ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে ‘ব্যালট প্যানেল’ এর সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ভোট গ্রহণের তারিখ দুই দিন পিছিয়ে ৩১ মার্চ নির্ধারণের দাবিও জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়াও তিনি ভোটকেন্দ্রে বহিরাগত ঠেকাতে জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করে কেন্দ্রে ঢোকানো করানো এবং প্রচারণায় রঙিন পোস্টার ব্যবহারের দাবি জানান।
নির্বাচন কমিশন ও সরকারের উপর অনাস্থা নিয়েই আগামী ২৯ মার্চ অনুষ্ঠেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়ে দলের চট্টগ্রাম নগর কমিটির সভাপতি শাহাদাতকে মেয়র প্রার্থী করেছে বিএনপি।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ২টার দিকে এই নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামানের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন শাহাদাত।
মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর শাহাদাত সাংবাদিকদের বলেন, “সরকার, রাষ্ট্র, ইসি ও আওয়ামী লীগ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। ইসিকে সে থেকে বের হয়ে নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালন করতে হবে।
“ঢাকা সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রামের উপ নির্বাচনে মানুষ যে ভোট সেন্টার বিমুখ হয়ে গেছে এটাকে ভোটমুখী করার দায়িত্ব সরকার, রাষ্ট্রযন্ত্র এবং ইসির।”
কী ধরনের সুরক্ষা চান, তা তুলে ধরে বিএনপির প্রার্থী বলেন, “প্রত্যেক বুথের মধ্যে... যেহেতু সিটি করপোরেশ নির্বাচন হয়ত সাড়ে তিন থেকে চারহাজার বুথ থাকতে পারে (ইসির হিসাবে বুথ ৫১৪২টি), প্রতিটা সেন্টারের বুথের মধ্যে সেনাবাহিনীর একজন একজন অফিসার সেখানে নিয়োগ করা যায়। যারা ভোটারদের ভোটের সুরক্ষায় এবং পোলিং এজেন্টের সুরক্ষায় থাকবে। তাহলে আশা করি জনগণ ভোট সেন্টারমুখী হবে।”
জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হলেও সিটি নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনেই সেনা মোতায়েন করছে না ইসি; যদিও বিএনপি বরাবরই দাবি জানিয়ে আসছে। তবে ইভিএমে ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে কারিগরি জটিলতার সমাধানে ঢাকা সিটি নির্বাচনে প্রতিটি কেন্দ্রে দুজন সেনাসদস্য ছিলেন।
ক্ষমতাসীনদের দখলদারিত্ব অবসানে সেনা চান জানিয়ে শাহাদাত বলেন, “আওয়ামী লীগের, ছাত্রলীগের, যুবলীগের ক্যাডাররা ওখানে বসে থাকে। ইসি যদি নিরপেক্ষ ভোট চায় তাহলে ওই সন্ত্রাসীরা যাতে ব্যালট প্যানেলে দাঁড়িয়ে থেকে, ভোট দিতে না পারে এবং পোলিং এজেন্টদের বের করতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।”
সুষ্ঠু নির্বাচন হলে নিজে বিজয়ী হবেন বলে আশাবাদী বিএনপির মেয়র প্রার্থী।
সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা কেন- এ প্রশ্নের জবাবে শাহাদাত বলেন, “শঙ্কার যে জায়গা তৈরি হয়েছে তার প্রেক্ষিতেই বলেছি। সম্প্রতি চট্টগ্রামে আবু সুফিয়ান সাহেবের যে উপনির্বাচন, ঢাকা সিটি করপোরেশনের যে দুটো নির্বাচন হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী কিংবা নৌকার প্রার্থী হলে সাতখুন মাফ হয়ে যায়।
“নৌকার প্রার্থী মানে বিজয়- সেটা অবধারিত হয়ে গেছে। এই কনসেপ্ট থেকে সরকারকে বের হয়ে আসতে হবে। অন্যথায় জনগণ ভোট সেন্টারমুখী হবে না। আমাদের জন্য এক আইন সরকার দলের জন্য আরেক আইন, সেটা চলবে না।”
৩১ মার্চ ভোট চান শাহাদাত
টানা ছুটির কারণে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করা যাবে না এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে চট্টগ্রামে ভোটগ্রহণ দুদিন পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মেয়র প্রার্থী।
“২৯ মার্চের ভোটের যে দিন আছে সেটা যদি দুই দিন পিছিয়ে ৩১ মার্চ করে নির্বাচন কমিশন তাহলে এতে কিছু যায় আসে না, সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পারবে। আপনাদের উদ্দেশ্যে যদি হয় ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করা, তাহলে ৩১ মার্চ ভোটের দিন ধার্য করতে হবে।”
তিনি বলেন, “কারণ ঢাকা সিটি নির্বাচনে যেভাবে ভোটের দিন ধার্য করেছেন। পরে আপনারা নিজেরাই বলেছেন, সরকার দলের এমপি-মন্ত্রীরাই বলেছেন যে ছুটির জন্য তারা চলে গেছে। একই এক্সাম্পল আপনারা চট্টগ্রামে স্থাপন করতে চান কেন?
“পাশাপাশি প্রতিটা সেন্টারে যেন এনআইডির মাধ্যমে সব ভোটারদের ঢোকানো হয়। প্রত্যেকটা ভোটারের এনআইডি আছে। যদি এনআইডি দেখে ভেতরে ঢোকান বহিরাগতরা সেখানে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না।”
লেমিনেটেড পোস্টার বন্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে শাহাদাত বলেন, “পলিথিন লাগানো হবে না, স্বাগত জানাই। সাদা-কালোর পাশাপাশি রঙিন পোস্টারের কথা বলছি। কারণ তাতে প্রার্থীকে ভালো দেখা যায়।”
শাহাদাতের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, সহ-দপ্তর সম্পাদক ইদ্রিস আলী।