নগরীর পথে পথে সকাল থেকে বাসন্তী আর লাল পোশাকে সজ্জিত নানা বয়সী মানুষের চলাচলে অনুরণিত হয় বসন্তের আগমন বার্তা।
রঙিন পোশাকে সজ্জিত বন্ধু-প্রিয়জন নিয়ে মানুষের গন্তব্য ছিল নগরীর নানা প্রান্তে আয়োজিত বসন্ত উদ্যাপনের নানা উৎসবে।
শুক্রবার সকালে সিআরবির শিরিষ তলায় সমবেত হন রূপা সেন, শ্রাবণী, নয়ন দে, পৌষালী সেন আর রূপক দে।
এই দলটির সবার পরণে হলুদ, বাসন্তী আর লাল রঙের পোশাক। হাসি আনন্দে উদ্বেল ছিল তারা। মেতেছিল মঞ্চের শিল্পীদের সুরে-তালে।
সকাল আটটায় নগরীর সিআরবি শিরীষতলার মুক্তমঞ্চে বেহালা আর ঢোলের বাজনায় শুরু হয় প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের বসন্ত উৎসব।
সেখানে উৎসবের উদ্বোধন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষক ড. মাহবুবুল হক বলেন, বসন্ত আসে প্রাণের স্পন্দন নিয়ে। মানুষের জীবনে দঃখ, ব্যথা, অপ্রাপ্তির যত বঞ্চনা, সব ধুয়ে মুছে নতুনভাবে শুরুর যে বিষয়, সেখানে প্রকৃতি আর জীবনবোধ একাকার হয়ে যায়।
সংগঠনের সভাপতি রাশেদ হাসানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ পালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান ও বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক নিতাই কুমার ভট্টাচার্য।
ওড়িশী নৃত্যশিল্পী প্রমা অবন্তীর দলের নাচের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সাংস্কৃতি উপস্থাপনা।
রক্তকরবী, অভ্যুদয় সঙ্গীত অঙ্গণ, সঙ্গীত ভবনের শিল্পীরাও গান পরিবেশন করেন এই মঞ্চে।
রূপক দে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একদিকে বসন্ত আর অন্যদিকে ভালোবাসা দিবস। বন্ধুদের নিয়ে আজ সারাদিন ঘুরে ঘুরে বসন্তের সব আয়োজনে যাব।
তবু শুক্রবার বিকেলে দেখা যায় ডিসি হিল প্রাঙ্গণে হাজারখানেক মানুষ জড়ো হয়েছে।
তাদের একজন সাদিকুল ইসলাম সন্তানকে নিয়ে এসেছিলেন। তিনি বলেন, “ভেবেছি ডিসি হিলে নিশ্চয় কোনো আয়োজন থাকবে। কিন্তু এসে দেখি তেমন কিছু নেই। তবে প্রচুর মানুষ আছে।
“মেয়েটা খুব মজা পাচ্ছে এত লোকজন দেখে। বসন্তের আয়োজন থাকলে আরো ভালো হতো। ”
এদিকে বোধন আবৃত্তি পরিষদের একাংশ আন্দরকিল্লা নগর ভবন চত্বরের উন্মুক্ত প্রাঙ্গনে ১৫তম ‘বোধন বসন্ত উৎসব ১৪২৬’ এর আয়োজন করে।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক রীতা দত্তের উদ্বোধন করা এ আয়োজনের প্রধান অতিথি ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী।
কথামালার পর মোহন বীণার ভৈরবী সুরে শুরু হয় বসন্ত উৎসব। এরপর আবৃত্তি, সঙ্গীত, নৃত্য, কথামালা ও ঢোল বাদ্যে এগিয়ে যায় আয়োজন। বিকেলে বর্ণিল র্যালি নজর কাড়ে নগরবাসীর।
এখানে বান্ধবীদের সাথে আসা তাসলিমা আক্তার বলেন, “বিজয় জলদাসের ঢোলের বাজনা খুব ভালো লেগেছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাওয়া, খাওয়া আর ঘুরে বেড়ানো এভাবে যাচ্ছে সারাটা দিন।”
নগরীর পাহাড়তলী শেখ রাসেল পার্কে বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রামের আয়োজনে উৎসবের আয়োজন করা হয় ‘নিবিড় অন্তরতর বসন্ত এল প্রাণে’ এই স্লোগান নিয়ে।
আবৃত্তির মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই আয়োজনে সমবেত সঙ্গীত ও দলীয় নৃত্য আগতদের মনোযোগ কাড়ে।
একক সঙ্গীতে বসন্তের আবহ সৃষ্টি করেন সংগীতশিল্পী শ্রেয়সী রায়, মোস্তফা কামাল, গীতা আচার্য্য, ইমন শীল ও করিম মানিক। দলীয় সংগীতে ধ্রুপদ সংগীত নিকেতন ও সুরপঞ্চম সংগীত একাডেমির শিল্পীরা গানেগানে প্রাণ জাগিয়ে তোলেন যেন।
পাহাড়তলী শেখ রাসেল পার্কে বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রামের আয়োজনে বসন্ত উৎসবে তরুণীরা খোঁপায় গাঁদা-পলাশ ফুলের মালা গুঁজে বাসন্তি রঙ শাড়ি আর তরুণরা পাঞ্জাবি-পায়জামা কিংবা ফতুয়ায় খুঁজে নেয় শাশ্বত বাঙালিয়ানা।
বিকাল বর্ণাঢ্য বসন্তবরণ শোভাযাত্রা শুরু হওয়া দ্বিতীয় অধিবেশনে যন্ত্রসংগীতের মূর্ছনা দোলা দেয় দর্শকদের মনে।
বিকেলের অধিবেশনে সঙ্গীত ভবন, নবধারা সঙ্গীতালয়, এবি নৃত্যাঙ্গন, নৃত্য রং, নৃত্য নিকেতনের পরিবেশনা নজর কাড়ে। একক সংগীতে ছিলেন কাবেরি সেনগুপ্তা, মাহবুবুর রহমান সাগর, রিশু তালুকদার, সুভ্রত ধর, প্রিয়া ভৌমিক, চন্দ্রিমা ভৌমিক।
সবশেষে উৎসব মঞ্চ মাতিয়ে তোলে বন্দর ব্যান্ড।
শিল্পী দোলন কানুনগোর মোহন বীণার সুরে নগরীর জামালখান ডা. এম এ হাশেম চত্বরে শুরু হয় সম্মিলিত বসন্ত উদ্যাপন পরিষদ চট্টগ্রামের আয়োজন।
সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন এই আয়োজনের উদ্বোধন করে বলেন, “বাংলাদেশ মুখ্যত গ্রামীণ সমাজ। এখানে বহুকাল ধরে বিভিন্ন ঋতুকে বরণ করে নিই আমরা। বিশ্বে বাংলাদেশের মতো এতো সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা সুন্দর দেশ আমি আর দেখিনি।