শাহাদাত ৪৮; রেজাউল শূন্য

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে ৪৮ মামলা থাকলেও তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোনো মামলাই নেই।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরী চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2020, 04:16 PM
Updated : 27 Feb 2020, 05:09 PM

আগামী ২৯ মার্চ অনুষ্ঠেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশেন নির্বাচনে দুই প্রধান দলের প্রার্থীর মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া যায়।

নগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম ১৯৬৬ সাল থেকে রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও অতীতেও তার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা ছিল না বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।

নগর বিএনপির সভাপতি  শাহাদাতের হলফনামায় তার বিরুদ্ধে মোট মামলা ৪৮টি মামলা থাকার উল্লেখ রয়েছে; যদিও মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে তার দলের নেতাদের দাবি।

শাহাদাতের বিরুদ্ধে মামলার অধিকাংশই বিচারাধীন। বিশেষ ক্ষমতা আইন, বিস্ফোরক আইন, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, দ্রুত বিচার আইনসহ দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় এসব মামলা করা হয়। সবচেয়ে বেশি ১৬টি মামলা বিশেষ ক্ষমতা আইনের।

এসব মামলার মধ্যে ৪৩টি বিচারাধীন। দুটি মামলা উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত এবং তিনটি তদন্তাধীন আছে। দ্রুত বিচার আইনে করা একটি মামলায় শাহাদাত খালাস পেয়েছেন।

শাহাদাত ঋণগ্রস্ত, রেজাউল মুক্ত

পেশায় ব্যবসায়ী ৬৭ বছর বয়সী রেজাউল নগরীর চান্দগাঁও থানার বহদ্দার বাড়ির সন্তান; এখনও পৈত্রিক বাড়িতেই থাকেন তিনি।

অন্যদিকে বাকলিয়া ডিসি রোড এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা ৫৪ বছর বয়সী চিকিৎসক শাহাদাত এখন থাকেন নগরীর বাদশা মিয়া সড়কের একটি ফ্ল্যাটে।

হলফনামার তথ্য মতে, শাহাদাতের উত্তরা ফাইন্যান্স ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের কাছে তিন কোটি ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা ঋণ আছে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের কাছে ঋণ ২৯ লাখ ৮১ হাজার ১৩২ টাকা এবং অন্যান্য ঋণ দুই লাখ ৪৬ হাজার ৩১৩ টাকা।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন বৃহস্পতিবার বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন মনোনয়নপত্র জমা দেন। ছবি: সুমন বাবু

চিকিৎসক শাহাদাত নগরীর পাঁচলাইশ এলাকার দি ট্রিটমেন্ট সেন্টার নামের হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টারের মালিক। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক মূলধন ৩ কোটি ২৮ লাখ ৯০ হাজার ৬০০ টাকা।

তার টয়োটা কারের মূল্য ১১ লাখ ৮০ হাজার আর পুরনো একটি জিপের মূল্য ২৭ লাখ ২০ হাজার টাকা।

শাহাদাতের মোট বার্ষিক আয় ২০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। এরমধ্যে বাড়ি ভাড়া বাবদ আসে তিন লাখ ৫৩ হাজার ২৫ টাকা। চিকিৎসা, শিক্ষকতা ও পরামর্শক হিসেবে পান ১৭ লাখ ২১ হাজার টাকা।

শাহাদাতের নগদ ১৫ লাখ টাকার পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ৩৪ লাখ ৪৭ হাজার ২৭৭ টাকা। বন্ড ও স্টক এক্সচেঞ্জে আছে শাহাদাতের ৩ লাখ ৭১ হাজার ৩৫০ টাকা।

শাহাদাতের মালিকানাধীন দুটি অকৃষি জমির মূল্য ২৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। একটি আটতলা আবাসিক ভবনের আট ভাগের একাংশের তিনি মালিক, যার মূল্য ৬৭ লখ ৮৬ হাজার টাকা। আর নিজের মালিকানাধীন একটি এপার্টমেন্টের মূল্য ৩৫ লাখ টাকা।

নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহের জন্য নিজের আয় থেকে ২০ লাখ খরচ করবেন শাহাদাত। আর দুই বোনের কাছ ঋণ করবেন পাঁচ লাখ করে মোট ১০ লাখ টাকা।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী বৃহস্পতিবার বিদায়ী মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন। ছবি: সুমন বাবু

অন্যদিকে একক বা যৌথভাবে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত থাকা সম্পর্কিত কোনো ঋণ নেই রেজাউল করিমের।

তার স্ত্রীর নামে অকৃষি জমি আছে দুই গণ্ডা দুই কড়া। উত্তরাধিকারসূত্রে এক লাখ টাকা মূল্যমানের নির্মিত ঘর পেয়েছেন রেজাউল।  

নিজের নামে স্থাবর সম্পদে রেজাউলের চারটি এপার্টমেন্টের বর্তমান মূল্যমান এক কোটি ৯ লাখ ১৬ হাজার ৬৬৭টাকা।

তার কাছে নগদ আছে এক লাখ টাকা, স্ত্রীর কাছে তিন লাখ ৫১ হাজার ৪০৯ টাকা।

পাশাপাশি রেজাউলের নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা সাত লাখ আট হাজার ৫৩৯ টাকা, স্ত্রীর নামে ৩২ লাখ ২৭ হাজার ৯০ টাকা। স্ত্রীর নামে প্রাইজবন্ড আছে ২০ হাজার টাকার।

চার লাখ টাকা দামের একটি প্রাইভেট কারের মালিক রেজাউল।

তার ব্যবসায়িক মূলধন নিজ নামে দুই লাখ টাকার। আর মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ নামের সরবরাহকারী ফার্মের মূলধন ১০ লাখ ছয় হাজার টাকা।

স্ত্রীর নামে ব্যবসায়িক মূলধন দুই লাখ ৮০হাজার টাকা। স্ত্রীর মেসার্স চৌধুরী ইলেকট্রনিক্স নামের একটি ফার্মের মূলধন দুই লাখ ৫১ হাজার টাকা।

বাড়ি, দোকানভাড়া ও এপার্টমেন্ট থেকে রেজাউলের বার্ষিক আয় চার লাখ ১৪ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে নির্ভরশীলদের আয় তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা আর ফার্মের শেয়ার থেকে আয় দুই লাখ এক হাজার টাকা।

নির্বাচনী ব্যয়ের জন্য নিজের ব্যবসা থেকে এক লাখ টাকা খরচ করবেন রেজাউল। পাশাপাশি স্ত্রী পাঁচ লাখ ও একভাই সাড়ে তিন লাখ টাকা দেবেন।

এর বাইরে দুই ভাইয়ের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা করে মোট ১০ লাখ টাকা ভোটের জন্য ধার করবেন রেজাউল।