বাকলিয়া ডিসি রোডের একটি বাসা থেকে রোববার তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। সোমবার তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. সাইফুল্লাহ (২৪), মো. এমরান (২৫) ও আবু ছালেহ (২৫)।

এমরান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অষ্টম সেমিস্টার ও আবু ছালেহ বেসরকারি ন্যাশনাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের টেক্সটাইল অনুষদের শিক্ষার্থী। আর সাইফুল্লাহ নগরীর চকবাজার এলাকার নুরা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ফটোকপির দোকানের কর্মচারী।

২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে নগরীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকা ষোলশহর ২ নম্বর গেইট ট্রাফিক বক্সে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে দুই ট্রাফিক পুলিশ সদস্য ও তিনজন পথচারীসহ পাঁচজন আহত হন। বিস্ফোরণে ট্রাফিক বক্সটিতে থাকা সিগন্যাল বাতি নিয়ন্ত্রণের সুইচ বোর্ড ধ্বংস হয়ে যায়।

এ ঘটনায় পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল, সেটি তদন্ত করে নগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।

এর একদিন পর সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ থেকে এই হামলার সাথে আইএস জড়িত বলে জানায়।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার হাসান মো. শওকত আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেলফ মোটিভেটেড হয়ে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটিয়েছে। নিজেদের সংগঠনের আদর্শ ও শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন স্থানে দলগতভাবে তারা সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। পুলিশকে তারা ‘তাগুত’ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং তাদের অন্যতম শত্রু মনে করে। বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে তাই পুলিশ হত্যার চেষ্টা করে থাকে।”
গ্রেপ্তার তিনজনের বাড়ি সাতকানিয়া উপজেলায় হলেও থাকেন চট্টগ্রাম নগরীতে। এই তিনজন ছাড়াও সেলিম, জহির, আকিব ও সাদেক নামের আরও কয়েকজনের তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তাদের বিষয়েও তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি।

উপ-কমিশনার শওকত আরও বলেন, “গ্রেপ্তার সাইফুল্লা ও এমরানের পরিচয় পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে। গত বছর রমজান মাসে লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়ার বাজারে মসজিদে নামাজ পড়ার সময় সাইফুল্লার সাথে পরিচয় হয় সেলিম ও আকিবের । মূলত এই সেলিম, আকিবের মাধ্যমেই তারা নব্য জেএমবির সাথে জড়িয়ে পড়ে। আর আবু ছালেহ যুক্ত হয় সাইফুল্লার মাধ্যমে।”

চার থেকে পাঁচ মাস ধরেই তারা নব্য জেএমবির কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে বলেও পুলিশকে জানিয়েছেন।

গ্রেপ্তার যুবকরা পুলিশকে জানান, গত বছর থেকে বিভিন্ন অপ্রচলিত অ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগ করতেন তারা। এসব অ্যাপসের মাধ্যমে সংগঠনের অন্য সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করে বোমা তৈরির ভিডিও আদান-প্রদান করেন। সে হিসেবে স্থানীয়ভাবে বিস্ফোরক সংগ্রহ করে বোমা তৈরি করেন।

‘কয়েকটি স্থানে ঘুরে ট্রাফিক বক্সকে বাছাই’

গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের পর উপ-কমিশনার শওকত জানান, ২৮ ফেব্রুয়ারি সকালে পলাতক সেলিম, সাদেকসহ পাঁচ যুবক নগরীর পূর্ব নাসিরাদের আপন নিবাস সংলগ্ন গিরি নিবাসে এমরানের বাসায় আসেন বিস্ফোরক নিয়ে। জুমার নামাজ পড়ে তারা সাতজন আইইডি (বিস্ফোরক) নিয়ে বাসা থেকে বের হয়। কয়েকটি জায়গা ঘুরে তারা দুই নম্বর গেইটের ট্রাফিক পুলিশ বক্সটি বাছাই করেন।

“এসময় সেলিম কিভাবে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটাতে হয় তা এমরানকে শিখিয়ে দেয়। অপর পলাতক আসামি আবু সাদেক ট্রাফিক বক্সের টেবিলের নিচে আইইডির ব্যাগটি রেখে এমরানকে ফোনে জানায়। কিন্তু এমরান তা বিস্ফোরণ না ঘটিয়ে আপন নিবাস এলাকায় তার বাসার কাছে একটি ডাস্টবিনে ফেলে দেয়।”

কিন্তু সাইফুল রিমোট কন্ট্রোলটি খুঁজে নিয়ে ট্রাফিক বক্সের কাছে যাত্রী ছাউনিতে যায় এবং সেখান থেকে রিমোটের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটায় বলে পুলিশকে জানান।

‘লকডাউনের কারণে একসাথে বাস’

গ্রেপ্তার হওয়া যুবকরা জানান, ২৮ ফেব্রুয়ারি বিস্ফোরণের পর গিরি নিবাসের বাসা ছেড়ে সবাই যার যার মতো করে চলে গেলেও এমরান বাসাটি ছাড়েননি। সাইফুল্লাহ বাকলিয়া ডিসি রোডের গণি কলোনি এলাকার লতিফের ভবন নামে একটি ভবনের তৃতীয় তলায় বাসা ভাড়া নেন।

লকডাউনে সবাই বাড়ি চলে যাওয়ায় পলাতক জহিরের নির্দেশে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সেলিমের দেয়া ব্যাগ নিয়ে এমরান ও ছালেহ বাকলিয়ার বাসায় চলে বলে পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাদে জানান।

অভিযানে বাসাটি থেকে বিষ্ফোরকসহ বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয় বলে জানান উপ-কমিশনার শওকত।