চব্বিশে থেমে গেলেন দেশের দীর্ঘকায় মানব জিন্নাত

বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘকায় মানব কক্সবাজারের রামু উপজেলার বাসিন্দা জিন্নাত আলী মারা গেছেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোও কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2020, 09:17 AM
Updated : 28 April 2020, 09:29 AM

মঙ্গলবার ভোরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের বড়বিল গ্রামের আমীর হামজার ছেলে ২৪ বছর বয়সী জিন্নাত আলীর উচ্চতা ছিল ৮ ফুট ৬ ইঞ্চি।

সোমবার জিন্নাতকে অজ্ঞান অবস্থায় চট্টগ্রাম মডিকেলের নিউরো সার্জারি বিভাগে ভর্তি করানো হয়। আগেরদিন তিনি হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন।

হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান নোমান খালেদ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সোমবার দুপুরে জিন্নাত আলীকে অজ্ঞান অবস্থায় আনা হয়। তখনই তার অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটাপন্ন ছিল। সেসময় ভেন্টিলেটর দিয়ে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। ভোরে তিনি মারা যান।

অধ্যাপক নোমান খালেদ বলেন, “জিন্নাত আলীর বড় আকারের পিটুইটারি টিউমার ছিল। যেরকম গভীর অচেতন অবস্থায় উনাকে আনা হয় তখন আর অস্ত্রোপচার সম্ভব ছিল না। কনসাস লেভেল এর চেয়ে কিছুটা বেশি থাকলেও হয়ত অস্ত্রোপচার করা যেত।”

তিনি বলেন, “অল্প বয়সে হাড় সুগঠিত হয়ে জোড়া লাগার আগেই হরমোন সিক্রেশনের কারণে উনার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হয়। এটা জায়গানটিজম। পিটুইটারি গ্ল্যান্ডে হরমোনাল ইমব্যলান্সের (হরমোন ভারস্যামহীনতা) কারণে উনার বড় আকারের পিটুইটারি টিউমার হয়েছিল।”

রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রণয় চাকমা জানান, রোববার অসুস্থতাবোধ করলে পরিবারের সদস্যরা জিন্নাত আলীকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে যান।

স্বজনদের বরাত দিয়ে ইউএনও বলেন, “জন্মের পর তার শরীর স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেলেও ১১ বছর বয়স থেকে অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে  থাকে। পরে তার উচ্চতা ৮ ফুট ৬ ইঞ্চিতে গিয়ে দাঁড়ায়।

“এক পর্যায়ে স্বাভাবিক চলাফেরায় অসুবিধা দেখা দেয়ার পাশাপাশি অসুস্থ হয়ে পড়েন জিন্নাত আলী। ২০১৮ সালের ২২ অক্টোবর তাকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়।”

সেসময় জিন্নাতকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ প্রকাশিত হয়।

ইউএনও প্রণয় চাকমা বলেন, “তখন চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, জিন্নাতের মস্তিস্কে টিউমার রয়েছে এবং হরমোনের সমস্যার কারণে তার শরীর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে।”

প্রণয় বলেন, গণমাধ্যমে দেশের দীর্ঘদেহী মানবকে নিয়ে খবর প্রচারের পর বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিগোচর হয়। পরে কক্সবাজার সদর আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের মাধ্যমে গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পান।

“সেসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চিকিৎসার সুব্যবস্থা করেন। পরে তার বাড়ী নির্মাণ এবং কর্মসংস্থানের জন্য ৫ লাখ টাকার অনুদানও দেন,” বলেন ইউএনও।

প্রধানমন্ত্রী আনুকূল্য পাওয়ার তথ্য জানিয়ে কক্সবাজার সদর আসনের (সদর-রামু) সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের দীর্ঘদেহী মানব জিন্নাত আলীর চিকিৎসার সুব্যবস্থা করেছিলেন। এছাড়া অনুদানের ৫ লাখ টাকা দিয়ে একটি বাড়ী নির্মাণ করে দেয়ার পাশাপাশি একটি দোকানও করা হয়েছিল।

পরবর্তীতে মোটামুটি সুস্থ হলে গত ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর রামু আসার পর ফরম পূরণের মাধ্যমে জিন্নাত আলী আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং গর্জনিয়া ইউনিয়ন কমিটির সদস্য হিসেবে দলের কর্মকাণ্ডেও অংশ নিতেন বলে জানান স্থানীয় এ সংসদ সদস্য।

ইউএনও প্রণয় চাকমা জানান, দীর্ঘদেহী মানব জিন্নাত আলীর মরদেহ ইতিমধ্যে রামুর গর্জনিয়াস্থ নিজ বাড়িতে এসে পৌঁছেছে। বিকালে জানাজা শেষে তাকে স্থানীয় কবরস্থানে সমাহিত করা হবে।

কৃষক আমীর হামজার তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে জিন্নাত ছিলেন তৃতীয়।