‘ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়’, ৭ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা

জোর করে আটকে রেখে ‘ক্রসফায়ারে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে’ দুই দফায় ২৩ লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগে সাত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন এক ব্যবসায়ী।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Feb 2020, 02:20 PM
Updated : 19 Feb 2020, 02:55 PM

বুধবার চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মহিউদ্দিন মুরাদের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন ব্যবসায়ী মো. ইয়াছিন।

ইয়াছিন নগরীর পলিটেকনিক্যাল এলাকার নূর মোহাম্মদ সওদাগর বিল্ডিংয়ের মেসার্স ইয়াছিন এন্টারপ্রাইজের মালিক। তিনি ইট-রড-বালু ও সিমেন্টের পাইকারি ব্যবসায়ী।

এই ব্যাসয়িীর মামলায় যাদেরকে আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- বায়েজিদ বোস্তামি থানার সাবেক ওসি আতাউর রহমান খন্দকার, বর্তমান ওসি প্রিটন সরকার, এসআই মো. আফতাব, এএসআই মো. ইব্রাহিম, এএসআই মিঠুন নাথ, কন্সটেবল রহমান ও সাইফুল।

আতাউর রহমান খন্দকার বর্তমানে চান্দগাঁও থানার ওসি। আর বায়েজিদের বর্তমান ওসি প্রিটন সরকার ঘটনার সময় এই থানারই এসআই ছিলেন।

বাদীর আইনজীবী শহীদুল ইসলাম সুমন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ব্যবসায়ী ইয়াছিনকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে আটকে রেখে ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দিয়ে দুই দফায় ২৩ লাখ টাকা আদায় করা হয়।

ফাইল ছবি

“গত ৪ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়বার ঘটনার পর পুলিশের মহাপরিদর্শক, সিএমপি কমিশনার ও চট্টগ্রামের ডিআইজি বরাবর ডাকযোগে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়। এরপরও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় আদালতে মামলা করা হয়েছে।”

আইনজীবী শহীদুল ইসলাম সুমন বলেন, “আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনারকে (প্রশাসন ও অর্থ) ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন।”

মামলার এজাহারে বলা হয়, গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর এসআই আফতাবের নেতৃত্বে মামলার আসামি এএসআই মো. ইব্রাহিম, এএসআই মিঠুন নাথ, কন্সটেবল রহমান ও সাইফুল বাদীকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে জোর করে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে থানায় নিয়ে আটকে রাখেন।

পরে তার কাছে ২০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। টাকা না দিলে তাকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার অথবা ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দেয় বলে অভিযোগ করা হয় মামলায়।

পরে ইয়াছিনের ভাই মো. ফারুক ১১ লাখ টাকা যোগাড় করে থানায় গেলে ওই টাকা নিয়ে সাদা কাগজে সাক্ষর রেখে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি কাউকে জানালে গুলি করে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ব্যবসায়ী ইয়াছিনের।

এজাহারে আরও বলা হয়, এরপর ৪ ফেব্রুয়ারি সীতাকুণ্ড থেকে ফেরার পথে নগরীর শেরশাহ গোল চত্বর এলাকায় অটোরিকশা থামিয়ে ইয়াছনিকে আবার মাইক্রোবাসে তুলে নগরীর আমিন জুট মিল, মোহাম্মদ নগর, মিরপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরিয়ে অনন্যা আবাসিক এলাকার একটি অন্ধকার স্থানে নিয়ে যাওয়ায় হয়।

সেখানে আসামিরা তার কাছে আবার ৫০ লাখ টাকা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে গুলি করে হত্যার হুমকি দেওয়া হয় আবারও।

এরপর বাদির ভাই মো. ফারুক ১২ লাখ টাকা জোগাড় করে থানার যান। ওই টাকা নিয়ে আসামি দুই কন্সটেবলকে দেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।

টাকা পেয়ে রাত ১২টার দিকে আতুরার ডিপো এলাকায় জনতা ব্যাংকের সামনে ইয়াছিনকে নামিয়ে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বায়েজিদ থানার সাবেক ওসি আতাউর রহমান খন্দকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি তাকে চিনিও না। এরকম কোনো বিষয় জানিও না।

“বায়েজিদ থানা থেকে আমি কয়েকমাস আগেই বদলি হয়ে চলে এসেছি। এতদিন পরে এরকম মিথ্যা অভিযোগ কেন করা হল তা বুঝতে পারছি না।”

আর বায়েজিদ থানার বর্তমান ওসি প্রিটন সরকারের বক্তব্য জানতে একাধিকবার মোবাইল ফোনে চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।